শিল্প ও সাহিত্য

তবুও, প্রেম (৩য় পর্ব)

সুলতানা আজীম:

(২য় পর্বের পর )

পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো দিন। সপ্তাহ। মাস। চ্যাটের ভাষায় যা বুঝছি, কটি শব্দে বললে, যুবকটি এরকম অহঙ্কারী, ত্যাদোড়, তার্কিক। অন্যমনষ্কতা এবং হেঁয়ালীও রয়েছে ওর আচরণে। নিজেকে বুঝি যতোটুকু, কটি শব্দে বললে, জেদি, খুব সহানুভুতিশীল, আত্মমর্যাদানিষ্ঠ, ত্যাদড় কখনো কখনো এবং মানসিকতায় রয়েছে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা। চ্যাট করছি নিয়মিত, এরকম দুজন মানুষ। হচ্ছে এর ভেতরেই ঝগড়া, অভিমান, রাগ, মতবিরোধ। চ্যাট করছি তবুও আমরা। আক্রান্ত দুজনেই চ্যাটের ক্ষুধায়, বুঝতে পারি। কিন্তু কেনো? তা বুঝতে পারছি না।

অনুভব করি তার ভালোবাসা। অনুভব নয় শুধু, লেখেও সে। বার বার লেখে। এরকম একটি যুবককে কী ভালোবাসা যায়? ভালোবাসা কী ইচ্ছে অনিচ্ছার অনুভূতি? ভালোবাসা নয়। প্রেম। প্রেম, তৃতীয় বার প্রবেশ করলো আমার জীবনে। যার সাথে মতো পার্থক্য নয়, মতবিরোধ এতো,কী করে ভালোবাসতে পারে তারা একে অন্যকে? কী করে হতে পারে প্রেম? এক বিশেষ ধরণের নেশা হচ্ছে প্রেম। এই যে কমাস ধরে চ্যাট করছি আমরা, কিসের নেশা এটা? ভালোবাসার? প্রেমের? কী জানি। প্রেমের নেশার বয়স তো, অন্য যে কোন নেশার বয়সের চেয়ে কম। অনেক কম। আ্যামিন, ইথাইল আর ফিনাইলের জৈব রাসায়নিক নেশা এটা। খুব বেশী ভালো লেগে গেলে কাউকে, খুব আকর্ষণ অনুভব করলে তার জন্যে, মাথা থেকে এই রাসায়নিক জোয়ার নার্ভের মাধ্যমে রক্তকে নির্ভর করে প্লাবিত হয় সারা শরীরে। ব্যাকুল হয়ে পড়ে মানুষ, বিপরীত মানুষটির জন্যে। হয়ে পড়ে অধীর, অস্থির। দেখতে চায় তাকে। পেতে চায় কাছে। খুউব কাছে। কেনো? আরো একটি জৈব রাসায়নিক, অক্সিটোসিন বলা হয় যাকে, এটি বিভিন্ন পরিমানে মিশে থাকে মানুষের রক্তে। তৈরী করে, শরীর র্স্পশের সুখ। পরের নির্ধারিত গন্তব্য হচ্ছে যৌনতা।

‘আপনি এদেশের মেয়েদের মতো নন। একেবারেই অন্য রকম। সেজন্যেই এতো ভালো লাগে আপনাকে আমার।’ যেদিন বললো সে, রাগ হলো আমার। প্রচন্ড রাগ।

‘কোন পুরুষ কী দেখেছেন আমার মতো? তুলনা শুধু নারীদের সাথেই হবে কেনো? কেনো বলতে পারলেন না, আপনার মতো কোন মানুষ দেখি নি আমি এদেশে?’ বলেছিলাম আমি।

‘সত্যিই অন্যরকম একজন আপনি। সব ব্যাপারে ব্যাতিক্রমী যুক্তি আছে আপনার।’ বলেছিলো সে।

‘নিজের যুক্তি এবং বুদ্ধি ছাড়া কোন কিছুই গ্রহন করি না আমি। বর্জনও নয়। কথাটা বলেছি আগেও আপনাকে।’

সহজ সরল স্বাভাবিক ভাবে কথা হয় না আমাদের। বেড়ে যায় আমারও হার মেনে না নেবার টেনডেন্সি। অদৃশ্য প্রতিদ্বন্ধিতা প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে ওঠে আমাদের সর্ম্পকের ভেতর। চ্যাট যোগাযোগের কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে অতিক্রম করি আমরা বৃত্ত। কথা শুরু হয় ফোনে। এটিও হয়ে ওঠে আর একটি নেশা। ওকে নিতে পারছি না আমি। পারছি না ছেড়ে দিতে। ওর অনেক কথা ক্ষুব্ধ করে আমাকে। আমার কন্ঠ কানে না পৌঁছালে, চলে না ওর। আমারও চলে না, ওর সাথে কথা না বললে। এক অভিনব সংকট। এক জটিল সর্ম্পক। দ্বন্ধ এখন কেবল ওর সাথেই নয়। নিজের সাথে নিজেরও। কী করবো আমি? ঘুম, এতো এতো এতো প্রিয় আমার। পালিয়ে যাচ্ছে কেনো? প্রেম দু বার এসেছিলো জীবনে। এমন তো ছিল না। এক রকমও ছিল না। দুটো প্রেম সর্ম্পক, ছিলো দু রকমের। কিন্তু এমন অস্বাভাবিক তো ছিল না? অস্বাভাবিক সর্ম্পকের মধ্যেও জন্ম নিতে পারে প্রেম? নেয় যদি, কারণ কী তার?

মতো বিরোধ হলে যে কোন বিষয়ে, আহত করতে আমাকে। এক সেকেন্ড ভাবে না সে। এভাবে তো কেউ কথা বলেনি আমার সাথে কখনো আগে?

‘এভাবে কেউ বলেনি বলেই তো অতি আত্মবিশ্বাসী তুমি। লিডার হয়ে থাকতে চাও সবসময়।’ বললো সে একদিন। এর মাঝে কোন একসময় ‘তুমি’ বলতে শুরু করেছে। ভালো লেগেছে আমার ওর এই ‘তুমি’।

কী আশ্চর্য, এভাবে বলে কেউ? যার জন্যে এতো অস্থির থাকো তুমি। যাকে ভালোবাসো, এভাবে কেনো বলবে তাকে? সেই মানসিকতাই কাজ করছে? সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা। লিডারের অবস্থান থাকবে তোমার। তুমিই প্রভ‚। বৈষম্য। মানসিক অভ্যস্ততার। প্রতিদ্বন্ধিতা এবং প্রতিশোধের সর্ম্পক আমাদের? যদি হয় এমন সর্ম্পক, তা হতে পারে বিয়ের পরে দুজনের জীবন মিলে, একটি সংসার হলে, অনেক কিছুই প্রবেশ করতে পারে এবং করে সেই সংসারে। প্রতিদ্বন্ধিতা, প্রতিশোধ, ঘৃণা এবং আরও অনেক নেগেটিভ ব্যাপার। প্রেম সর্ম্পক তো অনন্ত অসীম সর্ম্পক নয়। সীমা নির্র্দিষ্ট সর্ম্পক। গড়ে প্রায় চার বছর। এরই মাঝে একঘেঁয়ে আর ক্লান্ত হতে থাকে প্রেম। দুজনের জীবন আর প্রবল প্রেমের জোয়ারে ভেসে থাকে না। কমতে থাকে আকর্ষণ। পুরুষতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র এবং বিয়ের, শক্তিশালী কোন ভ‚মিকা থাকে না তখন। সুদীর্ঘ সময় একসাথে জীবন যাপন করা মানে প্রেমের মার্ধুযে ভেজা জীবন নয়। অনেক জটিল দায় দায়িত্বের শেকলে আবদ্ধ হয়ে একসাথে থাকার বিরক্তিকর অভ্যাস কেবল। অনেক দেশে নারী পুরুষের, দুজনের ওপর দুজনের নির্ভরশীলতাও একই সংসারের বৃত্তে আবদ্ধ থাকার প্রধান একটি কারণ।

এও সেই জৈব রাসায়নিকের বিপরীত খেলা। তিন থেকে চার বছরের মধ্যে এই রসায়ন- অ্যামিন, ইথাইল আর ফিনাইল শরীরের ভেতরে এক ধরণের টলারেন্স তৈরী করে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে। বাড়তেই থাকে। এর সাথে লড়াই করার মতো প্রেমের নেশা শরীর আর তৈরী করতে পারে না। প্রেম অনুভূতি হারাতে থাকে তীব্রতা। টলারেন্স যতো বাড়ে, ততো কমে আসে প্রেম। কমতে কমতে শিথিল হয়ে যায় প্রেম সর্ম্পক। প্রেম অভিলাসী মানুষেরা বিচলিত বেদনাহত হয়ে পড়েন। জীবন্ত করে তুলতে পারেন না এই নিস্ক্রিয়তা শিথিলতা।

দুটো সর্ম্পক হারিয়ে যাবার পওে প্রেম সর্ম্পক নিয়ে আগ্রহ ছিলো আমার। কাজ করেছিলাম কিছুদিন এর ওপর। দুজন এক হয়ে সংসার করছি না আমরা। দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থাকি। তবু কেনো এতো জটিলতায় জটিল সর্ম্পক আমাদের? কী করবো আমি? কেনো সর্ম্পক রাখবো ওর সাথে? একটা সিন্ধান্তে আসতে হবে এবার। হবেই।

--------- (চলবে)

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

স্বাধীনতা দিবস ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

লক্ষ্মীপুরে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

পঞ্চগড়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু 

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

রামগড়ে গাঁজাসহ আটক ১

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির রামগড়ে আট...

ত্রিশালে নতুন করে ত্রাস সৃষ্টি করছে কিশোর গ্যাং

মো. মনির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার...

আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের চেয়ে এ...

ইসলামী ব্যাংকের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির উদ্যোগে এব...

বিএটি বাংলাদেশের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রিটিশ আমেরিকা...

হাতিয়ায় পুকুরে ধরা পড়ল ১০০ ইলিশ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর হাতিয়াতে একটি পুকুরে ১০০ রুপা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা