শিক্ষা

বাণিজ্যের লোভে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় এখনও দ্বিধায় ঢাবি বুয়েট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এ বছর থেকেই।

১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ এর স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৬২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে দেশের দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিহার কারণে এ উদ্যোগের বিষয়ে বিতর্ক এখনও রয়ে গেছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ফলে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার নেয়া সিদ্ধান্ত এ তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান মিডিয়াকে বলেন, শিক্ষাবিষয়ক যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদ ও ডিনস কমিটির। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে।

রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সর্বসম্মতিক্রমে এ পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এর অনাগ্রহের কারণে তা কতটা ফলপ্রসু হবে সেটাই ভাবাচ্ছে সবাইকে। অভিযোগ রয়েছে, মূলত ভর্তির ফরম বিক্রি বাবদ বিরাট অঙ্কের টাকার আয় থেকে শিক্ষকেরা বঞ্চিত হওয়ার ভয়েই এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজি হতে চাচ্ছে না।

‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. বশিরুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির আলোকে প্রণীত আলাদা প্রশ্নপত্রে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। তিনটি শাখার বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তির জন্যও এ প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে অনলাইনে দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। নভেম্বর মাসের মধ্যেই ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। কেন্দ্রীয় মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার আলোকে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সভায় প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত লিখিত উত্তর বিশিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রস্তাব রাখা হয়।

বর্তমানে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এগুলোতে প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ইউজিসির চেষ্টা হলো দোদুল্যমান থাকা স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটকেও এই প্রক্রিয়ায় রাজি করানো। এ জন্য আজ বুধবার ইউজিসিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। চেষ্টার পরেও যদি ‘স্বাতন্ত্র্যের’কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রক্রিয়ায় না আসে, তাহলে তাদের বাদ দিয়েই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বাড়তি কষ্ট থেকে বাঁচাতে সমন্তি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই কথা বলে আসছেন শিক্ষাবিদরা। এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি শিক্ষাবর্ষে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু শুরু থেকেই এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। এই অনাগ্রহের বিষয়ে তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের সিদ্ধান্তহীনতার জন্য গোটা জাতির আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকতে পারে না। কারো ইগো যেন অন্যদের প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

ইউজিসির সূত্রমতে, নতুন পদ্ধতিতে দুই থেকে তিন দিনে এই ভর্তি পরীক্ষা হবে। কেন্দ্রগুলো হবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্র ঠিক হবে। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে তাঁর পছন্দক্রম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বুধবারের সভায় ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি বলেন, সভায় ২৮ জন উপাচার্যের সবাই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একমত। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও বিশ্ববিদ্যালয় যদি না আসে, তাহলে তাদের ছাড়াই বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নেবে।

সভায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানসহ ২৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

স্বাধীনতা দিবস ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

লক্ষ্মীপুরে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

পঞ্চগড়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু 

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

রামগড়ে গাঁজাসহ আটক ১

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির রামগড়ে আট...

ত্রিশালে নতুন করে ত্রাস সৃষ্টি করছে কিশোর গ্যাং

মো. মনির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার...

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল শিশুর

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সেনবাগে পানিতে ডুবে এক শিশুর...

ভারতের পণ্য বর্জনে সরকার এত বিচলিত কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শ...

দেশে বছরে অকাল মৃত্যু পৌনে ৩ লাখ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূষণের কারণে বা...

বাগদান সারলেন অদিতি-সিদ্ধার্থ

বিনোদন ডেস্ক: ভারতের জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী অদিতি রাও হায়দা...

আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের চেয়ে এ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা