নারী
আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারী এগিয়েছে অনেক, তবু যেতে হবে অনেক পথ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নারী এগিয়ে চলেছে আপন শক্তিতে। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-ধর্মীয় কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে নারী এগিয়ে চলেছে আপন মহিমায়। নিজের সর্বশক্তি আর সাহস দিয়ে অর্জন করছে সফলতা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় তাদের এই অদম্য চলার পথে সহযাত্রী কিন্তু পুরুষদেরই একটি অংশ। আবার সেই পুরুষদের বৃহৎ একটি অংশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে “দুর্গম গিরি, কান্তার মরু’ পার হয়ে একবিংশ শতাব্দির এই সময়ে এসে আজও লড়াই করতে হচ্ছে নারীকে তার অধিকার আদায়ের জন্য, পূর্ণ মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষ মিলিয়ে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই নারীদের প্রতি কোনো না কোনোভাবে বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। এদের অর্ধেকই মনে করেন, নেতা হিসেবে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি যোগ্য। ৪০ শতাংশের মতে, পুরুষেরা ব্যবসা ভালো বোঝেন এবং চাকরিতেও তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র হচ্ছে, জরিপে অংশগ্রহনকারীদের ২৮ শতাংশই মনে করেন, পুরুষেরা স্ত্রীকে মারধর করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই।

তবে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ায় দ্বিতীয়। এই তথ্য উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে। বর্তমানে কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে কাজ করছেন ২ কোটি নারী। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ষষ্ঠ। সংসদে, সরকার এবং বিরোধী দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী। দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট বলছে, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ১৪৪টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম।

বাংলাদেশে কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারী কাজ করেন তিনগুণ। এই তথ্য কারোর মনগড়া নয়। এটি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি সমীক্ষা। দেশের অভ্যন্তরে অর্থনীতির মূল কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর অবদান ক্রমাগত বাড়ছে। সমীক্ষা অনুসারে, মূলধারার অর্থনীতিতে স্বীকৃত উৎপাদন খাতের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেকই এখন নারী। পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। এই চিত্র শুধু বাংলাদেশর নয়, বিশ্বব্যাপী নারী এগিয়ে চলেছে অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করে।

‘প্রজন্ম হোক সমতার : সকল নারীর অধিকার’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী। বাংলাদেশে নারী-সমতার বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে সুখকর হলেও শতকরা হিসাবে সেটা পুরুষের তুলনায় এখনও অনেক কম। নারী একই কাজ করে পুরুষের সমান মজুরি পান কিনা কিংবা নারীর মানবাধিকার, সহিংসতা, লিঙ্গবৈষম্য, আইনি ব্যবস্থা, ভূমি মালিকানা এবং তাদের কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন এখনও হাজারও।

নারীর অধিবার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সাফল্য বৈশ্বিক বিচারে এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ঈর্ষণীয় বটে, তবে এখনও যেতে হবে অনেক দূর। দেশে নারীর ক্ষমতায়নের অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেলেও জাতিসংঘের সিডও সনদ অনুযায়ী নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূর হয়নি এখনও। কাটেনি আইনি প্রতিবন্ধকতা। নারীর অগ্রযাত্রায় প্রধান বাধা সহিংসতা।

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডও) গুরুত্বপূর্ণ ২ ও ১৬.১ (গ) ধারা এখনও কার্যকর করেনি বাংলাদেশ। এখনও সংরক্ষিত এ দুটি ধারা। সংরক্ষণ করে রাখা গুরুত্বপূর্ণ ধারা দুটি তুলে না নিলে সমতা নিশ্চিত হবে না। সিডও সনদের ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনে শরিক দেশগুলো আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে এবং আইনের সংস্কার করবে। অন্যদিকে, ১৬.১ (গ) ধারায় বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে সম্পদে সমান অংশীদারিত্ব, নারী-পুরুষের সমমজুরি, গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যায়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর সমঅংশগ্রহণ, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সব রকম সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি দূর করে রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা অর্জনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোই এবারের প্রতিপাদ্যের মূলমন্ত্র।

কিন্তু উন্নয়নের সব শাখায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সম্প্রতি নারীর প্রতি নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র এখনও অবাক করে সবাইকে। পুলিশ পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১৯ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪০০টি। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ধর্ষণসহ নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩২৬ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩৭ জন নারী ও কন্যাশিশু।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসেব অনুযায়ি, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৩৩৭ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৪ কন্যাশিশুসহ ১১৪ জন। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৯ জনকে। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব ও পারিবারিক কাজের চাপে নারীর একটি বড় অংশ এখনও শ্রমবাজারের বাইরে।

নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির গঠনতন্ত্রেও এ লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও আরপিও অনুযায়ি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি কোন দলই।

গণপরিবহনের মতো উন্মুক্ত ক্ষেত্রে যাতায়াত করা নারীর নিরাপত্তা নেই এতোটুকু মাত্র।গত বছর প্রকাশিত ব্র্যাকের ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারীই মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৫৯ জন নারী গণপরিবহনে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

নারীনেত্রী সালমা আলী সান নিউজকে বলেন, নারীর মর্যাদা আগের চেয়ে দৃশ্যমান হয়েছে। আমরা এগিয়েছি অনেক। নারী এখন অনেক প্রতিবাদী । কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়নি পূর্ণমাত্রায়। আমরা বেশ কিছু ভালো আইন পেলেও বাস্তবায়নের জায়গায় এখনও সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। সে কারণেই ধর্ষণ ও নির্যাতনকারী তৈরি ও লালন করার যে কাঠামো সেটা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা রয়েছে এখনও গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে। মূলত বৈষম্যমূলক ক্ষমতা কাঠামো ও পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার কারণেই নারীরা ভূমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত আজও। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ভূমিতে গ্রামীণ নারীর মালিকানা মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ; বাকি ৯৬ শতাংশ জমির ব্যক্তিমালিকানা রয়েছে পুরুষের নামে।

প্রসঙ্গত, ১৯০৮ সালে নিউ ইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নামে একটি নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। আর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে ১৯৭৫ সাল থেকে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

কেশবপুরে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত 

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুর প্রতিনিধ:

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মোঃ মনির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :...

জাহাজ উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্তব্য ক...

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এল...

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল শিশুর

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সেনবাগে পানিতে ডুবে এক শিশুর...

ভারতের পণ্য বর্জনে সরকার এত বিচলিত কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শ...

দেশে বছরে অকাল মৃত্যু পৌনে ৩ লাখ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূষণের কারণে বা...

বাগদান সারলেন অদিতি-সিদ্ধার্থ

বিনোদন ডেস্ক: ভারতের জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী অদিতি রাও হায়দা...

আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের চেয়ে এ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা