নিজস্ব প্রতিবেদক:
কর্মব্যস্ত নগরী রাজধানী ঢাকা একেবারেই অপরিচিত হয়ে পড়েছে। নেই কোন যানজট। কর্মচঞ্চলহীন নগরী। প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না কেউ। ফুটপাথে নেই চা, ফুচকা কিংবা মুড়ি বিক্রেতারা। উপার্জনহীন এই সময়ে কেমন কাটছে নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোর জীবন।
মোহাম্মদপুর, বসিলা ও কামরাঙ্গীচর এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের কেউ রিকশা চালায়, কেউ চা, মুড়ি কিংবা ফুচকা বিক্রেতা।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে, সরকারের এমন নির্দেশনার পর তারা আর বের হচ্ছেন না বাসা থেকে। বন্ধ রয়েছে তাদের বেচা-কেনা। দিন আনা দিন খাওয়া এই মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে।
এদেরই একজন কামরাঙ্গীচরের ঝাল মুড়ি বিক্রেতা রফিক। ঝাল মুড়ি বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়ে ভালভাবেই সংসার চলছিলো। হঠাৎ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো করোনাভাইরাস। করোনা সংক্রমণ রোধে তাদের বেচাকেনা বন্ধ। রফিক বলেন. ঝালমুড়ি বিক্রি করে কতই বা আয় হয়। জমানো যা টাকা ছিলো তা দিয়ে আজ পর্যন্ত চলবে। কাল কিভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। পেটের দায়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
আরেক ঝাল মুড়ি বিক্রেতা শহীদুল বলেন, রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিন্তায় আছি। দিন কিভাবে চলবে। ঘরে পাঁচ কেজি চাল কেনা আছে। এটা দিয়ে চলে যাবে এক সপ্তাহ। এর পর কিভাবে চলবো। ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না।
সেখানেই পাশের ঘরে থাকেন জালাল নামের এক ফুচকা বিক্রেতা। তিনি বলেন, ফুচকা বিক্রি করে যা আয় করি তা ঘর ভাড়া, সংসার আর তিন ছেলে-মেয়েকে খেলাপড়া করাতে খরচ হয়ে যায়। বাড়তি কোন আয় থাকে না। একদিন ফুচকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। কতদিন এই অবস্থা থাকবে জানি না। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার কিভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেছি। তা দিয়ে সংসার চলছে। নিজেরা না খাই, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরতো খাওয়াতে হবে।
সরকারি কোন সহায়তা পেয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, কে দেবে। এখন পর্যন্ত এমন খবর পাইনি। সহায়তা পেলেতো দু-বেলা খেয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাচতে পারতাম। এমন পরিস্থিতি আর কতদিন থাকবে তা আল্লাহ জানে। কিন্তু আমাদের তো দিন চলছে না।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ১০টি নির্দেশনার একটি ছিল দুস্থদের সহায়তা করা। করোনাভাইরাসের কারণে নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হয়, তাহলে সরকারের ঘরে ফেরার কর্মসূচি আওতায় তাদের সহায়তা দেয়া হবে।
এসব নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এখনও পৌঁছায়নি সরকারি কোন সহায়তা। এমন পরিস্থিতিতে যতদিন যাবে আরও দুর্বিসহ হবে তাদের জীবন ধারন। তাই দ্রুত তাদের তালিকা করে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়ার আহ্বান এসব নিম্ন আয়ের মানুষদের।
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.