সংগৃহীত
বাণিজ্য

সরকার ঘোষিত দামে মিলছে না এলপিজি গ্যাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির দরদাম নির্ধারণের দায়িত্ব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। একই সঙ্গে প্রতিটি এলপিজি বিক্রি করা দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রদর্শনেরও নির্দেশনা দেয় (বিইআরসি)। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে নির্ধারিত দাম ও মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা দুটোই মানা হচ্ছে না। সর্বশেষ চলতি নভেম্বরে ভোক্তা পর্যায়ে এ দাম ১ হাজার ৩৮১ টাকা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সিলিন্ডারপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেশি দিয়ে গ্রাহককে এলপিজি কিনতে হচ্ছে। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে সরকার নির্ধারিত দামে বোতলজাত তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিক্রি করছে না খুচরা ও ডিলার পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, গ্যাসের দাম বাড়াতে গত কয়েক মাস থেকে কৃত্রিম একটি সংকটের কথা বলা হচ্ছে। আর এই সংকটকে পুঁজি করে গ্যাসের দাম নিজেদের মতো করে বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। সরকার দাম বাড়ানোর আগেই বিক্রেতারা নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রাজধানীর ওয়ারীতে কয়েকটি দোকান ঘুরে বিইআরসি’র নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারেননি রাকিব হাসান। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে তাকে। আক্ষেপ আছে, তবে অভিযোগ করতে রাজী না তিনি। বললেন, ‘অভিযোগ করার কী আছে? এটাতো ওপেন-সিক্রেট। সরকার সবই জানে। সব জায়গায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

মুগদা এলাকার গ্যাস বিক্রেতা আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বলেন, ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের জন্য তিনি দাম নিচ্ছেন কোম্পানি ভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সরকার তো গ্যাস দেয় না, ডিলারদের কাছ থেকেই বেশি টাকায় গ্যাস নিতে হয়। এমন অবস্থায় সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে।

সারাদেশে এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক সমিতির সভাপতি সেলিম খান বলেন, এভাবে নির্ধারিত দামে ভোক্তার কাছে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করা সম্ভব নয়। কেননা সরকারের নির্ধারিত খুচরা দামের চেয়ে বেশি দামে কোম্পানির কাছ থেকে এই সিলিন্ডার কিনতে হয়। তাঁর মতে, কোম্পানি ও পরিবেশকদের মধ্যে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা উচিত।

বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের হেড অব সেলস মো. রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘এলপিজি খাতে মোটা দাগে এখন দুটি সমস্যা। প্রথমত, চাহিদা ও সময়মতো ঋণপত্র খুলতে না পারা। দ্বিতীয়ত, এলসি খোলা ও পরিশোধের সময় ডলারের দরে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হওয়া। দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডার।

গত সপ্তাহে রাজধানীর রামপুরা, আফতাবনগর, নতুনবাজার, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডার। তবে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, এ দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করেও স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম বাড়ানো হয়।

এলপিজি বোতলজাত এবং বিপণনে জড়িত একটি কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিইআরসি সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করছে সর্বনিম্ন ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় নিয়ে। তাই ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশন বা লাভ বেশি থাকছে না। তাই পাইকারি পর্যায়ে ও খুচরা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না। তবে একজন ডিলার জানিয়েছেন, এলপিজি কোম্পানির গেট থেকেই তারা বেশি দামে কিনছেন। স্বাভাবিকভাবে তারা এবং খুচরা বিক্রেতারা তাই বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের বেশ কয়েকজন এলপিজি গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার কিনতে তাদের ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা খরচ করতে হয়।

বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড এলাকার খুচরা বিক্রেতা কামাল হোসেন ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে পাইকারের কাছ থেকে এলপিজির সিলিন্ডার পেয়েছেন, তাও ১৫-২০ দিন পর। তিনি এই সিলিন্ডারগুলো বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫৫০ টাকায়, অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত খুচরা দামের চেয়ে ১৬৯ টাকার বেশি রাখতে হচ্ছে তাকে। তাই দোকানে নির্ধারিত মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশ থাকলেও ইচ্ছে করেই তিনি তা মানছেন না। আমদানিকারক ও পরিবেশকরা এই বাড়তি দামের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের পাশাপাশি বিইআরসির অসঙ্গতিপূর্ণ মূল্য পদ্ধতিকে দায়ী করেছেন।

বিইআরসি চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছুকিছু জায়গায় নির্ধারিত দাম কার্যকর হচ্ছে না বলে তারা জানতে পারছেন। সেজন্য তারা নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই ৪টি কোম্পানিকে শোকজ করা হয়েছে। বিইআরসি নিজেও অভিযান পরিচালনা করছে, আবার ভোক্তা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে অভিযানে নামার জন্য বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সেসব বিক্রেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে। দেশের বাজারে এলপিজির মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে সৌদি আরামকো কোম্পানির নির্ধারিত প্রোপেন ও বিউটেনের (এলপিজির কাঁচামাল) মূল্যকে অনুসরণ করে বিইআরসি। এর সঙ্গে আমদানিতে জাহাজ ভাড়া, ট্রেডারের প্রিমিয়াম চার্জ, ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তি ও দেশের অভ্যন্তরে খুচরা বাজারের চার্জ হিসাব করে জ্বালানি পণ্যটির দাম ঠিক করা হয়। ডলার থেকে টাকায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয় পূর্ববর্তী মাসের বিনিময় হারকে। কিন্তু টাকার অবমূল্যায়ন ও ঋণপত্র (এলসি) খোলায় ডলারের প্রাপ্যতা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কমিশনের এ ফর্মুলা এখন ঠিকমতো কাজ করছে না বলে দাবি এলপিজি অপারেটর ও ব্যবসায়ীদের।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন গুল...

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন গুল...

মুন্সীগঞ্জ-৩: মনোনয়ন পরিবর্তন চেয়ে লাগাতার কর্মসূচি

মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে লাগাতার...

মাহফুজ-আসিফের সম্পদের হিসাব প্রকাশের দাবি

দুর্নীতি বিরোধী ছাত্র জনতা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করা দ...

ইসলামী ব্যাংকের ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা বৃহস্পতিবার (১১ ডিসে...

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর, প্রচারণা শুরু ২২ জানুয়ারি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণা অনুসারে মনোনয়নপত্র জমা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা