এক বছরের বেশি সময় ধরে ভারত থেকে ট্রানিজট পণ্য নিয়ে কোনো জাহাজ আসছে না চট্টগ্রাম বন্দরে। এমনকি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিটুজি (সরকার টু সরকার) চুক্তির কোনো চালও ভারত থেকে আসেনি। অন্যদিকে সমুদ্রপথে এক বছরে পাকিস্তানের জাহাজ আসায় নতুন গতি এসেছে। পণ্য পরীক্ষার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার পর পাকিস্তান থেকে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ আসছে নিয়মিত। ২০২৪ সালে পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসা কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা ছিল দুটি। চলতি বছরের এ পর্যন্ত এসেছে ৪টি।
খাদ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের চলাচল, সরংক্ষণ ও নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা বলেন, ‘আগে জিটুজি চুক্তির ভিত্তিতে সরকারি চাল আসতো ভারত থেকে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো চাল আসেনি। ওই অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জিটুজি চুক্তির ৫০ হাজার টন চাল এসেছে পাকিস্তান থেকে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা কিছু চাল সাপ্লাইয়ার ভারত থেকে আমদানি করে আমাদের সরবরাহ করেছে। তবে জিটুজি চুক্তির চাল ভারত থেকে আসেনি গত অর্থবছরে।’
আগে পাকিস্তানের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উঠিয়ে নিয়েছে সেই বাধাও। ওই বছরের নভেম্বর থেকে পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্য নিয়ে বন্দরে আসছে কনটেইনার জাহাজ।
বন্দরবিষয়ক কূটনৈতিক যোগাযোগেও আসছে পরিবর্তন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে নিয়ে গত শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। চট্টগ্রামে এসে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়াতে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) গঠন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সফরে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, দুই দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখতে হলে বাণিজ্য আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য গঠন করা হবে ২৪টি ওয়ার্কিং গ্রুপও।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৩ সালের এপ্রিলে স্থায়ী আদেশ জারির মাধ্যমে কম ট্যারিফে ভারতকে চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দরসহ আটটি রুটে ট্রানজিট পণ্য আনা-নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ২০২০ সাল থেকেই পরীক্ষামূলক ট্রানজিট পণ্য আনা-নেওয়া করতে থাকে ভারত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য।
এদিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ২০ শতাংশ বেড়েছে।
চিটাগং চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে পাকিস্তান পণ্য রপ্তানি করে ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৬৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান আমদানি করে সাত কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য। এটি আগের অর্থবছরে ছিল পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে মোট আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে কনটেইনারে আনা পণ্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ টনের কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরাসরি জাহাজে প্রথমবারের মতো ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার এসেছে ৪২৮৪। বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর প্রথমবারের মতো সরাসরি পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজটিতে ছিল শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তান থেকে দ্বিতীয় সরাসরি চালান আসে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর। সেবার জাহাজটিতে চিনি, আখের গুড়, ডলোমাইট, সোডা অ্যাশ, থ্রি-পিস, খেজুর ইত্যাদি।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি জাহাজসেবা চালুর কারণে এখন ১০ দিনে পণ্য হাতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, সময়ও সাশ্রয় হচ্ছে।