জাতীয়
গালফ নিউজকে বিভিন্ন ইস্যুতে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কেন করল ভারত: প্রধানমন্ত্রী

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তার প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আইন নিয়ে দেশটির সরকারের কি উদ্দেশ্য তা বুঝতে পারছি না। আমরা বুঝি না ভারত সরকার কেন এই কাজটি করলো। এটা জরুরি ছিল না।’ গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নির্যাতনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আইন সংশোধন করেছে ভারত। বিতর্কিত এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ভারত জুড়ে চলছে বিক্ষোভ। এছাড়া জাতীয় নাগরিক তালিকারও বিরোধিতা করছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারতে থাকা মুসলিমরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতে পাড়ি দেওয়া কেউ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে এমন নজির নেই। কিন্তু ভারতের মানুষ অনেকে সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ সবসময়ই এই সিএএ এবং এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই মনে করে আসছে। ভারত সরকারও সবসময় বলে আসছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’

সম্প্রতি ‘আবুধাবি সাসটেইনেবল উইক’ উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩ দিনের সফরের সময় সেখানকার প্রভাবশালী পত্রিকা গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সংকট:

শেখ হাসিনার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের শুরু মিয়ানমারে। তাদের কাছেই এর সমাধান রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এখন পর্যন্ত দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে চায়নি। ফলে আমাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমার আসলে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একা অনির্দিষ্টকালের জন্য ১০ লাখের বেশি শরণার্থীদের বোঝা বহন করতে পারবে না। এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে
অনেক ক্ষেত্রে এর মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলবে এবং এখানকার আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। গুরুতর এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার থাকতে হবে।

কার্বন নিঃসরণ:

কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনায় পরিবেশবাদীদের শঙ্কার বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে গালফ নিউজকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি করবে না। বাংলাদেশ এখন আড়াই শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করে। আমরা এটা ২৫ শতাংশে উন্নীত করবো। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব বেশি কার্বন নিঃসরণ করে না। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছুটা কার্বন ব্যবহার করতে পারা উচিত বাংলাদেশের। উন্নয়ন রুপরেখা বাস্তবায়ন করতে এটা জরুরি।

নতুন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র:

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২৯টি কয়লা খনি তৈরির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে থাকা ৪ কোটিরও বেশি মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ভাঙনেরও ঝুঁকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রথম কয়লা খনি তৈরির ২২ বছর হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনও পরিবেশের ক্ষতি দেখিনি আমরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে দিনাজপুরে গিয়ে সেই কেন্দ্র সফর করে এসেছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা সামাল দিতে এমন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ’৯৫ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে চাহিদাও বাড়ছে। মোবাইল, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ডিজিটাল ক্লাসরুমে এখন বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন।’

প্রাকৃতিক গ্যাসের অভাব :

অতীতে বাংলাদেশ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল উৎস ছিল গ্যাস। কিন্তু আমাদের গ্যাস কমে যাচ্ছে। তাই কয়লা, তরল জ্বালানি ও পরমাণু শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের।

আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক অঞ্চল:
২০২৩ সালের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে বাংলাদেশ। আবু ধাবিতে চলমান টেকসই উন্নয়ন সপ্তাহে অংশ নিতে গিয়ে একথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজকে দেওয়া সাক্ষাতাকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জমি দিতে প্রস্তুত। আশা করছি ২০২৩ সালের মধ্যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী আরব আমিরাত সফরে গিয়ে এই প্রকল্প নিয়ে আলাপ শুরু হয়েছিলো দুই দেশের। তবে এখনও কিছু কাজ বাকি। জমির ইজারা ও ডেভেলপার কোম্পানি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানিযোগ্য হালাল পণ্য উৎপাদনই এই অঞ্চলের মূল উদ্দেশ্য হবে। আর কৃষিজাত পণ্যের ওপরও নজর দিবো আমরা। মূলত আরব আমিরাতের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা হবে।

এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবারি এলাকাতেও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই চুক্তির কারণে স্বল্পখরচে আরব আমিরাত তাদের অঞ্চল গড়ে তুলতে পারবে। বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগ করবে। এতে করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

২০১৯ সাল থেকেই আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। সেসময় আমিরাতের বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, বন্দর ও অবকাঠামো উন্নয়নে ১ হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।

বাংলাদেশি প্রবাসীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে বাংলাদেশিরা সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ব্যবসা পরিচালনা করে যেখানে কাজ করে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ।

২০১৯ সালে তৃতীয় বারের মতো আমিরাতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাঁচ দিনের সফর শেষে দিতে গত নভেম্বরে দুবাই এয়ার শোতেও অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমিরাত অনেকদিন ধরেই আমাদের বন্ধু দেশ। বিমানে মাত্র পাঁচঘণ্টা লাগে সেখানে যেতে। তাই আমি সুযোগ পেলেই এখানে আসি।’

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ভিসা:

র্ব্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাতলাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। মালয়েশিয়ার পর সেখানেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বসবাস। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য সেখানে ভিসা পাওয়া কঠিন ছিলো না। ঢাকায় অবস্থিত আমিরাতের দূতাবাসের হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৪৯ জন সেখানে গিয়েছেন যাদের মধ্যে ৪৯৫ জনই চাকরি ভিসায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ আমাদের নিশ্চিত করেছে যে বাংলাদেশিদের জন্য তারাসব ধরনের ভিসা সুবিধা চালু করবে। বাংলাদেশিরা আমিরাতে তাদের পেশাদারিত্ব ও পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এতে করে দেশটির শ্রমবাজারে চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশিদের।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

কেশবপুরে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত 

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুর প্রতিনিধ:

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মোঃ মনির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :...

জাহাজ উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্তব্য ক...

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এল...

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল শিশুর

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সেনবাগে পানিতে ডুবে এক শিশুর...

ভারতের পণ্য বর্জনে সরকার এত বিচলিত কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শ...

দেশে বছরে অকাল মৃত্যু পৌনে ৩ লাখ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূষণের কারণে বা...

বাগদান সারলেন অদিতি-সিদ্ধার্থ

বিনোদন ডেস্ক: ভারতের জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী অদিতি রাও হায়দা...

আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের চেয়ে এ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা