নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার সাংবিধানিক কার্যক্রম। করোনার সংক্রমণ রোধে সংসদ সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণের পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধতিতে অধিবেশন চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অধিবেশন চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয়ে সূত্রে জানা গেছে, ‘ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অধিবেশন চালানোর বিকল্প পরিকল্পনা আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যবর্তী বিরতি ৬০ দিনের বেশি হবে না। চলতি একাদশ সংসদের সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে এতে বলা হয়েছে, ১০ ও ১১ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটিও এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এরপর ১২ ও ১৩ এপ্রিল রোববার ও সোমবারের পরে ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার আবারও পহেলা বৈশাখের ছুটি রয়েছে। আর ১৭ ও ১৮ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার ছুটির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তাই অধিবেশন ডাকার মতো সময় রয়েছে ১৫ অথবা ১৬ এপ্রিলে।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিলের পরে সাধারণ ছুটি নতুন করে না বাড়লে হয়তো সমস্যা হবে না। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতি একই থাকলে সাংবিধানিক এ নির্দেশনা পালনে জটিলতা দেখা দেবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, ৬০ দিনের এই বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যাওয়ার মতো কোনও নির্দেশনা সংবিধানে নেই। ফলে এক দিনের জন্য হলেও অধিবেশন বসতে হবে। সংসদের বৈঠক কখন ও কোথায় বসবে সেটা নির্ধারণের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি রাজি হলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদের বৈঠক করা যায় কিনা সেটাও ভাবা হচ্ছে।
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতি সংসদ আহ্বান, স্থগিত ও ভঙ্গ করবেন এবং সংসদ আহ্বানকালে রাষ্ট্রপতি প্রথম বৈঠকের সময় ও স্থান নির্ধারণ করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।
এই অনুচ্ছেদের শেষাংশে আরও বলা হয়েছে, কার্যপ্রণালী বিধি দ্বারা বা অন্যভাবে সংসদ যেভাবে নির্ধারণ করবে, সংসদের বৈঠক সেভাবে সময়ে ও স্থানে অনুষ্ঠিত হবে।
স্পিকার জানান, সংবিধান পর্যালোচনা করে তিনি এমন কোনও নির্দেশনা পাননি যাতে বৈঠক না ডেকে পারা যায়। তার মতে, এক দিনের জন্য হলেও সংসদ বসে দীর্ঘ সময়ের জন্য মুলতবি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সব সংসদ সদস্যের উপস্থিত হওয়ারও কিছু নেই। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার এমপিরা যোগ দিলেই কোরামের জন্য নির্ধারিত ৬০ জন সদস্য হয়ে যাবেন। তবে এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংসদ সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে সাংবিধানিক নির্দেশনা মানার বা সংসদের বৈঠক আহ্বানের যৌক্তিকতা নেই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের এখন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর দাবিও উঠছে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদের বৈঠক বসার পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পিকার বলেন, এটা পুরোপুরি প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে আইনি বিষয় বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।