নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছে ধর্ম ভিত্তিক রাজতিক দল ও দেশের শীর্ষ আলেমরা। তারা ফতোয়া দিয়েই তাদের দায় শেষ করার চিন্তা করেছেন। এমনকি সরকারকে তারা কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিকল্প খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে দেশের আলেম সমাজ নিজেরা এ বিষয়ে বিকল্প কোনও পথ খোলা আছে কি না তা তারা বলেননি।
শনিবার (০৫ডিসেম্বর) যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে চলমান অস্থিরতা ও সংকট নিরসনে আলেম-ওলামাদের করণীয় শীর্ষক বৈঠকে ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও আলেমদেরেএক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে ভাস্কর্য নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের কোনও প্রকার সমাধান ছাড়াই গণমাধ্যমে ৫টি প্রস্তাব সম্বলিত একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান।
উপস্থিত ছিলেন হেফাজত নেতা নূর হোসাইন কাসেমী, মাহফুজুল হক, মামুনুল হক, হেফাজতের উপদেষ্টা মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, খেলাফত আন্দোলনের নেতা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুফতি রুহুল আমীনসহ কওমি শীর্ষ আলেমরা।
বৈঠক শেষে আলেমদের প্রস্তাবে বলা হয়, মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য শরিয়ত সম্মত নয়, তাই কারও প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মৃতি জাগ্রত রাখতে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত উত্তম বিকল্প খুঁজে বের করাই যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য উষ্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চলছে বলে মন্তব্য করা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মহানবীর (সা.) অবমাননাকর আচরণ করা হচ্ছে।
তাদের ওপর কঠোর নজরদারি ও দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তারা।
বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে মামলার প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়েছে। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত পুনঃনির্মিত মসজিদটি নামাজের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করার দাবিও জানানো হয়েছে।
শব্দ দূষণ ও জনদুর্ভোগ এড়াতে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসানের নিষেধাজ্ঞারও বিরোধিতা করা হয়। বলা হয়, সাধারণ শব্দ দূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনা নিয়ে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই। কিন্তু ওয়াজ মাহফিলে এই বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত।
প্রস্তাবে বলা হয়, যেসব বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সেসব বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণির মানুষ এ নিয়ে আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ চলছে অভিযোগ করে বলা হয়, কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দিয়েছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি দেশে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করবেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে আয়োজিত এক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে বাবুনগরী হুমকি দিয়ে বলেন, যে দলই ভাস্কর্য নির্মাণ করবে তা টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে। তাদের ভাস্কর্যবিরোধী এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে। ভাস্কর্য নিয়ে কটূক্তিকারী মামুনুল হক ও বাবুনগরীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে ৬০টি সংগঠন।
সান নিউজ/এসএ