নিজস্ব প্রতিবেদক:
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেন দেশের প্রথম এবং ব্যয়বহুল এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়-ভাঙ্গা মহাসড়কের। সুচনা হলো আরেকটি নব-দীগন্তের।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।
এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হওয়ায় এখন থেকে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। ঢাকা থেকে মাওয়া যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৭ মিনিট।
অবশ্য এখনই ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এ সুফল ভোগ করবেন ফরিদপুরবাসী। তবে এখন ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত চলবে গাড়ি।
এক্সপ্রেসওয়েটির দৈর্ঘ ৫৫ কিলোমিটার। এর শুরু ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে। সেখান থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক (এন-৮) হয়ে মিশে গেছে মাওয়ার পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে।
পদ্মা সেতু পার হয়ে এটি পূণরায় চলে গেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। চার লেন বিশিষ্ট এই এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি ধীরগতির গাড়ি চলার জন্য দুই পাশে রাখা হয়েছে আলাদা দুটি করে আরো চারটি লেন।
এ মহা সড়কে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য নকশা করা হয়। এক্সপ্রেসওয়েটিতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হয়েছে আটটি পথ।
এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে সব মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়ায় ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। চার বছর আগে প্রকল্পের শুরুতে ব্যায় ধরা হয়েছিলো ৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। তিন দফায় বাজেট বেড়ে মোট খরচ ১১ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে।
তারপরও কিছু ভুল রয়ে গেছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের। কারণ, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর সম্প্রসারণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বল পরিকল্পনা আর সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিষ্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এই প্রকল্পে ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা রয়েছে। যার বাস্তব প্রতিফলন দৃশ্যমান।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়নে অপরিপক্কতা রয়েছে। এসব প্রকল্প যেহেতু অনেক জটিল এবং বড়, তাই সার্বিক দিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষ লোকের দ্বারা পরিচালনা করা প্রয়োজন।
এদিকে এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হওয়ার খবরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। তারা বলছেন, “এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। আগে যেখানে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা ঢাকা জেতে পারবো। আমরা দক্ষিণবঙ্গের মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই”।
২০১৬ সালের মে মাসে হাতে নেয়া হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্পের কাজ। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক প্রকল্প এটি। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এই প্রকল্পের।
ঢাকার বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ, আব্দুল্লাপুর, আব্দুল্লাপুর সংলগ্ন টোলপ্লাজা, শ্রীনগর ফ্লাইওভার ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মোড়ে রয়েছে এসব প্রবেশ-নির্গমন পথ।
আর এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে কিছু দূর পরপর নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী ছাউনিসংবলিত বাস-বে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সওজ অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
সান নিউজ/সালি