আসাফুর রহমান কাজল, খুলনা:
ক’দিন আগে যখন ডেঙ্গু জ্বরে কাপছিল দেশ, উৎকণ্ঠা সারাদেশে, শতাধিক মানুষের মৃত্যূতে সরকারকেও বিব্রত হতে হয়। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে পাওয়া যেত ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর খবর। ত্বরিৎ গতিতে সরকার বিদেশ থেকে আমদানী শুরু করে মশক নিধনের ঔষধ ও সরঞ্জামাদি। শহর-নগর-গ্রাম-গঞ্জে মশা মারতে বাড়তে থাকে কামানের ব্যবহার (ফগার মেশিন)। মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশনগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছিল, দেশের সেই অস্থির সময়টিতে ডেঙ্গু থেকে পরিত্রানের জন্য নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বিচলিত হয়ে ওঠেন খুলনার বাবর আলী। মশার মারার কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শুরু করেন গবেষণা।
ফগার মেশিন মেরামতের কাজ করতে করতে নিজেই ফগার মেশিন তৈরি করে ফেললেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারি বাবর আলী। তবে উদ্ভাবিত এই মেশিন আরও সাশ্রয়ী এবং শব্দহীন। প্রতিদিনের কাজ শেষে রাতে ঘরে ফিরে করতে থাকেন গবেষেণা। আর সেই গবেষণার ফল ইজি ফগার। যেখানে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত ফগারের বিকট শব্দে এলাকাবাসী হয়ে ওঠেন অতিষ্ঠ, সেখানে স্বল্পশিক্ষিত বাবরের ইজি ফগারে নেই কোন শব্দ। এর থেকে নির্গত ধোঁয়া দেড় লাখ টাকার ফগারের মতোই অল্প। বিদেশ থেকে আমদানীকৃত ফগারে ব্যবহার হয় পেট্রোল, ড্রাইসেল ব্যাটারী এবং মশা মারার তেল বা মরটিন ওয়েল। মশা মারতে উ”চমূল্যের সেই ফগার মেশিন ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট চালালে তাতে পেট্রোল লাগে ১ লিটার এবং মরটিন ওয়েল লাগে ৫ লিটার। সেখানে বাবরের ইজি ফগারে ৪৫ মিনিট চলতে মাত্র ২ লিটার মরটিন ওয়েল আর ২০০ এমএল এলপি গ্যাস। ফগারটি তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন পাম্প, গ্রেট ভাল্ব, কম্প্রেসার মিটার, এলপি গ্যাস সিলেন্ডার এবং এসএস সামগ্রী।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ফগারম্যান মোঃ আলমগীর গাজী জানান, আমাদের ফগারে বিকট শব্দ হয়। মেশিন অনেক গরম হয় এবং অনেক ভারীও। ঘাড়ে বেঁধে চালাতে গেলে খুব ঝাঁকুনী হয়। একটানা সেটি বেশিক্ষণ চলানোও যায় না।
নতুন এই ফগারের উদ্ভাবক মোঃ বাবর আলী শেখ বলেন, ‘ প্রচলিত ফগার মেশিন বারবার মেরামত করতে হয়, খরচও বেশি। এগুলো অনেক ভারী শব্দও বিকট। এর মাথা খুব বেশি আপডাউন করা যায় না। তাই সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন ফগার মেশিন মেরামত করতে করতে নতুন কিছু তৈরির জন্য ভাবতে থাকি আমি’।
যন্ত্রটি তৈরি করতে দুই মাসের মতো সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। বাবর আলী বলেন, ‘ সাধারন ফগার মেশিন চলতে চলতে অনেক সময় আগুন লেগে যায়। আমি যেটি তৈরি করেছে এটির ওজন মাত্র ৫/৬ কেজি। যেখানে দেশে ব্যবহৃত ফগার মেশিনের ওজন ১২/১৫ কেজি। আমার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। আমি কোন পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও আধুনিক, কার্যকরি এবং কম সময়ে এ ধরণের অনেক ফগার মেশিন তৈরি করতে পারবো। এই গবেষণায় আমার কর্মক্ষেত্রের উর্ধ্বতন ম্যাডাম আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি শাখার সহকারি প্রকৌশলী নুরুন্নাহার এ্যানি বলেন, ‘বাবরের মধ্যে অনেক প্রতিভা রয়েছে। সে ফগার মেশিন মেরামত করতে করতে নিজেই ফগার মেশিন তৈরি করেছে। তার আবিস্কৃত ফগারের ওজন অনেক কম এবং খচরও কম। তবে তার ফগার মেশিনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে যে, সেটি কতটা মানসম্মত্ব। তার এমন আবিস্কারে আমি তাকে অভিভাবদন জানাই’।