(ফাইল ফটো)
মতামত

শীতে যেসব রোগের তীব্রতা বাড়ে

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ : শীতের ভোরে ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যায় প্রকৃতি কুয়াশাচ্ছন্ন। সবুজ ঘাসে জমে আছে বিন্দু বিন্দু শিশির। এই সময় প্রকৃতি উপভোগ্য হলেও বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই সময়ে প্রয়োজন কিছুটা বাড়তি সতর্কতা।

আরও পড়ুন : লটারির মাধ্যমে স্কুলে ভর্তির যৌক্তিকতা

চর্মরোগ :

শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে। শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে শুষে নেয় জল। ফলে ত্বক হয়ে পড়ে দুর্বল। ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি ঠিকমতো ঘাম বা তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আস্তে আস্তে আরও শুষ্ক, ফাটল ধরে ও দুর্বল হয়। একসময় ত্বক ফেটে যায়।

শীতের সময় নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। বিশেষ করে ঠোঁট, হাত ও পায়ের ত্বকে দেখা দেয় চুলকানি, একজিমা, স্ক্যাবিস, চর্মরোগ প্রভৃতি। এছাড়া মাথায় প্রচুর খুশকি দেখা যায়। তাই শীতকালে ত্বকের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন।

শুষ্কতা কমানোর জন্য ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল অথবা ভালো কোনো তেল বা ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

খুশকি দূর করতে অন্য সময়ের চেয়ে শীতে বেশি করে চুল শ্যাম্পু করুন। বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না বা কড়া আগুনে তাপ পোহাবেন না। এতে চামড়ায় সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো হয়। অনেকক্ষণ কড়া রোদ না পোহানোই ভালো।

আরও পড়ুন : আমরা কি ফুটবলের দর্শক হয়েই থাকবো?

বাতব্যথা :

আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা শীতের সময় বেড়ে যায়। মূলত বয়স্কদেরই এই সমস্যা বেশি হয়। বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াসিটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতের সময় চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়।

শীতের সময় নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। বিশেষ করে ঠোঁট, হাত ও পায়ের ত্বকে দেখা দেয় চুলকানি, একজিমা, স্ক্যাবিস, চর্মরোগ প্রভৃতি...

বাতব্যথা প্রতিরোধে করণীয় হলো—যথাসম্ভব গরম উত্তাপে থাকুন। সবসময় হাত ও পায়ের মোজা পরিধান করুন। ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে আনুন।

একটানা অনেকক্ষণ বসে না থেকে যতটুকু সম্ভব ঘরেই হালকা মুভমেন্ট করুন। প্রয়োজনে গরম জল ব্যবহার করুন। গরম সেঁক দিন বা ফিজিওথেরাপি নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন : ফুটবল বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং

ডায়রিয়া :

শীতকালে যে ডায়রিয়া হয়, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। প্রথমে বমি দিয়ে শুরু হয় এবং এর কিছুক্ষণ পর থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এক পর্যায়ে চাল ধোয়া জলর মতো পাতলা পায়খানা ঘন ঘন হতে পারে।

ডায়রিয়া বা বমি হলে শুরুতেই খাওয়ার স্যালাইন, রাইস স্যালাইন, কাঁচা কলার খিচুড়ি ও অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই শরীরে জলশূন্যতা যেন দেখা না দেয়। যে পরিমাণ জল ও লবণ শরীর থেকে বের হবে, সেই পরিমাণ জল ও লবণ খাওয়ার স্যালাইনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জিংক ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়াতে হবে।

আরও পড়ুন : সব বাধা পেরিয়ে দুর্বার বাংলাদেশ

নাক-কান-গলার অসুখ :

এসব সমস্যাও শীতে বাড়ে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নবজাতক, শিশু, বৃদ্ধ ও ধূমপায়ীর। শীতকালে নাকের দুই পাশের সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়, একে বলে সাইনোসাইটিস।

কারো সাইনোসাইটিস দেখা দিলে নাকের দুই পাশে ব্যথা ও মাথাব্যথা হতে পারে। অ্যালার্জি, ঠাণ্ডা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সমস্যাগুলো থেকে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়।

ডায়রিয়া বা বমি হলে শুরুতেই খাওয়ার স্যালাইন, রাইস স্যালাইন, কাঁচা কলার খিচুড়ি ও অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই শরীরে জলশূন্যতা যেন দেখা না দেয়...

কারো যদি অ্যালার্জি থাকে, সেই ক্ষেত্রে জেনে নিতে হবে অ্যালার্জির কারণ। যাতে সতর্ক হয়ে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পাশাপাশি ধূমায়িত এবং দূষিত পরিবেশ পরিত্যাগ করে চলা, ধূমপান পরিত্যাগ করা, ঘুমানোর সময় মাথা উঁচু রাখা (যাতে সাইনাস নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে পারে), নাকে খুব জোরে আঘাত লাগতে না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

যাদের গলা ব্যথা, স্বরভঙ্গ, কণ্ঠনালির নানা সমস্যাসহ টনসিলের প্রদাহ বা টনসিলাইটিস রয়েছে, তারা লবণ মেশানো হালকা গরম জল দিয়ে গড়গড়া করলে আরাম পাবেন। ঠাণ্ডা জল পরিহার করে কুসুম গরম জল ব্যবহার করুন এবং গলায় গরম কাপড় বা মাফলার জড়িয়ে রাখুন। সেই সঙ্গে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করলে ভালো থাকা যায়। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল ও সর্দি-কাশি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করা উচিত।

আরও পড়ুন : শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন বাংলাদেশের আত্মা

তীব্র শীতে অনেকের হাতের আঙুল নীল হয়ে যায়। তারা অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। যেন কোনোভাবেই ঠাণ্ডা না লাগে। শীত তীব্র হলে হৃদযন্ত্রের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে হৃদরোগ আক্রান্ত হতে পারে।

শীতের আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হাইপোথার্মিয়া [Hypothermia] অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া, যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি শীতার্ত মানুষদের সহায়তায় নানা সংগঠন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণের উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়। শীতে বাড়তি সচেতনতার মাধ্যমে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।

আরও পড়ুন : বীমা নিষ্পত্তি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সময়োপযোগী করা প্রয়োজন

লেখক :

ড. মো আনোয়ার খসরু পারভেজ

অধ্যাপক ও গবেষক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

চোর সন্দেহে গণপিটুনি: গাইবান্ধায় তিনজন নিহত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে...

ভারত-আফ্রিকা বিশ্বকাপ মহারণে আজ উঠবে শ্রেষ্ঠত্বের ‘প্রথম’ মুকুট

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখার অ...

আমরা মদিনার ইসলাম চর্চা করি, মওদুদীর ইসলাম নয়: সালাহউদ্দিন

একটি রাজনৈতিক দল ইসলামকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহ...

চীনে নভোচারীর সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হলো ৪টি কালো ইঁদুর

নভোচারীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো চারটি কালো ইঁদুরকে চীনের মহাকাশ স্টেশনে পাঠান...

বৃষ্টির কারণে থেমে গেল নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর্দা নামার কথা আজ। তবে বৃষ্টির কারণে খেলা একনো শুরু হ...

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবদের জন্য ২৪ নির্দেশনা

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । এ পরীক্ষা সুষ্ঠ...

মাদারীপুরে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা, স্বামী পলাতক

মাদারীপুরে শ্বশুরবাড়িতে দীপ্তি মণ্ডল (২১) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিয...

গাইবান্ধায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ৩

গাইবান্ধায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত শ...

বোনকে বিয়ে করতে না পেরে ভাইয়ের সিএনজিতে আগুন

লক্ষ্মীপুরে খালাতো বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সুজন নামে এক যুবক। কিন্তু বোন রাজ...

‘শাপলা কলি’ প্রতীক হিসেবে নিতে সম্মত এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠকে প্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা