মতামত

জিপিএ-৫ তৈরির কারখানা!

ড. কামরুল হাসান মামুন: এসএসসি ও এইচএসসিতে এখন জিপিএ-৫ এর নিচে পেলে কেউ খুশি হয় না। কেউ রেজাল্ট জিজ্ঞেস করলে বাবা-মা তখন মুখ লুকাতে পারলেই বাঁচে। এমনতো হওয়ার কথা ছিল না।

আরও পড়ুন: শবনম ফারিয়ার সফল অস্ত্রোপচার

পরীক্ষা মানে কি? পরীক্ষা হলো কয়েক ধাপের বাধা ডিঙানো দৌড়। যেই বাধা ডিঙানো দৌড় যত বেশি চ্যালেঞ্জিং হয় সেই দৌড় অতিক্রম করতে পারলে তত বেশি আনন্দ হয়।

আমরা দিন দিন শিক্ষার্থীদের সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছি। পরীক্ষার একটি বিশেষ দিক হলো সবচেয়ে কঠিন বাধা যে উতরাতে পারবে তাকে সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে।

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর মাঝে আত্মবিশ্বাস, আত্মঅহমিকা, আত্মমর্যাদা ইত্যাদি জন্মায়। এই বোধগুলো ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।

আমাদের সময় যারা বোর্ডে স্ট্যান্ড করতো তাদের ছবি, তাদের বাবা-মায়ের ছবি, স্কুল এবং স্কুলের শিক্ষকদের ছবি ছাপা হতো এবং তাদের নিয়ে কথা হতো। গণমাধ্যমে তারা থাকতো আলোচনায়। তাদের সাফল্যের গল্প আলাদাভাবে বক্স করে ছাপানো হতো।

আরও পড়ুন: ইতিহাসের এই দিনেসুবীর নন্দীর জন্ম

নতুন সিস্টেম চালুর পর লেখাপড়ার মান কি আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে? তা নিয়ে আলাদা করে গবেষণা করা উচিত ছিল। কিন্তু কেউ কখনো করেনি।

চার বোর্ডে স্ট্যান্ড যারা করতো তাদের কে, কোথায় আছে তাদের খুঁজলেই বোঝা যাবে তাদের অধিকাংশই জীবনে সফল হয়েছে। শুধু তাই না। কে কোন বিষয়ে স্টার মার্কস, লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগ পেয়েছে ইত্যাদিও ভালোদের সূচক ছিল।

এমনকি যারা সেকেন্ড ডিভিশন পেত তাদেরও মুখ লুকাতে হতো না। এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েও জীবনে অনেকে সফল হয়েছিল। তারপর হঠাৎ করে জিপিএ সিস্টেম চালু করা হলো আর ঐসব এখন রূপকথার গল্পের মতো হয়ে গেল।

আরও পড়ুন: সমাবেশে খালেদা জিয়া যোগ দিলে ব্যবস্থা

নতুন সিস্টেম চালুর পর লেখাপড়ার মান কি আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে? তা নিয়ে আলাদা করে গবেষণা করা উচিত ছিল। কিন্তু কেউ কখনো করেনি।

যেই দেশে ভালোমন্দের মিশ্রণ থেকে ভালোদের আলাদা করার ব্যবস্থা প্রক্রিয়া যত ভালো এবং যেই দেশ সেই ভালোদের যত্ন করে আরও ভালো করার ব্যবস্থা করতে পারে সেই দেশে তত বেশি ভালো মানুষ তৈরি হয়।

যেই সমাজে ভালো এবং মন্দ সকলের একই মূল্য সেই সমাজে ভালো মানুষ তৈরি হবে না। আমাদের দেশে তো মন্দদেরই জয় জয়কার। মন্দরাই সবকিছু জয় করে নিচ্ছে যেন।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৩

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরীক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য অনেকটা স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় উচ্চ লাফের মতো। যেখানে সেরা খেলোয়াড় নির্ধারণের জন্য উচ্চ লাফের বারকে ধীরে ধীরে উপরে উঠাতে থাকে আর যে সর্বোচ্চ উচ্চতার বার অতিক্রম করতে পারে সেই প্রথম হয়।

পরীক্ষা অনেকটা এইরকমই হয়। পরীক্ষার প্রশ্নের মান এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন ব্যবস্থা যদি এমন হয়, পরীক্ষা দিলেই জিপিএ-৫ পাওয়া যায় তাহলে পরীক্ষার কি আদৌ কোনো দরকার আছে? সবাইকেই খুশি করা আর কাউকেই অখুশি না করাই যদি লক্ষ হয় তাহলে এই পরীক্ষা সিস্টেমের কোনো অর্থ থাকে না।

২০০১ সালে যখন জিপিএ পদ্ধতি চালু হয় তখন সেই বছর মাত্র ৭৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০০২ সালে জিপিএ-৫ পায় মাত্র ৩২৭ জন আর ২০০৮ সালে পায় ৪১ হাজার ৯১৭ জন জিপিএ-৫! আর তা বেড়ে ২০২২ সালে এসে দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। অবিশ্বাস্য না?

পরীক্ষা অনেকটা এইরকমই হয়। পরীক্ষার প্রশ্নের মান এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন ব্যবস্থা যদি এমন হয়, পরীক্ষা দিলেই জিপিএ-৫ পাওয়া যায় তাহলে পরীক্ষার কি আদৌ কোনো দরকার আছে?

আরও পড়ুন: দুপক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত

অর্থাৎ মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ১৫ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছে। এইবার ভাবুন বাকি ৮৫ শতাংশের অবস্থা। তারা কি খুশি? তাদের বাবা-মা কি খুশিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্তানের ভালো রেজাল্ট নিয়ে কিছু লিখেছে? আত্মীয়স্বজনদের জানাতে ফোন করেছে?

পৃথিবীর কোনো দেশে কি এইরকম উদাহরণ খুঁজে পাবেন যেখানে জিপিএ-৫ না পেলে ফেল করার কষ্ট অনুভব করে? এর মাধ্যমে আমরা জিপিএ-৫ এর নিচে যারা পাচ্ছে তার আর মূল্য থাকছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল ভর্তির বিজ্ঞাপনে দেখলাম সেখানে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ-৫ চাওয়া হয়েছে। এই ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬০২ জনের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রমী ভালো শিক্ষার্থী বাছাই করার ব্যবস্থা আর রইল না কারণ জিপিএ-৫—এর উপরে কিছু নেই। কিন্তু এই ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের সবাইতো সমান না।

আরও পড়ুন: মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠাল চীন

এই যে সবাইকে সমান ভালো বানানোর ব্যবস্থা করা হলো এর মাধ্যমে দেশে ব্যতিক্রমী মানুষ তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হলো। এইভাবে প্রতিবছর প্রচুর জিপিএ-৫ তৈরি হবে কিন্তু ভালো মানের শিক্ষার্থীর তৈরির প্রশ্ন থেকেই যাবে।

অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তারেক রহমানের জন্মদিনে মুন্সীগঞ্জে শীতবস্ত্র বিতরণ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭ বছরে ৪ সমাবর্তন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ

শিক্ষাজীবনের শেষ মুহূর্তে কালো গাউন আর সনদ হাতে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া প্রতিটি...

বিলুপ্তপ্রায় টকপাতা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

বসতবাড়ির পাশে প্রায়ই দেখা যায় টকপাতা। পাতা ও ফল টক স্বাদযুক্ত গাঢ় লাল বর্...

শিবচরে ইজিবাইক চোরচক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

মাদারীপুরের শিবচরে ইজিবাইক, মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় সংঘবদ্ধ চক্রের ৩ সদস্য...

ফের ভূমিকম্পে কাঁপলো গাজীপুর

গাজীপুরের বাইপাইল এলাকায় আজ শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ৩.৩ মাত্রার...

পিআর ও ‘কওমি জননী’ উপাধি নিয়ে তীর ছুড়লেন ফখরুল

দেশের মানুষ এখনো পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্য...

দেশে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা, নিতে হবে যেসব পদক্ষেপ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার সকালে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়...

ফের ভূমিকম্পে কাঁপলো গাজীপুর

গাজীপুরের বাইপাইল এলাকায় আজ শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ৩.৩ মাত্রার...

শিবচরে ইজিবাইক চোরচক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

মাদারীপুরের শিবচরে ইজিবাইক, মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় সংঘবদ্ধ চক্রের ৩ সদস্য...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭ বছরে ৪ সমাবর্তন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ

শিক্ষাজীবনের শেষ মুহূর্তে কালো গাউন আর সনদ হাতে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া প্রতিটি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা