রংপুর ব্যুরো: কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় শত বাধা, কষ্ট ও দারিদ্রতাও থামাতে পারেনি অদম্য ৬ মেধাবী শ্রাবনী, সুলতানা, মানছা, ইয়ানুর ও আফিয়াকে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু
তারা চিলমারী থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। অদম্য এ ৬ মেধাবী চায় প্রকৌশলী, সেবিকা (নার্স) হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে।
তাদের এ সাফল্য অর্জনে সকলের মুখে হাসি ফোটালেও পড়াশোনা চালানোর খরচ নিয়ে বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
মোছা. শ্রাবনী আক্তার চিলমারী উপজেলার মাচাবান্দা এলাকার মো. সুরুজ জামানের কন্যা। মো. সুরুজ জামান পেশায় একজন অটোচালক, নিজের সম্পদ বলতে শুধু বাড়িভিটা মাত্র।
অটো চালিয়ে প্রতিদিন যা আয় করেন, তা দিয়েই চালাতে হয় ৫ জনের সংসার। যেখানে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যায়, সেখানে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: কর্মস্থলে না এসেও বেতন তোলেন শিক্ষক
শ্রাবনী জানায়, পরিবারে অভাব ও টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে পড়াশোনা চালানো তার জন্য বড়ই কঠিন ছিল। সে তার ইচ্ছা শক্তি ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে প্রকৌশলী হয়ে দেশের পাশাপাশি দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়।
শ্রাবনীর পিতা-মাতা বলেন, মেয়ের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আমাদের পাশে এসে কেউ যদি দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো মেয়ের শিক্ষিত হওয়ার আশাটা পূরণ হতো।
মোছা. সুলতানা রাজিয়া চিলমারী উপজেলার সবুজ পাড়া এলাকার মো. আবু তালেবের কন্যা। সুলতানার পিতা একজন সামান্য পাঁপড় বিক্রেতা মাত্র। সারাদিন গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে যে পাঁপড় বিক্রি করেন, তা দিয়েই ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তার।
অভাবের কারণে মেয়েকে ভালো কোনো পোশাক এবং সময়মতো প্রাইভেটের বেতন, এমনকি খাতা-কলম ঠিক সময়ে দিতে পারেনি বলে জানান তিনি। এরপরও তার সাফল্য বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সুলতানা এবার থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এখন তার ইচ্ছা, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে মানুষের মতো মানুষ হবে। সে চায় একজন নার্স (সেবিকা) হয়ে দেশের ও দেশের মানুষের হয়ে সেবা দিতে। মেয়ের এ স্বপ্নপূরণের জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তার পরিবারের লোকজন।
আরও পড়ুন: সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
মোছা. মানছা আক্তার চিলমারী উপজেলার কিশামতবানু (নালাড় পাড়) এলাকার মো. রুহুল আমিনের কন্যা। মো. রুহুল আমিন পেশায় একজন কৃষক। জমি বলতে শুধু বাড়িভিটা ছাড়া আর কিছু নেই।
অন্যের জমিতে কাজ করে কষ্টে করে চালাচ্ছে ৪ জনের সংসার। এর ওপর ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা চালানো তার জন্য বড় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের ভালো ফলাফল এবং স্বপ্নপূরণ এখন যেন তার ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। মানছা অভাবী সংসারে মানুষ হলেও ছোট থেকেই ছিল মেধাবী। তাই দারিদ্রতা তার মেধাকে আটকে রাখতে পারেনি। সে এবার থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
সে চায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৌশলী হয়ে দেশের ও দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে। কিন্তু তার স্বপ্নপূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাব।
আরও পড়ুন: কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা
মোছা. ইয়ানুর বেগম উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ উমানন্দ মাটিয়াল এলাকার মো. নুর মোহাম্মদ শেখের কন্যা। মো. নুর মোহাম্মদ পেশায় একজন কৃষক। তার জমাজমি বলতে বাড়িভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই।
অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে ৪ জনের সংসার চালানো তার জন্য বড় কঠিন হয়ে দাঁড়ালেও মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ বানাতে চান তিনি। এ জন্য তিনি সকলের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।
ইয়ানুর এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করে। ইয়ানুর চায় পড়াশোনা চালাতে, চায় একজন সেবিকা (নার্স) হয়ে দেশের ও দেশের মানুষের হয়ে সেবা করতে। স্বপ্নপূরণ করতে চায় বাবা-মায়ের ও এলাকাবাসীর।
এছাড়া মোছা. আফিয়া আক্তার (বৃষ্টি) চিলমারী উপজেলার মাচাবান্দা এলাকার মো. বাবলু শেখের কন্যা। মো. বাবলু শেখ পেশায় একজন কৃষক। শ্রম দিয়েই তিনি ৪ জনের সংসার কষ্টে করে চালিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রকাশ
এর ওপর মেয়ের পড়াশোনা চালানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই মেয়ের ভালো ফলাফল শুনেও খুশি হতে পারেনি তিনি। মেয়ের স্বপ্নপূরণ করবেন কীভাবে? এই চিন্তা তিনি পড়েছেন বিপাকে।
আফিয়া থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে একজন নার্স হয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করতে চায়। এ জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছে আফিয়া।
মোছা. খাদিজা বেগম চিলমারী উপজেলার সবুজ পাড়া এলাকার মো. আব্দুল হকের কন্যা। মো. আব্দুল হক একজন দিনমজুর। দিন খেটে খাওয়া সংসারে ৫ জন সদস্য। দিন শেষে যা টাকা পান, তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টের। এর ওপর মেয়ের প্রকৌশলী হওয়ার চিন্তা তাকে ফেলিয়েছে বড়ই চিন্তায়।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংক ও ডিআইইউ’র মধ্যে চুক্তি
কীভাবে মেয়ের ইচ্ছাপূরণ করবেন বা সংসার চালাবেন, এ চিন্তায় দিন কাটছে তার। খাদিজা এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।
সে পড়াশোনা করতে চায়, চায় প্রকৌশলী হয়ে দেশের ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে। কিন্তু তার স্বপ্নের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা। মেয়ের স্বপ্নপূরণের জন্য তার পিতা সকলের নিকট সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ ৬ মেধাবী জানায়, ইচ্ছাশক্তি, প্রচুর সাধনা এবং সঠিকভাবে পড়াশোনা করলে সব কিছুই অর্জন করা সম্ভব।
সান নিউজ/এনজে