ছবি : সংগৃহিত
পরিবেশ

মুন্সীগঞ্জে থামছে না পদ্মার ভাঙন!

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: গত বছর পদ্মার ভাঙনে আমাগো বসত ভিটা সব নদীতে গেছে। এ বছর কিছুটা দূরে নদী থেকে কিছুটা দূরে ভাগিনাগো বাড়িতে ঘর কইরা আছি। এইবার আবার ভাঙন শুরু হইছে। ঘরের পিছ দিয়া মাটি ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা পড়তাছে। রাইতে ঘুমাইনা, আতঙ্কে থাকি। কখন জানি এই ঘরও ভাইঙ্গা নদীতে যায়। কিছুতেই থামছে ভাঙন, আমরা এমনেইতো সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েগেছি।

আরও পড়ুন: রামু ভূমি অফিসে ভয়ংকর জালিয়াতি

কথা গুলো বলছিলেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের শম্ভু হালদারকান্দি গ্রামের সুমিতা বারই (৫০)। গত বছর এই এলাকার পদ্মার শাখা নদী ভাঙনে ভিটে-মাটি হারা হন তিনি। এরপর থেকেই তাদের আত্মীয়র বাড়িতে স্বামী, সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন সুমিতা বারৈ। এর-আগেও নদীর ভাঙনে হারিয়েছিলেন ভিটে-মাটি।

শুধু সুমিতা বারৈ নন, এমন আতঙ্কে দিন-রাত কাটাচ্ছেন গ্রামের আখতারুন্নেছা, সজিব মন্ডল, মলিন, মকুল হালদার, নুরে আলম, উত্তম কুমার, আকাশ মন্ডলসহ অন্তত শতাধিক পরিবারের মানুষ। এবার বর্ষার শুরুতে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাবাজার ইউনিয়নের সর্দারকান্দি, শম্ভু হালদার কান্দি, মহেশপুর পশ্চিমকান্দি, মহেশপুর পুর্বকান্দি গুদারাঘাট, ভুতারচর, আশুলিরচর, কালিরচর পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: কৃষকর উপর হামলায় ৭ পুলিশসহ আহত ২০

এর আগে গত বর্ষায় শম্ভু হালদারকান্দি ও সর্দারকান্দি গ্রামের ১৫০ টি পরিবারের ১৯০ টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছিলো। সেই সঙ্গে প্রায় দুই'শ বছরের পুরোনো একটি কালীমন্দিরও নদীতে বিলীন হয়েছিল। সে সময় ভাঙনের শিকার অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। অনেকের সামর্থ না থাকায় নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে, ভাঙন থেকে বেঁচে যাওয়া আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বা সড়কের পাশে পতিত জমিতে ঘর করে আশ্রয় নেন। তবে এবার আবার ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে আছেন তারা।

সরেজমিনে, মহেশপুর পূর্বকান্দি গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় পদ্মার ভাঙনের চিত্র। নদীর স্রোত ও ঢেউয়ের কারনে ভাঙছে জমি। এ পথ ধরে পশ্চিমকান্দি যেতে নদীর তীরে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেশি দেখাযায়। ভাঙন ঠেকাতে গত বর্ষায় শম্ভু হালদারকান্দি এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়েছিল। সে ব্যাগ সরে গিয়ে মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে। এতে হারাচ্ছে একেক করে স্বপ্ন।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

ভাঙন আতঙ্কে আছেন সর্দারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা স্বামী হারা আখতারুন্নেসা (৬০)। গত বছর তিনি সর্বস্ব হারিয়ে ছিলেন। এরপরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অন্যের জায়গায় একটি টং দোকান করেছেন। সে দোকানেই তিনি থাকেন। রান্নাবান্না করেন। দোকানে বিষন্ন মনে বসে ছিলেন তিনি।

আখতারুন্নেসার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সহায় সম্বল বলতে ভাঙা একটা ভিটা আর ঘর আছিল। গত বছর ওইডা নদীতে ভাঙছে। থাকার কোন জায়গা ছিল না। গ্রামে মানুষ অন্যের বাড়িতে ছোট্ট একটা টং দোকান কইরা দিছে। দোকানের মধ্যেই থাকা-খাওয়া রান্না বান্না করি। এইবছর আবারও ভাঙতাছে। ভাঙলে আমার আর যাওনের জায়গা থাকবো না।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মার শাখা নদীটি ২০ বছর আগেও ছোট একটি নালার মত খাল ছিল। খালের মুখ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু দস্যুদের বালু লুটের কারনে ১৯৯১ খালটিতে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। গত ২২ বছরে অন্তত ৮-১০ বার ভেঙে এটি এক কিলোমিটার চওড়া নদীতে পরিণত হয়েছে।এতে কয়েক হাজার মানুষের বসতভিটা, জমি, মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়।

আরও পড়ুন: নাদিম হত্যায় বাবুর সহযোগী গ্রেফতার

ইউনিয়নটির মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন। তার বাড়ি মহেশপুর পশ্চিমকান্দিতে। এবার তাদের বসত ভিটাও ভাঙনের মুখে পড়েছে।

মনির হোসেন বলেন, বর্ষার শুরুতে অল্প অল্প ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন বাড়ছে।কয়েকটি গ্রামের শতশত পরিবার ভাঙন আতঙ্কে আছে। গত বছর যেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, ব্যাগ সরে গিয়ে সেখানেও ভাঙছে। তাই ভাঙন রোধে শুধু জিও ব্যাগ নয়। নদীর তীরে বাঁধ দিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নয়তো গ্রামগুলো আর রক্ষা করা যাবে না।

বালু দস্যু, বাল্কহেড চলাচলের কারনে এটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে পদ্মা নদীতে পরিণত হয়েছে। এখন মূল পদ্মার স্রোত সরাসরি এ নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষজন ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছে।

আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ৮৫০ শিক্ষার্থী পেলো ট্যাব

জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় সাংসদ সদস্য, পানি উন্নয়নবোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চাই এখানে বালুকাটা বন্ধ সহ ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নরেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, কয়েকদিন আগে ঐ এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। ভাঙ্গন প্রবণ কয়েকটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬ হাজার ৬১৮ টি জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। এছাড়াও যেখানে বাড়িঘর ও ভাঙন সম্ভবনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কম খরচে বেশি লাভ, মাদারীপুরে আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

একসময় মাদারীপুর জেলায় ব্যাপক পরিমাণে আখ চাষ হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় কৃষকরা...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে দুর্ঘটনা, আহত এক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরীণ সড়কে শাটলকার ও ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্...

অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগ করে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন 

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তার পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করার ঘোষণ...

জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার

ইসলামী বক্তা, ভারতীয় বংশোদ্ভূত জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি না দ...

ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে প্রথম পদযাত্রা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঢাকা-১৪ আসনের মনোনীত প্রার্থী সানজিদা ইসল...

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে আগামী ২...

বিএনপি ভেসে আসা দল নয়, বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না

বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না, উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপা...

গুম প্রতিরোধ আইনে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ স...

সৌদি আরবে ১৭ হাজার নারী শিক্ষকে দেয়া হবে সংগীত প্রশিক্ষণ

সৌদি আরব সরকার বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগীত শিক্ষা চালুর বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের শ...

‘ঘি আমাদের লাগবেই, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাঁকা করব’ — নো হাংকি পাংকি

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভোটের দাবিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা