ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আর ৮ দিন বাকি আছে। প্রার্থীরা অনলাইনে-অফলাইনে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, সামাজিক মাধ্যমে বুলিংয়ের অভিযোগ এনেছেন। এদিকে শিবিরের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম ফরহারের প্রার্থিতা নিয়ে কোর্টে রিট করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী।
গতকাল রোববার বিকেলে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ জানায় ছাত্রদলের ‘আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ’। অভিযোগ জানানোর পর প্রেস ব্রিফিংয়ে ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, শনিবার শিবির পরিচালিত ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ঢাবির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে তাদের খাবার ও উপঢৌকন দিয়ে শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি, জিএস, এজিএস প্রার্থীরা ভোট চান। এটি সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধির ধারা ৯(গ) লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি যেন এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ নামে দুটি পেজ থেকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ক্ষুন্ন করছে। প্রশাসন অ্যাডমিন মডারেটরদের চিনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী বলেন, শিবিরের প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ অস্বীকার করে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধে চাকমাদের কোনো অংশগ্রহণই ছিল না। অথচ সেই জনগোষ্ঠীর রাজবংশের অনেকেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের সদস্য প্রার্থী সর্বমিত্র চাকমা ফেসবুক পোস্টে মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করেছেন। আরেক সদস্য জয়েন উদ্দীন তন্ময় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে বিমান হাইজ্যাকার বলেছিল। এগুলো গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে জানিয়েছি।
এ সময় ছাত্রদলের প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ জিএস প্রার্থী ও শিবিরের ঢাবি সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ফোকাস আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমি এটার বর্তমান মহাপরিচালক হিসেবে অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ভোটের প্রচারণায় গেলে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে যেতাম, সেটি হয়নি। আর শিক্ষার্থীরা নিজেরা ভোট চাইলে তো আমাদের কিছু করার নেই।
রোববার ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম অনলাইনে চরিত্রহনন, বুলিংয়ের শিকার হওয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, অনলাইনে আমাদের চরিত্রহননের চেষ্টা করছে একটি দল। ফেসবুকে আমার আইডিতে একটি গোষ্ঠী গালাগালি করছে। আমাদের জোটের নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। তিন দিন হয়ে গেল, এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে শিবিরের ভিপি প্রার্থী বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখছি। নানা রঙের শিক্ষক এখানে আছেন, তারা যদি কোনো ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা দিতে চায় তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে রিটের ঘটনায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনটি ডেকেছিল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। রিটের বিষয়ে ফরহাদ বলেন, বেশ কয়েকটি দল সাদিক কায়েম এবং আমাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছবি, ভিডিও এডিট করে প্রকাশ করেছে; তার থেকে তারা এখন আদালতে গেছেন, এটা ভালো। আমরা একে সাধুবাদ জানাই।
গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাসে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে প্রচার চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেলের প্রার্থীরা। এ সময় প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের, জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার, এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল কাদের বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সাড়া পাচ্ছি। তবে আমাদের নামে অনলাইনে নানা নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এগুলো আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।
বাম ধারার সাত ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। গতকাল মধুর ক্যান্টিনের পাশে সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু এ ইশতেহার উপস্থাপন করেন। ইশতেহারে ডাকসুর ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নির্বাচনের তারিখ একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নির্ধারণ, বাজেটের ১০ ভাগ গবেষণায় বরাদ্দের অঙ্গীকার করা হয়। আবাসন সংকট নিরসনে হলে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বন্ধ, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, পুরোনো ভবনের সংস্কার, নতুন ভবন নির্মাণ ও প্রথম বর্ষ থেকেই প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সিট নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। গণরুম-গেস্টরুম ও র্যাগিং নিষিদ্ধ করে ‘ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হলে প্রবেশাধিকার, ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন ও হয়রানিমূলক নিয়ম বাতিলের দাবি জানানো হয়।
ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছে। রিটের শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসান আলী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই দিন ধার্য করেন। বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম এই রিট করেন। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
সান নিউজ/আরএ