ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীতে আলোচিত ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলার সোমবার (৬ মার্চ) রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ফেনীর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ মোঃ কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন : পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৪২
রায়ে প্রধান আসামি এসআই মাহফুজসহ ৬ জনকে ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ ১ লাখ টাকা জরিমানা, ৬ জনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১ জনকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেয় আদালত।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বনিক জানান, রায়ে এএসআই মো. মাহফুজুর রহমান, এসআই মো. বিল্লাল হোসেন বেলাল, এসআই মো. আশিকুর রহমান আশিক, সালেহ আহমদ, ফরিদুল আলম ফরিদ কোম্পানি, মো. জাফর কোম্পানির ১৫ বছরের কারাদণ্ড ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায় আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড। অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, কনস্টেবল মো. শাহীন এস.বি. শাহীন, মো. আব্দুল মোতালেব মুহুরী, কনস্টেবল কাশেম আলী কাশেম, গিয়াস উদ্দিন গেসুর ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।
আরও পড়ুন : আল আমিনের মামলার বিচার শুরু
মো. জাবেদ আলীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে ৮ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।
পলাতক আসামিরা হলেন- আবুল কাশেম (কাশেম পুলিশ), আব্দুল মোতালেব মুহুরী, বিল্লাল হোসেন বেলাল, আশিকুর রহমান আশিক, জাফর কোম্পানি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন কমল বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নয়। রায়ের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করছি আমরা ন্যায়বিচার পাব।
আরও পড়ুন : মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪৭
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফয়েজুল হক মিলকী, আনোয়ারুল ইসলাম ফারুক, জাহিদ হোসেন কমল, মীর মোশাররফ হোসেন মানিক ও তাজুল ইসলাম ভূঞা। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের পরীক্ষা করা হয়েছে।
এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক বলেন, ১ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফের আদালতে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্ত হওয়া এএসআই মাহফুজসহ ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : নারী চিকিৎসকের উপর হামলার চেষ্টা, আটক ১
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি একদিনে তদন্ত কর্মকর্তাসহ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলায় এএসআই মাহফুজসহ ৫ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দিয়ে দায় স্বীকার করে।
আদালত সূত্রে, এ মামলায় ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত বছর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ২৯ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।
এ মামলায় এক সঙ্গে ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা ফেনীর তৎকালীন ডিআইও-১ মো. শাহীনুজ্জামান, র্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের আপেল মাহমুদ, মনিরুজ্জামান, জাহিদ হোসেন শুভ, আলমগীর হোসেন ও জব্দ তালিকার সাক্ষী আল আমীন শাহী।
আরও পড়ুন : টেকনাফে মুক্তিপণে ফিরল অপহৃত দুই শিশু
পিপি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, গত বছরের ৬ মার্চ তৃতীয় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
৭ বছরে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় তিন ম্যাজিস্ট্রেট, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদীসহ ১৬ জন সাক্ষ্য দেন। মোট ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এ মামলার মোট আসামি ১৩ জনের মধ্যে ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ৫ আসামি পলাতক রয়েছে।
আরও পড়ুন : তিন যুবতীকে ধর্ষণ চেষ্টা, যুবক গ্রেফতার
আদালত সূত্রে, ২০১৯ সালের ১৭ মে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দেয় তোফাজ্জল হোসেন। আদালত তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এ মামলার ৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোফাজ্জল কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার বাসিন্দা। মাহফুজ ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন। তারপর সেখান থেকে বদলি হয়ে যায়।
একই সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২১ জুন শহরতলীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোলে একটি শিশুকে ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই মাহফুজুর রহমান। র্যাব-৭ এর একটি দল গাড়িটি ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পরে তার গাড়ি থেকে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমান ও গাড়িচালক জাবেদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২২জুন ফেনী মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন : ভারতে ১৮ বাংলাদেশি গ্রেফতার
মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুজ্জামানকে। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন।
২০১৬ সালের ২২ মে দ্বিতীয় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর আবুল বশর অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত গ্রহণ করেনি। আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। ১৩ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তৃতীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি এএসআই মাহফুজুর রহমানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে।।
সান নিউজ/এইচএন
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            