অপরাধ

চার খুন-ধর্ষণ-চুরির রোমহষর্ক কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মুঠোফোন চুরি করতে রাতের আঁধারে অন্যের বাড়িতে ঢুকেছিল ১৭ বছরের কিশোর। তারপর একে একে কুপিয়েছে বাড়ির চার বাসিন্দাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেছে দুই কিশোরী বোনকে। শেষমেশ ছুরি দিয়ে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রত্যেকের। এই নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি আট বছরের প্রতিবন্ধী শিশুও।

মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের একটি দোতলা বাড়িতে। গত বৃহস্পতিবার ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চারজন হলেন ফাতেমা আক্তার (৪০), তাঁর বড় মেয়ে সাবরিনা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে মোছা. শাওরিন (১২) ও ছোট ছেলে ফাদিল সামদানি (৮)। বড় মেয়ে সাবরিনা এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ছোট মেয়ে শাওরিন পার্শ্ববর্তী ব্রাইট ক্যাডেট মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। ছোট ছেলে সামদানি নার্সারির ছাত্র ছিল। ফাতেমা আক্তার ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। মালয়েশিয়ায় চাকরি করার সুবাদে সেখানে শ্রীপুরের আবদার গ্রামের বাসিন্দা রেজোয়ান হোসেনের সঙ্গে পরিচয় ও প্রেম হয়। ২২ বছর আগে তাঁরা বিয়ে করেন। ২০১০ সালে এই দম্পতি সন্তানদের নিয়ে দেশে আসেন। এরপর রেজোয়ান মালয়েশিয়ায় তাঁর কাজ অব্যাহত রাখলেও ফাতেমা আর কাজে যাননি।

পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সোমবার ২৮ এপ্রিল সকালে কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। বিকেলে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলামের কাছে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেপ্তার কিশোর স্থানীয় একটি মক্তবে পড়ত। তার বাবা রিকশাচালক। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। পিবিআই বলছে, এই কিশোরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে তার চাচার এক ভাড়াটের সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় হওয়া মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে। ৯ মাস জেল খাটার পর কিছুদিন আগে সে জামিনে ছাড়া পেয়েছে।

পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, থানা-পুলিশ এবং সিআইডির পাশাপাশি পিবিআইও ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছিল। ঘটনার পর থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা ভুক্তভোগীদের বাবা রেজোয়ান হোসেনের সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ করছিলেন। রেজোয়ানই জানান এই কিশোর তাঁর মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন সময়। এ ঘটনায় তাকেই তাঁর সন্দেহ হয়। তাঁর কথার ভিত্তিতেই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে কিশোরটি। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সে ওই বাড়ির পাশে যায়। বাড়ির ওয়ালে বের হয়ে থাকা ইটে পাড়া দিয়ে দোতলার ছাদে ওঠে। এরপর ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানোর রশি কেটে ফেলে। রশিটি ছাদের একটি গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে সেটি বেয়ে দোতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। বাথরুমে রাখা ওয়াশিং মেশিনের ওপর পা রেখে সে নিচে নামে। এরপর দুই বোন নূরা ও শাওরিনের কক্ষে যায়। নূরা তখনো জেগে ছিল এবং মুঠোফোনে কিছু একটা করছিল। এটা দেখে কিশোরটি তাদের বিছানার নিচে লুকিয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে থাকার পর সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, এটা নিশ্চিত হয়ে সে বিছানার নিচ থেকে বেরিয়ে আসে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরটি বলেছে, এরপর সে নিচতলায় গিয়ে রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে এসে নূরা ও শাওরিনের মা ফাতেমা আক্তারের ঘরে ঢোকার জন্য দরজা খোলে। দরজার শব্দ পেয়ে ফাতেমা জেগে যান। তিনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে এদিক–সেদিক তাকান। কিশোরটি তখন দরজার পেছনে অবস্থান নেয়। কাউকে না পেয়ে ফাতেমা যখন আবার ঘরে ঢুকতে যান, তখনই কিশোরটি তাকে বঁটি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে। ফাতেমা তখন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এই শব্দ পেয়ে নূরা ঘুম থেকে জেগে তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। তখন কিশোরটি তাকেও এলোপাতাড়ি কোপায়। এরপর জেগে ওঠে নূরার আট বছরের প্রতিবন্ধী ভাই ফাদিল। সে ঘরের এদিক–সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছিল। কিশোরটি তাকেও কুপিয়ে নিস্তেজ করে ফেলে। ঠিক তখন শাওরিনের ঘুম ভেঙে গেলে সে চিৎকার করে ওঠে। কিশোরটি তখন তাকেও বঁটি দিয়ে কুপিয়ে মাটিতে ফেলে রাখে। এরপর দুই বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের পর প্রত্যেকের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সে ছুরি দিয়ে সবাইকে জবাই করে। ফাতেমা আক্তারের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, দুটি কানের দুল, একটি কানফুল, একটি নাকফুল এবং দুই বোনের আলমারি খুলে দুটি স্বর্ণের চেইন, একটি আংটি, একটি লাল রঙের ডায়েরি নিয়ে নেয়। ফাতেমার ঘর থেকে দুটি মুঠোফোন নিয়ে সে হাত–মুখ ধুয়ে ফেলে। এরপর বাড়ির পেছনের গেট খুলে নিজের বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সে যখন বাড়িতে ঢুকছিল, তখন ফজরের আজান হচ্ছিল।

গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, কিশোরটি যখন কুপিয়েছে, তখন নিহতদের দুজন চিৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু আশপাশের কেউ তা শুনতে পাননি। বাড়িটিতে সে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করে। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার বাড়ির আলনায় অন্যান্য কাপড়ের সঙ্গে রাখা তার রক্তমাখা গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি মোবাইল ফোন, তিনটি স্বর্ণের চেইন, আংটি ও কানের দুল উদ্ধার হয়েছে। হাফিজুর রহমান বলেন, ছেলেটির বয়স নির্ধারণের জন্য পরীক্ষা করানো হবে। প্রাথমিকভাবে তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বিএনপি বলছে অসংগতি, জামায়াত দেখছে ইতিবাচকতা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য...

আওয়ামী লীগ এখন ‘মরা হাতি’, যে ইচ্ছা লাথি দিতে পারে: হাসনাত

আওয়ামী লীগকে ‘মরা হাতি’ আখ্যা দিয়ে জাত...

শিবচরে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ

মাদারীপুরের শিবচরে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রা...

বাংলাদেশের বাস্তবতায় জুলাই সনদের হিসাব–নিকাশ

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জুলাই স...

উপদেষ্টা থেকে প্রার্থী: ডিসেম্বরেই মাঠে মাহফুজ ও আসিফ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ফেব্র...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

বোয়ালমারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার মালামাল লুট

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নারায়ণ চন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির...

জনগণের সিদ্ধান্ত নাকি রাজনীতির সাজানো সম্মতি?

গণভোট হলো জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের একটি পদ্ধতি, যে...

এবার ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’ 

নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন করে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন কমিশন যু...

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বনদস্যু, তিন শতাধিক জেলে অপহরণ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার নামে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা