নোয়াখালী প্রতিনিধি: আজ নোয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিন ভোরে বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনীর প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত এবং সি-জোনের কমান্ডার মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে জেলা শহর মাইজদী আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা।
আরও পড়ুন: ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
একযোগে তারা ৩ টি রাজাকার ক্যাম্প দখল করে। আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানিদের এদেশীয় দালাল রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধের মুখে অবস্থা বেগতিক দেখে নোয়াখালী পিটিআই’র ট্রেনিং সেন্টার থেকে তড়িঘড়ি করে পালিয়ে যায় পাক সেনারা, শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালী।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সি-জোনের গুপ্তচর জানায় জেলা শহর মাইজদীতে হানাদার বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে গেছে। তাৎক্ষণিক জোনের রাজনৈতিক প্রধান আলী আহম্মদ চৌধুরীসহ অন্যান্য কমান্ডারবৃন্দ জরুরী বৈঠকে বসেন এবং নোয়াখালী শহরে অবস্থিত পাক বাহিনী ও রাজাকারদের ওপর আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেন।
৭ ডিসেম্বর সকাল ৯ টার দিকে মুজিব বাহিনীর প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত এবং ডি-জোনের কমান্ডার রফিক উল্যাহ্’র বাহিনীসহ মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ অভিযান চালিয়ে মাইজদী ভোকেশনাল, নাহার মঞ্জিল, কোর্ট ষ্টেশন, রৌশন বাণী সিনেমা হল, দত্তের হাট, কোল্ড ষ্টোরিজসহ সব রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
বাকি ছিল শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর মূল ক্যাম্প মাইজদী পিটিআই। অন্য সবগুলো ক্যাম্প দখল নেওয়ায় একা হয়ে যায় পিটিআই।
একদিকে সাধারণ মানুষের আনন্দ মিছিল, অন্যদিকে আক্রমণ করতে হবে পিটিআই। পিটিআই হোস্টেল দিঘির উত্তর পাড়ে ৩ তলা বিল্ডিং এ রাজাকারদের হেড কোয়াটার ছিল।
কিন্তু এ বিল্ডিং ভাঙার মতো কোনো বিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তাই ফেনী থেকে এনে ৩ টি মর্টার শেলের দ্বারা পিটিআই হোস্টেলে আক্রমণের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা দিকে মাইজদী শহরে সর্বশেষ রাজাকার ক্যাম্পের পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর শহর মাইজদীর হেড কোয়ার্টার হানাদার মুক্ত করা হয়। জেলা শহরের চারিদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তি পাগল মানুষের আনন্দ জোয়ারের ঢল উঠে।
নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ ডিসেম্বরের স্মৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ১৯৯৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী পিটিআইয়ের সম্মুখে স্থাপন করা হয় স্মরণিকা স্তম্ভ ‘‘মুক্ত নোয়াখালী’’।
আরও পড়ুন: যাত্রীবাহী বাসে আগুন
আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একই স্থানে বর্ধিত পরিসরে স্থাপন করা হয় নোয়াখালী মুক্ত মঞ্চ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাক বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্রজনতা পুলিশ ও ইপিআর ফেরত জওয়ানদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে।
পরবর্তীতে পাক বাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্তানিরা। নোয়াখালী পিটিআই এবং বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাটি গাড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
আরও পড়ুন: আজ টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
তাদের সাথে এদেশীয় রাজাকাররা মিলে শুরু করে লুটপাট। এরই মধ্যে নোয়াখালীর অসংখ্য ছাত্র জনতা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোম্পানীগঞ্জের বামনীর যুদ্ধ, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে।
শহীদ হয় শত শত মুক্তিযোদ্ধা। শুধুমাত্র সোনাপুরের শ্রীপুরে তারা হত্যা করেছিল শতাধিক ব্যক্তিকে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত প্রান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের পিছু হটিয়ে দেয়।
৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। আর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গোটা নোয়াখালী।
সান নিউজ/এনজে