নিজস্ব প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: আজ ১৩ নভেম্বর কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষের অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ‘হাতিয়া গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালে এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী জঘন্ন, নৃশংস ও নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়ে প্রায় ৬৯৭ জন নিরপরাধ মানুষকে জড়ো করে পাখির ঝাঁকের মতো গুলি করে হত্যা করেছিল। সে দিনের সেই রক্তঝরা দিনটি ছিল ২৩ রমজান শনিবার, ভোরে মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি আসছিল। কোথাও কোথাও প্রস্তুতি চলছিল নামাজের। হায়েনাদের মর্টার শেলের শব্দে আকস্মিকভাবে সব কিছুই যেন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। পরক্ষণই হাতিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের আত্মচিৎকারে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ওই এলাকার আকাশ বাতাশ। বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্বল এমনকি বাপ-ভাই-বোনকে ছেড়ে নিজ নিজ জীবন বাঁচাতে এলোপাতাড়ি দৌড়াতে থাকে সকলেই অজানার উদ্দেশ্যে। প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, নিজ চোঁখে দেখা হাতিয়া অপারেশন নামে সেই রক্তঝরা দিনের গল্প। মানুষের আত্মচিৎকার আর গুলির শব্দ আজও সেখানে অনেকের কানে বাজে। সেই দিন দৌড়ে পালানোর চেয়ে বাড়ির পাশে ঝোপ-জঙ্গলে এবং ধান ক্ষেতে শুয়ে জীবন বাঁচানোই ছিল হাতিয়ার মানুষের কাজ। সেদিন অনেকেই ব্রহ্মপুত্র নদ সাঁতরে চরাঞ্চলে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে।
পাকিস্তানী সেনাদল সেদিন গ্রামের পর গ্রাম পুঁড়িয়ে ভস্ম করে দিয়েছিল। ঝোঁপে-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মায়ের কোলে শিশুসহ শত শত মানুষকে টেনে হিঁচড়ে বের করে হাত-পা-চোখ বেঁধে বদ্ধভূমি ‘দাগারকুটি’ নামক স্থানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তারা। সারা দিনব্যাপী চলে এ হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ। পুড়ে যায় হাতিয়া, অনন্তপুর, দাগারকুটি, নীলকণ্ঠ, রামখানা ও নয়াদাড়া নামক গ্রামগুলোর শত শত বসত ঘর। উলিপুর সদর থেকে মাত্র ৮ কি.মি পূর্বে প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদই শুধু নিজ বক্ষে ঝাপ্টে ধরে আছে সেই দাগারকুটি নামক গ্রামটি।
ঐতিহাসিক এ ঘটনা স্মৃতিচারণে সেখানে গণকবরের পাশে গড়ে উঠেছে স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতিবছর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন স্মৃতিস্তম্ভে নিহতদের সরণে পুষ্পমাল্য অর্পন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
সান নিউজ/এমএইচ