ভিত্তিপ্রস্তরের দুই বছরেও মুন্সীগঞ্জের তালতলা-ডহরী খালে স্টিলের বেইলি ব্রিজের স্থলে কুন্ডেরবাজার পাকা সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
জেলার টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদীখান উপজেলার সীমান্তবর্তী কুন্ডেরবাজারে খরস্রোতা ওই খালের ওপর ২৭ বছর আগের জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজ ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২৩ সালে। ওই বছরের ৭ নভেম্বর ১৫২ মিটার দৈর্ঘ্যের কুন্ডেরবাজার পাকা সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন সাংসদ। সেই থেকে দুই বছরে অন্তত ৪ বার টেন্ডার-রি-টেন্ডার আহ্বান করেও পাকা সেতু নির্মাণকাজ শুরুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, মুন্সীগঞ্জ-শ্রীনগর ও টঙ্গীবাড়ি-ঢাকা সড়কে কুন্ডেরবাজার এলাকার বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন জেলা সদর, টঙ্গীবাড়ি, সিরাজদীখান ও শ্রীনগর উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াত করে থাকে।
১৯৯৮ সালে তালতলা-ডহরী খালের ওপর ৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই বেইলি ব্রিজ নির্মিত হয়। বছর বছর সংস্কার করেই ব্রিজটি সচল রাখা হয়েছে। গত দুই বছরের মধ্যে ব্রিজের স্টিলের প্লেটে মরিচা পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন মেয়াদে ব্রিজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ছোট আকারের যানবাহন ছুটে চলছে ব্রিজের ওপর দিয়ে। শীর্ণকায় স্টিলের প্লেটের ওপর যাতায়াতে চালকদের ভয়ে থাকতে হচ্ছে। সাবধানতা অবলম্বনের মধ্য দিয়ে ব্রিজ পারাপার হচ্ছে হাজারো যানবাহন। বড় আকারের কোনো যানবাহন পারাপার হতে গেলে রীতিমতো ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। পাকা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করতে না পারার কারণে এ জেলার অন্তত ৪টি উপজেলার মানুষের এখনও যাতায়াতের ভরসা জরাজীর্ণ ওই বেইলি ব্রিজটি।
অন্যদিকে, দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জের ওই ৪টি উপজেলার হিমাগারগুলো আলু বহনকারী ট্রাকগুলো এই বেইলি ব্রিজ ব্যবহার করতে পারছে না। শুধুমাত্র ছোট আকারের যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস চলাচলেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সামনেই আলু আবাদের মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আলুর বীজ ও সার বহনকারী ট্রাক এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে না। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সিরাজদীখান বাজারের সার ও আলু ব্যবসায়ী ইসমাইল খন্দকার বলেন, গতবার আলু আনতে গিয়ে বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে যেতে পারিনি। লৌহজং উপজেলা ঘুরে সিরাজদীখান বাজারে আলুবীজ বোঝাই ট্রাক আনতে হয়েছে। পথে ট্রাক নষ্ট হয়ে বিপদে পড়েছিল। এতে কয়েক হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
ট্রাকচালক আলী হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে বড় ট্রাক চলাচল করা যায় না। বেইলি সেতু থাকায় আমাদের বালুচর বা লৌহজং হয়ে শ্রীনগর বা সিরাজদীখান যেতে হয়। এতে তেলের বাড়তি খরচ হয়, সময়ও বেশি লাগে। পাকা সেতু হলে দূরত্ব কমবে। একই সঙ্গে ভোগান্তি কমে সবার সুবিধা হবে।
মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, জরাজীর্ণ সেতু উন্নয়ন প্রতিস্থাপন প্রকল্পের আওতায় কুন্ডেরবাজারে ১৫২ মিটার দৈর্ঘ্যের পাকা সেতু এবং কুন্ডেরবাজারের অদূরে বাড়ৈপাড়ায় ২৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪ কোটি টাকা। পদ্মা ও ধলেশ্বরীর নৌ-সংযোগ বজায় রাখতে ১৮ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রেখে কুন্ডেরবাজার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরে চারবার টেন্ডার ও চারবার রি-টেন্ডার আহ্বান হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে কোনোটি চূড়ান্ত হয়নি।
সড়ক ও জনপদের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মুন্সীগঞ্জে ৩৮টি সেতুর পুনর্নির্মাণকাজ চলছে। এই কুন্ডেরবাজার সেতুটি বাকি ছিল। পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী এবং মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম হাইওয়ের সংযুক্তকরণ সড়কে এটি যোগাযোগের যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে। সেতুটি নির্মিত হলে জেলা সদর, সিরাজদীখান, টঙ্গীবাড়ি ও শ্রীনগর উপজেলার মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন।
সাননিউজ/আরপি