লাইফস্টাইল

সহযোগী হোক জীবনসঙ্গীটি

রোকসানা সুইটি : জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। তারা যেমন একজন পুরুষের জীবনের অলংকার, তেমনি সংসারেরও মধ্যমণি। তাদের মর্যাদা সর্বদা গুরুত্ব বহন করে। তার পরও দেখা যায় প্রতিটি নারী অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেন।

বিয়ের আগের জীবন থাকে এক রকমের, বিয়ের পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সব ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গীর ওপর। এ সময় তারা যেমন তার জীবনসঙ্গীর কাছে প্রত্যাশা করে ভালোবাসা, ঠিক তেমনিভাবে চায় সে যেন সব কিছুতেই তাকে সহযোগিতা করে, তার পাশে থাকে।

একটি কথা মনে রাখতে হবে, নারী শুধু একটি সত্তার নাম নয়; বরং সে একটি চালিকাশক্তি যাকে ছাড়া পৃথিবী স্তব্ধ-স্থবির। সভ্যতা বিনির্মাণে যুগে যুগে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে অবদান রেখে এসেছে। প্রত্যেক যুগেই নারী তার মেধা, বুদ্ধি, যোগ্যতা, শ্রম এবং মমতার সংমিশ্রণে গড়ে তুলেছে ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন ইতিহাসের।

নারীরা এক সময় উপেক্ষিত ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ধরে নেওয়া হতো, তারা অন্তঃপুরবাসিনী হবেন। করবেন ঘরসংসারের কাজ। আর বাইরের জগতের লড়াই শুধু পুরুষের জন্য। সেক্ষেত্রেও নারীরা অনুপ্রেরণার উৎস বলে বিবেচিত হতেন স্বজনদের কাছে। এ প্রসঙ্গে কবি নজরুল ‘নারী’ কবিতায় লিখেছেন, তার চক্ষে পুরুষ-রমণীতে কোনো ভেদাভেদ নেই। তিনি আরও লিখেছেন-

‘কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,/ প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।’/ কবিতার শেষে লিখলেন-

‘সেদিন সুদূর নয়/ যেদিন ধরণি পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!’

সে চিত্রই তো আমাদের সামনে। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দায়িত্বপূর্ণ কাজে আসছেন নারীরা। আর সেই কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন যোগ্যতার সঙ্গে। পাশাপাশি সামাল দিচ্ছেন নিজের সংসারজীবন। তাদের এই জীবনযুদ্ধে যদি তাদের জীবনসঙ্গীটি একটু সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে তারা যেন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেন। বিশ্ব জয় করে দেখিয়েছেনও অনেক নারী।

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীরা বিভিন্ন রকম পেশার সঙ্গে জড়িত। সব ক্ষেত্রেই নারীর এখন অবাধ বিচরণ। একটু খেয়াল করলেই দেখব যে নারী একসঙ্গে দুটি পেশা সামলাচ্ছে। এক. তার সংসার পেশা, আর দুই. নিজের পেশা। সে যে-ই হোক না কেন, ডাক্তার, শিক্ষক বা ক্ষুদ্র পেশা গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথাও যদি ধরি, দেখা যাবে সে ক্ষেত্রে ঐ নারীকে সংসার সামলিয়ে আবার তার পেশাটাকে সামলাতে হচ্ছে এবং সামলিয়েও যাচ্ছে দক্ষতার সঙ্গে। তার পরও তার প্রধান পেশা হিসেবে দেখে তার সংসারটাকে।

অন্যদিকে তাদের জীবনসঙ্গীর দিকে নজর দিলে দেখা যায় তাকে সেই কষ্টটা করতে হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তার পেশা কিন্তু একটিই থাকে। তা তার কর্মক্ষেত্র, ঘরের কাজ নিয়ে তাকে কোনো প্রকার মাথা ঘামাতে হয় না।

একজন কর্মজীবী মা সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পরও বাসায় ফিরে দেখা যায় তাকে রান্না ঘরে প্রবেশ করতে হয় গলদঘর্ম হয়ে। পাশাপাশি দেখা যায় একজন কর্মজীবী পুরুষ সেও কর্মব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরে আয়েশ করে বসে টিভির সামনে। চা, নাশতা ততক্ষণে তার সামনে এনে হাজির করেন তারই কর্মজীবী স্ত্রী। এটা যেন স্বাভাবিক একটা ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আবার রাতের খাবার তৈরি, সন্তানদের দেখাশোনা সব সামলাতে হয় ঐ নারীকেই! তারপর একসময় ক্লান্ত-অবসন্ন দেহটাকে নিয়ে বিছানায় লুটে পড়তে হয় তাকে। আবার সকাল থেকে শুরু হয় প্রতিদিনকার মতো কর্মব্যস্ততা, শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। এটা যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

আমরা একটু নজর দিলে দেখতে পাই শুধু গৃহিণী যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে। তাদের কর্মজীবী সঙ্গীটি যখন বাইরের কাজ শেষ করে বাসায় আসেন তখনো কিন্তু তিনি ঘরের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ইচ্ছে করলে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তিনি বাড়িয়ে দিতে পারেন সহযোগিতার হাত। কিন্তু কয়জন করেন সেই কাজটি!

কেন নারীদের জীবনসঙ্গীটি তাদের সহযোগী হতে পারেন না! কেন তার কাছ থেকে নারীরা একটুখানি সহযোগিতা আশা করতে পারেন না ঘরের কাজে ! একজন কর্মজীবী নারী তার জীবনসঙ্গীটিকে সবক্ষেত্রে তার সহযোগী হিসেবে পেতে চান। আশাও করেন তাই। এটা নিশ্চয়ই সবার কাম্য হওয়া উচিত!

করোনাকালীন সময়টাতে লকডাউনে ঘরে বসে থেকে অনেক পুরুষের কাছ থেকে শুনেছি ঘরের কাজগুলো যে কতটা কঠিন, তা তারা খুব কাছ থেকে দেখে উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিছুটা হলেও। কতটা ধৈর্য থাকা দরকার প্রতিদিনকার একঘেয়েমি কাজগুলো করার জন্য। তাদের এই বুঝার ক্ষমতা যেন কাজে প্রমাণিত হয় এবং সব সময় অটুট থাকে। পুরুষের ঘরের কাজে সাহায্য করাটা লজ্জার বিষয় না, বরং সম্মানের।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ

সান নিউজ/এম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ থেকে বন্ধ অর্ধকোটি মোবাইল সিম, বিটিআরসির কড়াকড়ি শুরু

সাইবার নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনের আগে সিম ব্যবহারের অপব্যবহ...

দুর্বল শাসন কাঠামোই বাংলাদেশে সরকার পতনের কারণ: দোভাল

দুর্বল শাসন কাঠামোই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের মূল...

ঢাকার পাতাল মেট্রো প্রকল্পে স্থবিরতা, বাস্তবায়নে লাগবে আরও এক যুগ

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২...

আজ থেকে শুরু জাটকা ইলিশ ধরায় আট মাসের সারাদেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা

দেশের প্রধান মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই সংরক...

শেখ হাসিনার সাবেক পিয়ন থেকে ‘কোটিপতি জাহাঙ্গীর’, ১০০ কোটি টাকার পাচার মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবে...

বিএনপি অর্জুন গাছের ছাল, যার যখন প্রয়োজন কেটে নেয়

বহুরূপীদের খপ্পরে পড়েছে দেশ। বিএনপির এখন ধৈর্য ধারণের সময় উল্লেখ করে বিএনপি চ...

বিএনপি–বিজেপির সংঘর্ষে আহত অন্তত ২০

ভোলায় বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) পৃথক সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধাওয়...

বিদেশিদের হাতে বন্দর দেওয়ার প্রতিবাদে শ্রমিকদের গণঅনশন

শ্রমিক–কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্র...

জাল টাকা দিয়ে কেনাকাটা, কৃষকদল নেতা গ্রেপ্তার

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে জাল টাকাসহ মো. নুর আলম (৩৫) নামে এক কৃষকদল নেতাকে আটক করা...

গণভোটে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা, নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই: শফিকুল আলম

গণভোট ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে যে সিদ্ধান্তই হোক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা