জাতীয়
সৌদিকরণ, নির্যাতন ও বৈধ কাগজপত্র না থাকাই মূল কারণ

মধ্যপ্রাচ্যে স্বপ্নভঙ্গ!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নির্যাতনের শিকার হয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিনিয়ত দেশে ফিরছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফেরার সংখ্যাটা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

প্রতিমাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে শতশত শ্রমিক ফিরেছেন দেশে। কোন কোন দিন এ সংখ্যা দুইশো ছাড়িয়ে যায়। শুধু পুরুষ শ্রমিকরাই নন, ফিরছেন নারী শ্রমিকরাও। নারীদের ফিরে আসার গল্পটা বেশি করুণ।

২০১৭ সাল সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের দেশের নাগরিকদরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ১২টি সেক্টরকে সৌদিকরণ করা হবে। এর পর থেকে ১৫ মাসে ৭ লাখ দুইশো শ্রমিক সৌদি ছেড়েছেন। এদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশি।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গত ১৬ জানুয়ারি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ১০৯ জন বাংলাদেশি। এ নিয়ে ২০২০ সালের প্রথম ১৮ দিনে দেশে ফিরলেন এক হাজার ৬১০ জন শ্রমিক। ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন।

শরিফুল জানান, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৬ হাজার ১১৭ জন, ওমান থেকে ৭ হাজার ৩৬৬ জন, মালদ্বীপ থেকে ২ হাজার ৫২৫ জন, কাতার থেকে ২ হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে এক হাজার ৪৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন দেশে ফিরেছে। প্রতিবছরই দেশে ফিরছেন গড়ে অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক।

বেশ কয়েকটি কারণে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাদরে। তবে নারী শ্রমিককদের বেশিরভাগই ফিরছেন নির্যাতনের শিকার হয়ে। বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে দেশে ফিরতে হচ্ছে যেমন অনেককে তেমনি আবার আরবি ভাষা না জানা থাকার কারনেও সেখানে টিকে থাকতে পারছেন না অনেক বাংলাদেশি।

এর মধ্যে দেশে ফিরে আসা কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন, মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন, শরিয়তপুরের মিলন ও যশোরের মোসলেম উদ্দিন জানান, আকামা তৈরির জন্য নিয়োগকর্তা কফিলকে টাকা দেয়া হলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি। আকামা না হওয়ায় সেখানে অবৈধ ছিলো তারা।

লাখলাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন তারা। কেউ জমি-জমা বিক্রি করে, কেউ সুদে টাকার ঋণ নিয়ে বিদেশ যাত্রা করেন। বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন অথচ কোন অর্থ সম্পদ নেই তাদের হাতে।

১৯৭৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার তৈরি হওয়ার পর থেকে কতজন বাংলাদেশি সেখানে গিয়েছে তার প্রকৃত হিসেব কোন সংস্থার কাছে নেই।

২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছে সৌদি আরবে। এর মধ্যে নানা কারনে দেশে ফিরেছেন প্রায় অর্ধলাখ।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকারসহ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ভাইরাল হয় তাদের নির্যাতনের চিত্র। অনেকে দেশে ফিরে আসতে পারলেও কাউকে কাউকে অত্যাচার সহ্য করেই থাকতে হচ্ছে সেখানে। তাদেরই অনেকে ফেসবুকের মধ্যেমে আকুতি তুলে ধরছেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে।

দেশে তাদের স্বজনেরা জানেন না কিভাবে ফিরিয়ে আনতে হবে তাদের। অসহায়ের মতো কেবল সরকারের দিকেই চেয়ে থাকেন তারা। চোখের পানি আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা কারা ছাড়া আর কিছুই কারার থাকে না যেন।

দালালদের দেখানো রঙিন স্বপ্নে সোনালি দিনের আশায় শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। অনেকেই পড়েন জল্লাদের হাতে। প্রথমদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় নির্যাতন। উন্নত জীবনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় তাদরে কাছে।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হলে সেখানকার থানায় মামলা করতে হয়। তবে সেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে বলে অনেকেই জড়াতে চান না এই ঝামেলায়।

বিবিসির হিসেবে, ২০১৯ সালের অক্টবর পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ৪৮ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মির মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনই নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতরের পাশাপাশি দেশে ফিরে আসার আরেকটি কারণ ভাষা না জানা। নারী গৃহকর্মীরা যে দেশে যাবেন সে দেশের ভাষা জানা থাকলে এ সমস্য কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-র হিসেবে, ৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে সৌদি আরবে শ্রমবাজার চালু হওয়ার পর ২০১৬ সালে সৌদি আরব গেছে প্রায় দেড় লাখ, ২০১৭ সালে সাড়ে ৫ লাখ। ২০১৮ সালে সৌদি পাড়ি দিয়েছে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক৷

শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, মালয়েশিয়া থেকেও ফিরছেন শ্রমিকরা। অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে চিরুনি অভিযান শুরু করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। ১২৪টি অভিযান চালিয়ে ২২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদেরে মধ্যে ৭৮ জনই বাংলাদেশি।

গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের ৭০০ রিংগিত জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফোরর সুযোগ দেয় দেশটির সরকার। কিন্তু টাকার অভাবে অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পারেনি।

মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণার পর থেকে “ব্যাক ফর গুড” (দেশে ফেরা) কমসুচির আওতায় বিভিন্ন দেশের এক লাখ ৯০ হাজার ৪ ৭১ জন অবৈধ অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরে যান। এর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৯১ জন। মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে বর্তমানে অন্তত ছয় লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন বলে জানিয়েছেন কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উর্ধ্ব তন এক কর্মকর্তা।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ: গ্রামের বাড়িতে চুরি, বিএনপি ও শিবিরের বিক্ষোভ

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান...

লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা 

লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে ছকিনা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে...

৪ বার টেন্ডারেও তালতলা-ডহরী খালে সেতু নির্মাণ শুরু হয়নি

ভিত্তিপ্রস্তরের দুই বছরেও মুন্সীগঞ্জের তালতলা-ডহরী খালে স্টিলের বেইলি ব্রিজের...

উৎসবমুখর পরিবেশে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ইইই ফেস্ট অনুষ্ঠিত

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (এনইউবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনব্যাপী ইইই (ইলেক...

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, নামাজ আদায়

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে তার...

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ: গ্রামের বাড়িতে চুরি, বিএনপি ও শিবিরের বিক্ষোভ

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান...

লক্ষ্মীপুরে গভীর রাতে মাস্ক পরে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন

লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের স্টোররুমে গভীর রাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়...

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, নামাজ আদায়

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে তার...

উৎসবমুখর পরিবেশে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ইইই ফেস্ট অনুষ্ঠিত

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (এনইউবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনব্যাপী ইইই (ইলেক...

হাদির সুস্থতা কামনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দোয়া-মোনাজাত

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা