মো.নাজির হোসেন,মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের নগরজোয়ার এলাকায় একটি খালের উপর নির্মিত সেতু উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে ২ বছর যাবত কাত হয়ে রয়েছে। সেতু এপ্রোচের মাটি বর্ষার পানির স্রোতে ভেসে সেতুর দুই পাশে সৃষ্ট হয়ে আছে গভীর গর্ত। নির্মাণের ২ মাস পরেই উদ্বোধনের আগেই বর্ষার প্রবল স্রোতে ব্রীজটি কাত হয়ে যায়। পরে প্রচন্ড স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ব্রীজের দু'পাশের গোড়ার মাটি। এতে ব্রীজ হলেও তা ব্যবহার করতে পারছে না ওই পথে যাতায়াত করা ৩ উপজেলার মানুষ।
আরও পড়ুন:ফের আপিল বিভাগে নিপুণ
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল পদ্মা নদীঘাট হতে শুরু হয়ে চরাঞ্চলের ভিতর দিয়ে একটি রাস্তা পাশের শরিয়তপুর জেলার জাজিরা পর্যন্ত সংযুক্ত হয়েছে। ওই রাস্তার মধ্যের নগরজোয়ার এলাকায় খালের উপরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এই সেতুটি। ওই সেতু দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাড়াও শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার লোকজন মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের ২০টি গ্রামের মানুষের। সেতুটি উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার জন্য সুফল তো দূরের কথা, বরং দুর্ভোগ বয়ে এনেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ অপরিকল্পিত ভাবে যে স্থানে প্রশস্ত সেতু প্রয়োজন, সেখানে সরু সেতু নির্মাণ করায় বন্যার পানির স্রোতে ধসে গেছে সেতুটি। আর ২০২০ সালে ভরা বর্ষায় সেতুটি ধসে যাওয়ার পর সেতুর নিচ দিয়ে পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেতুর দুই পাশের রাস্তা ভেঙে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেতুর পাশের রাস্তা ব্যবহার না করতে পেরে পাশের জমি দিতে যাতায়াত করছে ওই পথে চলাচলকারীরা।
স্থানীয়রা জানায়, নির্মাণের পরপরই ২ বছর আগে বন্যার পানিতে সেতুটিতে ভাঙন ধরে। ধীরে ধীরে অ্যাপ্রোচ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। নির্মানের সময় এই সেতুটিতে এই স্থানের চরের মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার করা হয়। আমরা সে সময় বাধা দিলেও ঠিকাদার অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের কোন কথাই কর্ণপাত না করে এই ব্রীজের পাশ হতে নিন্মমানের বালু নিয়ে এই ব্রীজ নির্মাণ করে। নির্মানের পরে উদ্বোধন না করতেই ব্রীজটি কাত হয়ে গেলো আমরা ব্রীজটি ব্যবহার করতে পারলাম না।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা রোগী ৪৪ কোটি ছাড়াল
নগরজোয়ার গ্রামের বৃদ্ধ আ.মজিদ বেপারী (৬৫) বলেন, বৃদ্ধ বয়সেও ৪ কিলোমিটার হেটে বাজারে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এইযে দেখেন বাজার হতে মালামালও হাতে করে আনতে হচ্ছে। ঠিকাদার লোকাল বালু দিয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করলো। আমরা বাধা দিলাম শুনলো না। এখোন ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়লো। ২ বছর হয় কাত হয়ে আছে ঠিকও করছে না।
বানারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ইভা বলেন, আমরা চর হতে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার হেটে স্কুলে যাই। ব্রীজটা বানানোর ২ মাস না হতেই ভেঙ্গে গেছে। ব্রীজটি হলে আমরা গাড়ি দিয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করতে পারতাম। আমাদের এখন পরিশ্রম করে হেটে গিয়ে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ইতি আক্তার বলেন, আমার বাড়ি হতে আমি যে মাদ্রাসায় পড়ি তা ৫ কিলোমিটার দূরে। এখানে একটি ব্রীজ হলো হওয়ার ২ মাস পরেই ভেঙ্গে গেলো। ব্রীজটা আবার যদি ঠিক করে দিতো তাহলে আমরা গাড়ি দিয়ে যেতে পারতাম।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন ছেড়েছে ১০ লাখ মানুষ
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজেদা রহমান বলেন, আমি এখন এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এ ব্রিজটি তৈরির সময় আমি এখানে ছিলাম না। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ব্রিজটি নির্মান হয়েছে। ব্যয় আমার জানা নেই। তবে জানা মতে ওই ব্রীজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিলো। ব্রিজটি ভাঙার কারণে আর কোন টাকা দেওয়া হয়নি। আমি এখানে যোগদানের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্রীজটি সম্পর্কে অবহিত করে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো তার কোন জবাব পাইনি।
সাননিউজ/এমআরএস