জাতীয়
নেতৃত্বে সশস্ত্র দুই জঙ্গি গোষ্ঠি

অস্ত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রোহিঙ্গা শিবিরে

মইনুল হাসান পলাশ, কক্সবাজার:

"সংগ্রামী রোহিঙ্গা নেতৃত্ব" প্রতিষ্ঠা করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সুসংগঠিত হচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান ভিত্তিক দু'টি সশস্ত্র জংগী গোষ্ঠী। এরা এমন একটি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের ‘স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করবে। আর এ জন্য বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদেরকে বাছাই করে তাদের অর্থ সহায়তা এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বর্তমানে মোট ১২ থেকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে। রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষে নিয়ে যেতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়ে সেখানে সশস্ত্র অবস্থান জোরদারে কাজ করছে আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) এবং আল ইয়াকিং। সুনির্দিষ্ট লক্ষটা কী, সে সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও আপাতত যে কোন কিছুর জন্য প্রস্তুত রাখতে বহুমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন দুটি।

সে উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিজেদের মতো করে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে তারা। মাঝে মধ্যে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ হলেও, সামগ্রিকভাবে এরা একত্রে এবং সমঝোতা করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

জাতিকে রক্ষা করার নামে রোহিঙ্গাদেরকে সংগঠিত করতে প্রতিটি ক্যাম্পে অবস্থিত মসজিদগুলোর ইমামদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ক্যাম্প ভিত্তিক ‘ইমাম কমিটি’। একইসাথে ক্যাম্পের সব ব্লকের মাঝিদের নিয়ে করা হয়েছে ক্যাম্প ভিত্তিক মাঝি কমিটি।

প্রতি ক্যাম্পের ইমাম কমিটি এবং মাঝি কমিটিতে নির্বাচিত করা হয়েছে একজন করে চেয়ারম্যান। নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা সরাসরি আরসা এবং আল ইয়াকিংয়ের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

ইমাম কমিটির বিশেষ দায়িত্ব হল রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের মগজ ধোলাই করা।
৮ থেকে ১০ বছরের রোহিঙ্গা শিশুদের মক্তবে ইসলামি শিক্ষা দেন মসজিদের ইমামেরা। মূলতঃ এ পর্যায়ে শিশুদেরকে তাদের ভবিষ্যতের জন্য "বিশেষ" শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। তাদের জানানো হচ্ছে, বয়স ১৮থেকে ২০ বছর হলে নিজের "কওম" অর্থাৎ জাতির জন্য যুদ্ধ করতে হবে।
সূত্র জানায়, ১৫/১৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা কিশোরদেরকে অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে নির্বাচিত সাহসী কিশোরদেরকে রাতের গভীরে ক্যাম্পের ভেতরে নির্দিষ্ট স্থানে দেয়া হচ্ছে অস্ত্রসহ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিশেষ স্থানে আরসা এবং আল ইয়াকিং অস্ত্র মজুদ করেছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সূত্র জানিয়েছে,সবচেয়ে বেশী অস্ত্রের মজুদ আছে টেকনাফের নয়াপাড়ার রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পে। এছাড়া ক্যাম্প ২০ এবং ক্যাম্প ৪-এর এক্সটেনশ অংশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, ক্যাম্পভিত্তিক নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে রোহিঙ্গা ইমাম ও মুরুব্বিদের নিয়ে । বিচার, সালিশ এবং শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মতানুসারে শরীয়তের বিধান প্রয়োগ করা হয় বলে দাবি তাদের। তবে ক্যাম্পভিত্তিক নিজস্ব এই বিচার ব্যবস্থা জঙ্গি সংগঠন আরসা এবং আল ইয়াকিংয়ের আদর্শ অনুযায়ীই গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ২৭টি ক্যাম্প রাতের বেলায় ভিন্নরুপ ধারণ করে। মধ্যরাতে কিছু রোহিঙ্গার গতিবিধি থাকে রহস্যজনক।

এদিকে ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্র সংগ্রহ এবং মজুদ , প্রশিক্ষণ, নেটওয়ার্ক ও নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী পরিচালনাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রনে বিশাল অংকের তহবিল গঠনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওই দুই সংগঠন। ইয়াবা ব্যবসা, নারী পাচার ও অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে গঠন করা হচ্ছে তহবিল।

ক্যাম্প ১৭ ও ক্যাম্প ২০ এক্সটেনশনে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘আমাদের করার কিছুই নাই। আমরা মহিলারা ঘরের বাইরে যেতে পারিনা। আমাদের যেভাবে চালায়, সেভাবেই চলি। আমরা কখনোই ছেলে মানুষের মুখের উপর কথা বলতে পারি না। এমনিতেই আমরা আমাদের জাতি ও ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী ঘরের কর্তাদের উপর কথা বলতে পারি না। আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে তারা কীভাবে ব্যবহার করছে আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমরা কিছুই জানি না’।

সুদূরপ্রসারী লক্ষে রোহিঙ্গাদেরকে অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন সান নিউজকে বলেন, ‘অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমার কিছু জানা নেই। তবে অভিযোগ যেহেতু উঠেছে সেহেতু সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক দৃষ্টি রাখতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা বড় অংশ কিশোর এবং যুবক। তাদের শিক্ষার কোন সুযোগ নেই, কোন কাজ নেই। অলস কর্মহীন হয়ে বসে আছে। তাদেরকে খুব সহজেই ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে যে কোন আন্তর্জাতি সন্ত্রাসীর।’ রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘদিন করা করা এই মানবাধিকারকর্মী আবারও জোড়ালো সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় না থাকলে এখনও পর্যন্ত যাটেনি, তা ঘটতে খুব বেশি সময় লাগবে না’।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয়টি পুরোপুরিই ভিত্তিহীন। কিছু রোহিঙ্গা হয়তো রাতের অন্ধকারে পালিয়ে কখনও কখনও মিয়ানমারে যায় মাদকদ্রব্য আনা নেয়ার কাজে, কেউ বা আবার যায় তাদের রেখে আসা সম্পত্তি দেখাশুনা করতে। কিন্তু তাদের কাউকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যেই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার মত কোন ঘটনাই এখন পর্যন্ত ঘটেনি’।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা: মির্জা ফখরুলের কুশপুত্তলিকা দাহ

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে (সদর–গজারিয়া) মনোনয়ন ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির মহাসচিব...

ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন পেলেন খন্দকার নাসিরুল ইসলাম

ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাব...

কুষ্টিয়ায় সারের ডিলারসহ ৩ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সার বিক্রি না করে অবৈধভাবে মজুদ, মেয়াদোত্তীর্ণ কৃষি ওষু...

সীমান্তের বসবাসরত নাগরিকদের সাথে কুষ্টিয়া বিজিবির মতবিনিময়

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (৪৭ বিজিবি) কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ পৃথক দুটি বিও...

গজারিয়ায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুই বাড়ি পুড়ে ছাই

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুটি বসতবাড়ি প...

ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন পেলেন খন্দকার নাসিরুল ইসলাম

ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাব...

ঝালকাঠিতে আন্তঃকলেজ ফুটবলে শের-ই বাংলা ফজলুল হক কলেজ চ্যাম্পিয়ন

"এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই" শ্লোগানে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঝালকা...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা: মির্জা ফখরুলের কুশপুত্তলিকা দাহ

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে (সদর–গজারিয়া) মনোনয়ন ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির মহাসচিব...

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ রয়েছে: জাতিসংঘ মহাসচিব

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধাপ...

 শুধু খালেদা জিয়া এসএসএফের সুবিধা পাবেন, পরিবারের অন্য সদস্যরা নয়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেই শুধু এসএসএফের নির...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা