আন্তর্জাতিক
ভারতীয় সাংবাদিকের বিশ্লেষণ

অর্থনীতি-জীবনমানে ভারতকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ 

সান নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক বিরূপ মন্তব্য করে যাচ্ছে ভারতের বিজেপি সরকারের কোন কোন মন্ত্রী কিংবা দলীয় শীর্ষ নেতারা। সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ভারত যদি নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে, এই অর্ধেক বাংলাদেশি ভারত চলে আসবে। এর আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুসলমান অভিবাসীদের উইপোকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। দেশটির বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং আসামের এনআরসি বিতর্কে বারবার ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসীদের’ কথা তুলে আনছেন তারা। কিন্তু এসব কিছুর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক, উপস্থাপক ও লেখক করণ থাপর মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতীয় নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে উইপোকা হয়ে বেঁচে থাকা ভালো।’ এক নিবন্ধে তিনি তুলে ধরেছেন অর্থনীতি এবং জীবনমানসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে কীভাবে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। করন থাপর কাজ করেছেন সিএনএন-আইবিএন ও ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি দ্য ওয়ার’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শনিবার হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত করণ থাপরের সেই লেখাটি তুলে ধরা হল সান নিউজের পাঠকদের জন্য.........


“সত্যি বলতে কি, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আমি অভিযোগের আঙুল প্রথমে হেনরি কিসিঞ্জারের প্রতি তুলতে চাই। ১৯৭০ এর দশকে এই মার্কিন কূটনীতিবিদ বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ ভিক্ষাকারী তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উল্লেখ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী ওই সময়ে, অবশ্য বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমনটাই ছিল। সে সময়ের টেলিভিশন সংবাদে বাংলাদেশে বন্যা দুর্গত অঞ্চলের ছবিও ছিল নিত্য-নৈমেত্তিক ঘটনা। তাই কিসিঞ্জারের সংজ্ঞা সে যাত্রা টিকে গেল।

আজকের বাংলাদেশ অবশ্য ভিন্ন এক দেশ। বাংলাদেশের ব্যাপারে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে সময় লাগলেও, আমি অন্তত এই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। আর আমার মতো ভারতবাসীরও বাংলাদেশ নিয়ে সেই ৭০’এর দশকের আদ্যিকালের ধারণা রাখা উচিত নয়। অথচ গত সপ্তাহে আমাদের উপস্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জি কে রেড্ডি সেই কাজটাই করেছেন।

নিজের বর্ণবাদী মনোভাব চেপে না রেখেই এই মন্ত্রী বলেছেন, নাগরিকত্ব দিলে নাকি অর্ধেক বাংলাদেশের মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসবেন।

এই বক্তব্য শুধু প্রচলিত কূটনৈতিক শালীনতা লঙ্ঘন তাই নয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের সকল মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে যে কিছুই জানেন না এটা তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। নাহলে কি আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা দেয়া চলে। অন্তত বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা দেয়া পরিহাসেরই নামান্তর।

বাংলাদেশ আজ জীবনমান আর মানব উন্নয়ন সূচকের সব কয়টিতেই ভারতের চাইতে অনেক ভালো অবস্থানে। খোলা চোখে তাকালে প্রথমেই নজরে আসে বাংলাদেশের বিপুল মোট উৎপাদন প্রবৃদ্ধি, যা এখন ঈর্ষণীয় ৮ শতাংশের ঘরে। আর ভারত তার প্রবৃদ্ধি বিজেপির শাসনামলেই ৫ শতাংশে নেমে আসতে দেখেছে।

ভারতে এখন স্তিমিত হয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগ আকর্ষণের চাপে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন প্রকৃত বাণিজ্যিক করের আওতা নামিয়ে আনছেন ১৫ শতাংশে। বিনিয়োগ নিয়ে আমাদের অবস্থা টালমাটাল হলেও, বাংলাদেশ কিন্তু বিনিয়োগ প্রবাহ ধরে রেখেছে।

আপনি লন্ডনে যান কি নিউইয়র্কে, সেখানের হাই স্ট্রিটগুলোতে আপনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক দেখতে পাবেন। সেই তুলনায় লুধিয়ানা বা ত্রিপুরায় উৎপাদিত (ভারতীয়) পোশাক খুব একটা চোখে পড়ে কি? আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ডাবল ডিজিট আকারে বেড়েছে। একই সময়ে রপ্তানি বাজারে ভারত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।

তবে শুধু অর্থনীতির উদাহরণ দিলেই তো একটি দেশ সম্পর্কে সব বলা যায় না। মানব উন্নয়ন প্রকৃত উন্নতির প্রধান শর্ত। সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার।

বাংলাদেশিদের নারী ও পুরুষদের গড় আয়ু এখন যথাক্রমে ৭৪ এবং ৭১ বছর। ভারতে যা মাত্র ৭০ এবং ৬৭ বছর।

এক মাসের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ভারতে প্রতি হাজারে ২২ দশমিক ৭৩টি। বাংলাদেশে যা মাত্র ১৭ দশমিক ১২টি। এক বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহারেও ভারত এগিয়ে। ভারতে এই হার প্রতি হাজারে ২৯ দশমিক ১৪ এবং বাংলাদেশে ২৫ দশমিক ১৪। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুতে ভারতীয় সংখ্যা ৩৮ দশমিক ৬৯ আর বাংলাদেশে ৩০ দশমিক ১৬।

এসব কিছুর পরেও আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলছেন বাংলাদেশ নাকি ভারতীয় নাগরিকত্ব দিলে খালি হয়ে যাবে। পরিসংখ্যান আরও অসংখ্য আছে। নারী শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা ইত্যাদি দিক থেকে উন্নতিতে বাংলাদেশ আজ বহু যোজন সামনে।

তাইতো দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের অনেক নাগরিক এখন বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। একথার সত্যতা সব ভারতীয়কে অনুধাবন করতে হবে।

বিজেপি পাণ্ডাদের প্রিয় গরু খেতে কোনো বাংলাদেশি ভারতে আসে না, বরং ভারতীয়রাই সেদেশে যায়। কারণ তারা জানেন, ভারতে বৈধ নাগরিক হলেও জীবনের কোনো মূল্য নেই। তার চাইতে বরং বাংলাদেশে অবৈধ উইপোকা হয়েই বেঁচে থাকা ভালো। ”

মূল লেখাটির লিংক নিচে দেয়া হল-
(https://tbsnews.net/economy/how-bangladesh-outperforming-india-45031?fbclid=IwAR2Wh_bCTKFTZK8Uz_fJSF_wDnhZCsTMg4wkmIEr5yHADPMmwe93N__-xMw)

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হেমন্তের মোড়ে আত্মীয...

সাজেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা 

জেলা প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটির সাজেকের সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ...

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি কাপ্তাই হ্রদে

জেলা প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে কাপ্তাই হ্রদে ম...

এফডিসির ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রিয়াজের

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা