ছবি: সংগৃহীত
বাণিজ্য

প্রাণের ৩৫৬ কোটি টাকার অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনুমোদনহীন পণ্য রপ্তানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাণ ডেইরি ৩৫৬ কোটি টাকার নগদ সহায়তা তুলে নিয়েছে।

চার অর্থবছরে (২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০) তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এভাবে নগদ সহায়তা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো আপত্তি তোলা হয়নি। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অধীনস্থ সিভিল অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় গুরুতর এ অনিয়ম ধরা পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তুলে নেওয়া অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাণ ডেইরি দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি না করে মুড়ি, চানাচুর, জুস, বিস্কুট, ড্রাই কেক, ললিপপের বিপরীতে নগদ সহায়তা নিয়েছে। অথচ ট্রেড লাইসেন্স ও বিডার নিবন্ধন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপাদনকারী। নিবন্ধনের শর্ত ভঙ্গ করায় প্রাণ ডেইরি নগদ সহায়তা প্রাপ্য নয়।

প্রসঙ্গত, প্রাণ ডেইরি ২০০২ সালে শতভাগ স্থানীয় দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য (মিল্ক প্যাক, বাটার ও ঘি) উৎপাদনকারী শিল্প হিসাবে বিডা (তৎকালীন বিনিয়োগ বোর্ড) থেকে অনুমোদন নেয়। পরে ২০২০ সালের ৯ জুন প্রতিষ্ঠানের ধরন পরিবর্তন করে ৬৬ শতাংশ স্থানীয় ও ৩৪ শতাংশ রপ্তানিমুখী করা হয়।

একইসাথে ডেইরি পণ্যের পাশাপাশি জুস, কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস ও অন্য পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন নেয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নেয়।

আহার ও প্রাণ ব্র্যান্ডের মুড়ি বানায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বঙ্গ মিলার লিমিটেড। বাদাম ভাজা, ডাল ভাজা, ঝালমুড়ি, চানাচুর বানায় নরসিংদীর পলাশের প্রাণ ফুড লিমিটেড। অলটাইম ব্র্যান্ডের ড্রাই কেক, কেক, লাচ্ছি বানায় হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো লিমিটেড। এ কারখানা হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে। ফ্রুটো আমের জুস, লিচি ড্রিংকস বানায় ময়মনসিংহ অ্যাগ্রো লিমিডেট। এ কারখানাটি গাজীপুরের কালীগঞ্জে। প্রাণ ম্যাঙ্গু জুস বানায় নরসিংদীর অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড।

এছাড়াও হানিকম্ব রুটি বানায় প্রাণ ডেইরি লিমিটেড। অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত মুড়ি, চানাচুর, ললিপপ ও জুস বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে প্রাণ ডেইরির নামে। নিয়ম অনুযায়ী, শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পণ্য বা বিপণনের আগে সরকারের একাধিক দপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসার ধরন, কী ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়। একই সঙ্গে শিল্প স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়।

এসব সংস্থার অনুমোদন ছাড়া যেমন কোনো পণ্য উৎপাদন করা যায় না, তেমনই সেগুলো বাজারজাত করা যায় না। একই সঙ্গে এগুলো রপ্তানিরও সুযোগ নেই। কিন্তু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রাণ ডেইরি দুগ্ধজাত পণ্যের অনুমোদন নিয়ে মুড়ি, চানাচুর, জুস, বিস্কুট, ড্রাই কেক, ললিপপ রপ্তানি করেছে। একই সঙ্গে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার অর্থও নিয়েছে। আদৌ প্রাণ ডেইরিতে এসব পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এব্যাপারে সিভিল অডিট অধিদপ্তর প্রাণ ডেইরির বক্তব্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যেসব রপ্তানি অনুমোদনের কথা নিরীক্ষক (সিভিল অডিট অধিদপ্তর) উল্লেখ করেছে, সেগুলো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক শতকরা হার। সরকারের মূল উদ্দেশ্য দেশীয় পণ্য প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। বাংলাদেশি পণ্যের পরিচিতি বিশ্ববাজারে জোরদার করা। এতে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতি স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

প্রাণ ডেইরির বক্তব্যের ওপর নিরীক্ষক মন্তব্য করেছেন, প্রতিষ্ঠানটির জবাব স্বীকারোক্তিমূলক। সুতরাং রপ্তানি পণ্যের বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রাপ্য নয়। তাই নগদ সহায়তা বাবদ গৃহীত অর্থ আদায় করে তা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সুপারিশ করেন নিরীক্ষক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের প্রধান কামরুজ্জামান কামাল প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য হিসাবে নগদ সহায়তার অডিট আপত্তির বিষয়ে বিডা আয়োজিত একটি সভার কার্যবিবরণী পাঠান। গত ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রতিনিধিরা প্রাণ ডেইরি অডিট আপত্তিটি নিষ্পত্তিযোগ্য বলে মত দেন।

কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে, সিভিল অডিট অধিদপ্তর আপত্তি দেওয়ার পরপরই হাসান জুট মিল, প্রাইম পুষ্টি লিমিটেড, রানু অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেট এবং প্রাণ ডেইরি বিডার নিবন্ধনপত্রের ভূতাপেক্ষ সংশোধন চেয়ে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিডা এই সভার আয়োজন করে।

সভায় অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ায় রহস্যের জন্ম দিয়েছে। এমনকি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আপত্তিগুলো নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য বিডা নিবন্ধনপত্র ভূতাপেক্ষভাবে সংশোধন করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, প্রাণ-আরএফএল-এর নগদ সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে যে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে, তা নিষ্পত্তি হয়নি। পর্যালোচনা চলছে।

২০২১ সালের অডিট ইনস্পেকশন রিপোর্টে (এআইআর) মাত্র ১০টি ব্যাংকের ৩৭টি শাখা নিরীক্ষা করা হয়। এতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, জালিয়াতি ও কারসাজি করে ৭৫০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, অডিট অনেক সময়সাপেক্ষ কাজ। একটা নগদ সহায়তায় আপত্তি দিতে কয়েক হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্ট পর্যালোচনা করতে হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তা চূড়ান্ত করা হয়। অধিদপ্তরে লোকবল কম থাকায় ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের শাখা অডিট করা হয়ে থাকে। এ বছর ৩৭টি শাখা অডিট করা হয়েছে। আগামী বছর ৫০টি শাখা অডিটের পরিকল্পনা আছে।

সান নিউজ/এফএইচপি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে স্বর্ণের কারিগরকে কুপিয়ে জখম

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

নিজ্জর হত্যায় সন্দেহভাজন ৩ জন গ্রেফতার 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডায় বসবাসর...

বজ্রপাতের সময় করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক: চলমান তাপপ্রবাহ...

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত ১৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার ম...

ভালুকায় পানি ও স্যালাইন বিতরণ

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রচন্ড...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার (৫ মে) বেশ কিছু খেল...

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর ব...

শাহজালালে বন্ধ থাকবে ফ্লাইট ওঠানামা

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহজালাল আ...

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী পান্নার গণসংযোগ

রাজীব চৌধুরী, কেশবপুর : আসন্ন কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে...

লিফট কিনতে ফিনল্যান্ড গেলেন ঢাবির প্রো-ভিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিভিন্ন ভবনের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা