নাসরিন ফাতেমা আউয়াল
বাণিজ্য
নাসরিন ফাতেমা আউয়ালের ইন্টারভিউ

নারীদের আলাদা ব্যাংক চাই

দেশকে এগিয়ে নিতে নারীর উন্নয়ন জরুরি। নারীকে আনতে হবে অর্থনীতির মূলধারায়। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও নারীকে যুক্ত করার এখন সময় এসেছে। কিন্তু নারী সেই অর্থে এগিয়ে আসছেন না। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ নারীর জন্য ততোটা মসৃণ নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে টাকার প্রয়োজন। নারীর হাতে টাকা নেই। ইচ্ছে সত্ত্বেও অনেক নারী ব্যবসায় আসতে পারছেন না। তাই নারীর জন্য আলাদা ব্যাংক চাই। সেখান থেকে নারী স্বল্প কিংবা বিনেসুদে ঋণ পাবেন। কথাগুলো বলেছেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি সান নিউজকে এক দীর্ঘ ইন্টারভিউ দেন। সেই ইন্টারভিউয়ে নারীর উন্নয়ন-অগ্রগতি, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বলেছেন অনেক কথা। সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, ফারুক আহমাদ আরিফ, ফজলুল হক পাভেল ও নৌশিন আহমেদ মনিরা।

নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী করতে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করছেন। গড়েছেন নানান সংগঠন, দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ, তার স্বপ্ন নারীদের জন্য হবে আলাদা একটি ব্যাংক। সেখান থেকে খুব সহজেই ঋণ পাবেন উদ্যোক্তা নারীরা। সংসারের চাকায় ঘুরতে থাকা নারী একদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনেও দেবেন নেতৃত্ব।

নারীদের জন্য আলাদা ব্যাংক কেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরুষদের বড় একটি অংশ এখনও চায় না নারীরা বাইরে যাক, কাজ করুক। এতোটা মানসিকতার পরিবর্তন আমাদের দেশে হয়নি এখনো। তাই ২০০৫ সাল থেকে নারীদের জন্য একটি আলাদা ব্যাংকের কথা ভাবছি। নারী-পুরুষ সবাই এখানে কাজ করবে। কিন্তু একজন নারী সহজেই বলতে পারবেন, এটা আমাদের ব্যাংক। কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমি আমার সেবাটি পেতে পারি। আরেকটি সুবিধা হচ্ছে- নারীর কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে নানা তথ্য পাবেন। সেটি কিন্তু এখন তারা পাচ্ছেন না। নারী ব্যাংক হলে এটি সম্ভব হতে পারে। নারী ব্যাংক তো ভারতসহ অনেক দেশেই আছে।

নাসরিন ফাতেমা আউয়াল নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে বলেন, গ্রামীণ নারীরা নকশী কাঁথা সেলাই করছেন, আর তাদের স্বামীরা সেগুলো বাজারে বিক্রি করে ব্যাংকে টাকা রাখছে। নারী আয় করলেও কখনও তাদের মূল্যায়ন করা হয় না। সব করছে পুরুষ। এভাবেই মূল্যায়ন হচ্ছে। এটি কাম্য নয়। পুরুষেরও জানা উচিত, তাকেও মূল্যায়নটা করতে হবে। নারীর পণ্য পুরুষের পরিচয়ে বিক্রি হচ্ছে। নারীর স্বকীয়তা হারিয়ে যাচ্ছে।

বৃহৎশিল্পগুলোর সাথে সমানতালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলো কি টিকে থাকতে পারবে? এই প্রশ্নে নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, বৃহৎশিল্পগুলোর সাথে হয়ত সেভাবে পেরে উঠবে না। কিন্তু নারীদেরকে যদি সেসব শিল্পের উপাদানগুলো দেওয়া হয় তবে পারবে। আর গার্মেন্টসে তো নারীরা কাজ করছে। সেখানে কিন্তু বেশির ভাগই নারী। এগুলো যদি নারীরা তৈরি না করতো তবে বাংলাদেশ কিন্তু এতো উপরে যেতে পারতো না।

তিনি বলেন, আমি যেখানেই যাই সেখানেই ক্ষুদ্রশিল্পের মহিলাদের নিয়ে কাজ করি। সারাদেশেই আমাদের প্রতিনিধি আছে, মাঠ পর্যায়ে অনেকেই কাজ করছে তাদের এখানে পৌঁছে দিতে। আমাকে যখনই কেউ এ ব্যাপারে বলে তখন আমি ওয়েবের ঠিকানাটা বলে দেই। কিংবা আমাদের চেম্বারে গিয়েও তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা যে ঋণ নেন না কেন, তা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতেই পুঁজি শেষ হয়ে যায়। এই বিষয়টা ঋণদাতা সংস্থা ও সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। সেটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। কিন্তু কোনো উপায় পাচ্ছি না সমাধানের। আগামী বাজেটে করমুক্ত ঋণ ও আয়সীমা নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। নারীদের স্বাবলম্বী করতে এর বিকল্প নেই। এটি করতে হবে।

নাসরিন ফাতেমা আউয়ালের জন্ম মুন্সীগঞ্জে। মেট্রিকে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যায় তার। সেই অল্প বয়সেই সামলেছেন গোটা পরিবার। তিনি বলেন, আমার শ্বশুররা ছিলেন পাঁচ ভাই। সবাই একান্নবর্তী পরিবারেই বাস করতেন। আমি ভেবেছি এটাই আমার পরিবার। তখন আমার এতো কম বয়স। আমি কিছু বুঝতেই পারিনি যে, এর বাইরেও আমার কিছু করার আছে। এরপর ১৯৭৬ সালে হার্ভার্ড লেহমান হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ম্যানহাটন ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড থেকে একটি কোর্স সম্পন্ন করি আমি।

এরপর আমি দেশে কিছু করার চেষ্টা করলাম। আমি বলবো আমি নিজেই করেছি এসব। প্রথমেই আমি জনসন এন্ড জনসনের সাথে কাজ করা শুরু করলাম। এরপর নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ১৯৯৭ সালে বাড়ির সামনে গুলশান অ্যাভিনিউয়ে স্ট্রবেরি স্ট্রিট নামে একটি কসমেটিকের আউটলেট দেই। অল্প করে যাই হোক টুকটাক আয় হচ্ছিলো।

২০০০ সালে উইমেনস এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) নামে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার জন্য একটি প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করি। তিনিই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এখন সারাদেশেই এর কার্যক্রম রয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির জন্য আমরা ‘সেঁউতি’ নামে একটি আউটলেট প্রতিষ্ঠা করি। সেখানে নারী উদ্যোক্তারা তাদের তৈরি পণ্য পাঠান। ‘সেঁউতি’ তা বিক্রি করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে।

নাসরিন ফাতেমা আউয়াল একজন সফল উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একজন পথপ্রদর্শক। সমাজের প্রতিটি খাতে নারীদেরকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান তিনি। নারী উদ্যোক্তাদের নানা প্রতিকূল পরিবেশকে সম্ভাবনায় রুপ দিতে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছেন তিনি।

মাল্টিমোড গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এমএফ কনজিউমার লিমিটেড, এনএফএম লিমিটেড, লাল তীর লাইভস্টক লিমিটেড, লাল তীর সিড লিমিটেডসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। বাংলাদেশে তিনি মঙ্গোলিয়ার অনারারি কনসাল জেনারেল।

সান নিউজ/এফএআর/এফএচপি/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

প্রেসক্লাবের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ উদ্বোধন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ব...

মিষ্টি জান্নাতকে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানহানির মতো মন...

আনহার আহমেদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেছেন

নিজস্ব প্রতিনিধি: ইউনিভার্সিটি অফ...

বড়াইগ্রামে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা

নাটোর প্রতিনিধি: বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাজারের বনফুল সুইটসের মা...

আনারের হত্যাকারীরা চিহ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে যারা হত্যা করেছ...

এনএসআই পরিচয়ে প্রতারণা, আটক ২

জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জাতীয় নি...

ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ৫ যাত্রী আহত

জেলা প্রতিনিধি: ডিশ লাইনের তারের সাথে জড়িয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে...

ছোট-বড় দল বলে কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান টি-টোয়ে...

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিক...

নেত্রকোণায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১

জেলা প্রতিনিধি: নেত্রকোণা জেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় মাসরুল মি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা