নিজস্ব প্রতিনিধি: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এতে এপিবিএন’র ৩ সদস্যসহ ৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ৬ জনকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন সাজা।
দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্য প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণাকালে প্রধান ২ অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন: ভাসানচর পৌঁছাল আরও ১২৮৭ রোহিঙ্গা
এর আগে সকালে আদালতে হাজির করা হয় মামলায় অভিযুক্ত বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার ও লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি, বাদী পক্ষের আইনজীবী ও আসামি পক্ষের কৌঁসুলিসহ বাদী ও বিবাদীদের স্বজন এবং সংশ্লিষ্টরা এজলাসে উপস্থিত রয়েছেন। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারপাশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
নির্মম ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হচ্ছে এ মামলার। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে মামলাটির পরবর্তী কাজ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে এপিবিএন চেকপোস্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা দায়ের করে। একই বছরের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের নয় সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন ফেরদৌস।
মামলা চারটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। একই দিন পুলিশের দায়ের করা মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে সাংবাদিকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সঙ্গে পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে মামলা থেকে সিনহার সহযোগী সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেন।
২০২১ সালের ২৪ জুন পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দিন ধার্য করেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানিতে বিলম্ব হয়।
মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
সাননিউজ/জেএস