নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় এক গৃহবধূ ও রিকশা চালকসহ তিনজনে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঘটনাগুলো ঘটে। কামরাঙ্গীরচরে উজ্জ্বল আকন (২৭) সেনেটারী মিস্ত্রি। মুগদায় রিকশাচালক মো. মাসুম (৩০) ও যাত্রাবাড়ীর রায়ের বাগে সুমি আক্তার মারা গেছেন।
ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পৃথক তিন জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর রহমত বাগে একটি বাসায় উজ্জ্বল আকন (২৭) সেনেটারী মিস্ত্রি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এর সত্যতা নিশ্চিত করেন কামরাঙ্গীরচর থানার উপ-পরিদর্শক এসআই কমলেশ চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, পারিবারিক কলহে স্ত্রীর সাথে অভিমান করে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত তিনটায় ভাড়া বাসায় শোবার ঘরে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। মৃত উজ্জল পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ভিকাখালি গ্রামের মৃত কাদের আকনের ছেলে।
পরে খবর পেয়ে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
মৃতের বড় ভাই, সরোয়ার আকন জানান, যতটুকু জানতে পেরেছি ভাইয়ের নাকি এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল তারই জের ধরে স্ত্রী রুমা বেগম এর সাথে ঝগড়া, অভিমানে আত্মহত্যা করেছে।
অপর দিকে মুগদায় মো. মাসুম (৩০) নামের এক রিকশাচালক সুদের টাকা নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত মাসুম ঢাকার বংশাল আলুবাজার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত হাসেম উদ্দিনের ছেলে। ৩৭২ দক্ষিণ মান্ডায় পরিবারের সাথে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
মৃত মাসুমের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, মাসুম বেশ কিছুদিন আগে একজনের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিল। রিক্সা কিনবে ও কাঁচামাল ব্যবসা করবে বলে। সেই টাকার সুদ-আসলের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা হয়ে যায় এবং তারা টাকার জন্য চাপ দেয় সে কারণে হতাশাগ্রস্থ হয়ে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মুগদা মান্ডা ভাড়া বাসায় দরজা বন্ধ করে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। সেসময়ে আমি পাশেই আমার মায়ের বাসায় ছিলাম ।
তিনি আরও জানান, পরে বাড়িয়ালার থেকে খবর পাই। তারপর বাড়িয়ালার সহযোগিতায় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এর সত্যতা নিশ্চিত করেন, মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক আলি আহমেদ। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে জানা যায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে বলেও জানান তিনি।
অপর দিকে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগে সুমি আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূ পারিবারিক কলহের জেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃতা সুমি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সাইচা গ্রামের থাই গ্লাস মিস্ত্রি মো. সুমনের স্ত্রী। একই এলাকার মৃত আসাদুল্লাহের মেয়ে সুমি। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল ছোট। এছাড়া দুই কন্যা সন্তানের জননীও ছিলেন তিনি।
মৃতের বড় বোন স্বপ্না আক্তার জানান, পাঁচ বছর বিবাহ বিবাহের পর থেকেই তাকে যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করতো এর আগেও বছর খানেক আগে তার স্বামী সুমন নিজে তাকে মেরে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিলো পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর সুস্থ হয়। গত পরশুদিন রাতে তাকে ব্যাপক মারধর করে সেই নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে গলায় ফাঁস দেয়।
পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ খবর পেয়ে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক এসআই জুয়েল হোসেন খান। তিনি বলেন, পারিবারিক কলহে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে ও তদন্ত সাপেক্ষে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।
সান নিউজ/এনএএম