নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের ফাঁসি এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবনের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এ রায় দেন।
রায়ের পর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত বাকি আসামিদেরও মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন নিহত আবরারের বাবা-মা।
রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। একইসাথে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান তিনি। দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা।
রায় শোনার পর কুষ্টিয়ার বাড়িতে অঝোরে কাঁদছেন তার মা রোকেয়া খাতুন। প্রতিবেশীরা তাকে কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছেন না। সব আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের হোতা অমিত সাহ হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে না থাকলেও মোবাইলের মাধ্যমে সে হত্যাকাণ্ডের সব পরিকল্পনা করে। অথচ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। কীভাবে সে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাদ যায় আমি বুঝতে পারলাম না। আপনারাও ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে দেখেছেন হত্যাকাণ্ডে ২৫ আসামি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো। কীভাবে ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড থেকে বাদ গেলো।
আবরারের মা বলেন, আববার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী অমিত সাহার মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
রায় ঘোষণার সময় ২২ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।
ফাঁদির আদেশপ্রাপ্তরা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মাজেদুর রহমান মাজেদ, সদস্য মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শাদাত হোসেন ওরফে নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান মিজান, মাহামুদ সেতু, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, এহতেশামুল রাব্বি তানিম (পলাতক), মাহমুদুল জিসান (পলাতক), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (পলাতক)।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, আকাশ হোসেন, মোয়াজ আবু হোরায়রা, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না।
প্রসঙ্গত, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় ওই দিনই হলের গেস্টরুমে আসামিরা সভা করে বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র আবরারকে হত্যা করে।
স্ট্যাটাসটি দেয়ার সময় আবরার কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরদিন রোববার বিকেলে বাড়ি থেকে বুয়েটে তার নিজ হলে ফিরলে পরদিন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
সান নিউজ/এফএইচপি