প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাতীয়

বাংলাদেশ কখনও ব্যর্থ হতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমানতালে চলতে পারে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত বাংলাদেশ কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। জাতির পিতার আদর্শে গড়ে তোলা এ অগ্রযাত্রা যেন কোনোভাবেই ব্যহত না হয়।

রোববার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর (শহীদ) সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পরে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। যদি না করে তাহলে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধ করতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র কোথায় থেকে আসবে, শরণার্থীরা আশ্রয় কীভাবে পাবে— প্রতিটি পরিকল্পনা সুপরিকল্পিতভাবে তিনি করে রেখেছিলেন।

যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করতো তাহলে হয়তো আমরা বিনা যুদ্ধেই স্বাধীন হতে পারতাম। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা সেটা চায়নি। তারা যে যুদ্ধটা চাপিয়ে দিয়েছিল, গণহত্যা শুরু করেছিল, গ্রামের পর গ্রাম চালিয়ে দিয়েছে, মা-বোনের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে এবং যেভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে চেয়েছিল— তাদের কথাই ছিল আমরা মাটি চাই, মানুষ চাই না।

এই নীতি নিয়ে তারা আমাদের ওপর গণহত্যা চালায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা বেড়িয়ে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। সেই সঙ্গে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতাসহ সাধারণ মানুষ যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে যুদ্ধ একটা জনযুদ্ধ এবং প্রত্যেক মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের মা-বোনেরা মুক্তিযুদ্ধে পাশে থাকে। তারাও ট্রেনিং নেয়, তারাও কাজ করে।

দেশের ভেতরে যেহেতু গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, গেরিলা যোদ্ধারা যখন বিভিন্ন অপারেশনে আসে তাদের আশ্রয় দেওয়া, অস্ত্র রাখাসহ সব রকমের সহযোগিতা করেছে। যুদ্ধ চলাকালে ২১ নভেম্বর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় ভারতীয় মিত্র বাহিনী। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর তারা আত্মসমর্পন করে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর সেই ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। সব থেকে দুঃখের বিষয় হলো, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের মানুষ সব কিছু ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে এমন একটা সময় এসেছিল যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতেই ভয় পেত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে একটা মনগড়া ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি জানি না ঠিক, পৃথিবীর কোনো দেশে কখনো নিজেদের বিজয়গাথা বিকৃত করা হয়!

এটা পৃথিবীর কোনো দেশে করা হয় না। সেই ধরনের কাজ আমাদের দেশে করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ৭৫-এ যখন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়, আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বিদেশে ছিলাম। সে জন্য আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম কিন্তু আমার পরিবারের কেউ বেঁচে থাকেনি। আমাদের পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা যারা তাদেরও অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর আমি আর রেহানা বিদেশে থাকি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের রেফিউজি হিসেবেই থাকতে হয়েছে। নিজেদের নাম-পরিচয়টাও আমরা দিতে পারতাম না। যারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা চায়নি আমরা নিজেদের পরিচয় দেই। তাদের দেওয়া নাম বলেই আমাদের থাকতে হয়েছে।

সেই শোক-ব্যথা নিয়েও সব সময় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম একদিন বাংলাদেশে ফিরে যাব, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। বাংলাদেশের মানুষকে দুঃখ-যাতনা থেকে মুক্তি দেবো। বাংলাদেশ যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর, সেই হাসি এক দিন আমরা ফোটাবো।

সে চিন্তাই ছিল শক্তি। তা ছাড়া, আমার মতো যারা আপনজন হারায় তাদের পক্ষে কাজ করা খুবই কঠিন। এই সত্যি জেনেছিলাম, একটা আদর্শের জন্য আমার বাবা-মা জীবন দিয়েছে। ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে, লাখো মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছে। গণহত্যার শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। লাখো শহীদের রক্ত কখনো ব্যর্থ হতে পারে না এবং ব্যর্থ হতে আমরা দেবো না। মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রতিটি পরিবার যারা মানবেতর কষ্ট করছে, যারা এক সময় নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পেত—আমি সরকারে আসার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করি। কারণ তারা নিজের জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

পরিবার-পরিজন সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তারা বাংলার মানুষকে মুক্ত করার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছে। তাদের সন্মান দেওয়া আমাদের কর্তব্য বলে আমি মনে করি। দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করা, তাদের চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ছেলে-মেয়ে-পরিবার-পরিজনের জন্য চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছিলাম, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মান ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭৫'র ১৫ আগস্টের পরে তাদের সন্মান হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সন্মান আবার যেন ফিরে আসে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। চেষ্টা করেছি, যে যেখানেই থাকুক, যে দলেই থাকুক না কেন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই সম্মান পাবে।

জাতির পিতা চেয়েছিলেন, এ দেশের মানুষ যেন সুন্দর জীবন পায়। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ৮ বছর পরে আবার যখন ক্ষমতায় আসি, তখন থেকে আবার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করি। আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা। স্বাধীনতার চেতনা, আদর্শ এবং জাতির পিতা যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে গড়ে তোলা।

তিনি আরও বলেন, ৭৪ সালে জাতির পিতা প্রতিরক্ষা নীতিমালা করে গিয়েছিলেন তার ভিত্তিতে আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করেছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ে আমরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যাদের জন্য জাতির পিতা সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। সে জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করছি।

তৃণমূলের মানুষ যেন এর সুফল পায় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। জাতির পিতা একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। অনেকের প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশে তো কিছু নেই, কীভাবে আপনি গড়ে তুলবেন। তিনি তখন একটা কথা বলেছিলেন, দেশ যখন আমাদের আছে, মাটি যখন আমাদের আছে, বাংলাদেশে সোনার মানুষ যখন আছে, তখন আমরা সবই পাব। যদি আমরা সোনার ছেলে তৈরি করতে পারি, তাহলে ইনশাল্লাহ স্বপ্নের সোনার বাংলা এক দিন অবশ্যই হবে। আমি হয়তো দেখে যেতে পারবো না কিন্তু তা হবে।

আমাদের যে গৌরব ১৯৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে পেয়েছিলাম, যে গৌরব বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে আমরা আবার সেই গৌরব ফিরিয়ে এনে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়ন করবো। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন, তার আদর্শ অনুসরণ করে আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি।

করোনার মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমি বলবো, আমাদের প্রতিটি পর্যায়ের মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো দুর্বিপাক আসুক না কেন তা মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। আমরা প্রতিটি বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।

আজ এটুকু দাবি করতে পারি, আন্তর্জাতিক যে কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমান তালে পা মিলিয়ে চলতে পারে সে সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। লাখো শহীদের বিনিময়ে আমরা যে অর্জন করেছি সেটা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি, বলেন শেখ হাসিনা।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূঞাপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ফিরোজ চৌধুরী 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: ২য় ধাপে...

জেলা প্রশাসকের গাড়ি ভাংচুর, যুবক আটক

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

লক্ষ্মীপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে প্রার্থী আশরাফুল 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে গণসং...

দৌলতখানে ১৩ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল

দৌলতখান প্রতিনিধি: ভোলার দৌলতখান...

ভোলার ৩ উপজেলায় ৩৮ জনের মনোনয়ন দাখিল

ভোলা প্রতিনিধি: ২য় ধাপের উপজেলা প...

শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শ্যামব...

পরিবর্তন হচ্ছে গাইবান্ধার ৯ বিদ্যালয়ের নাম

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ধুতিচোরা, পা...

কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

৬ মাসের মাথায় ফের রেশম কারখানা বন্ধ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: লোকসানের কারণে ২ দশক বন্ধ থাকার পর বেসর...

দেশবিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশবিরোধী একটি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা