জাতীয়

বিপিসির থাবায় অস্থির দেশের জ্বালানি সরবরাহ খাত!

ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম:
দেশের জ্বলানি তেল সরবরাহে নিয়োজিত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি। যাদের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলছে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নগ্ন থাবা। বিপিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এসব কোম্পানি থেকে প্রতি মাসে সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

যা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন অয়েল কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যাদের অনেকে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে। যারা দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়াতে রাজি না, উল্টো তাদের দূর্নীতিবাজ বানিয়ে নানা কৌশলে শোকজ ও সাসপেন্ড এর মতো শাস্তির শিকার হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি এমন এক ঘটনা ঘটেছে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির বাঘাবাড়ি ডিপোতে। করোনা পরিস্থিতিতে মাসোহারা না পেয়ে বাঘাবাড়ি ডিপোর পদ্মা অয়েল কোম্পানির সহকারি মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ও ডিপো ইনচার্জ আসিফ মালিক, ডিপোর জুনিয়র অফিসার শেখ নাইমুল হাসান এবং যমুনা অয়েল কো¤পানির ডিপো ইনচার্জ সহকারি ব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বাঘাবাড়ি ডিপোতে কর্মরতরা জানান, গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিপিসির চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (বিপণন) মোরশেদ হোসেন আজাদ বাঘাবাড়ি ডিপোতে যান। এ সময় আসিফ মালিক ডিপোতে উপস্থিত ছিলেন না। করোনা আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। মোরশেদ হোসেন আজাদ এ অবস্থায় তেলে ভেজাল পাওয়ার কথা বলে তাদের বরখাস্তের হুমকি দেন।

পরবর্তিতে তিনি তিন কোম্পানির ডিপো কর্মকর্তাদের কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। যা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে তেলে ভেজাল পাওয়ার প্রমাণের কথা উল্লেখ করে তিন কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেন। সেই সূত্রে গত ১৭ মে তাদের সাসপেন্ড করার আদেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মোরশেদ হোসেন আজাদ নিজেই তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিপিসির চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (অপারেশন) জাহিদ হোসেন ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিজিএম (অপারেশন) গোলাম মোহাম্মদ আবদুল মুঈদ। কমিটি ২৫ ও ২৬ এপ্রিল বাঘাবাড়ি ডিপোতে যান। এ সময় তারা কোনো রকম নমুনা সংগ্রহ করেনি। ডিপোর কোনো ল্যাবে কোনো নমুনাও পরীক্ষা করেনি। অথচ তদন্ত প্রতিবেদনে সংগৃহীত নমুনা নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে পেট্রোলে কেরোসিন মেশানোর সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। যা অগ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান।

সূত্র মতে, মোরশেদ হোসেন আজাদসহ বিপিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির বিভিন্ন ডিপো থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা হাতিয়ে আসছেন। যা জোগাতে কতিপয় ডিপো কর্মকর্তা নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। যারা টাকা দিতে অপরাগ উল্টো তাদের দূর্নীতিবাজ বানিয়ে সাসপেন্ডসহ নানা শাস্তি দিয়ে ছাড়েন। তাঁর রোষানলে পড়ে গত কয়েকবছরে শতাধিক কর্মকর্তা সাসপেন্ডসহ নানা শাস্তি ভোগ করেছেন। আর এসব নিয়ে দেশের জ্বালানি সরবরাহ খাতে চরম অস্থিরতা চলছে।

সূত্র আরো জানায়, বিপিসির নগ্ন থাবায় এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরখাস্তের শিকার হয়েছেন। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের পদ দখলে রেখেছেন মোরশেদ হোসেন আজাদ। এ সুবাধে প্রতিষ্ঠানটিতে হরিলুট চলছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল ডিপোর কর্মকর্তারাও বিপিসির অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের মাসোহারা দেওয়ার কথা জানান।

পদ্মা অয়েল কো¤পানির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিপিসির চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা-মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানীর দেশব্যাপী ডিপো থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা আদায় করে আসছে। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে মাসোহারা দিতে না পারায় অনেক ডিপো কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করার হুমকি দিচ্ছে। ফলে প্রতিটি ডিপোর কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে।

একই কথা বলেছেন যমুনা অয়েল কো¤পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীও। তিনি বলেন, বিপিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার নগ্ন থাবায় জ্বালানী তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা চলছে। এতে কোম্পানীগুলোর দীর্ঘদিনের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (বিপণন) মোরশেদ হোসেন আজাদ মুঠোফোনে বলেন, মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ অমুলক। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানির দীর্ঘদিনের তেল চুরি, ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় এই ধরণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কোম্পানীগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছেও এ বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর সরাসরি যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ভ্যাসেলে ও বেসরকারি একটি রিফাইনারি থেকে ট্যাংক লরির মাধ্যমে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির দেশব্যাপী ডিপোতে জ্বালানি তেল আনা হয়। পরে ট্যাংকলরিতে ডিলারদের সরবরাহ করা হয়।

সান নিউজ/আইকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কর্মস্থলে না এসেও বেতন তোলেন শিক্ষক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি প্রকাশ

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল আস...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (১৮মে) বেশ কিছু খেল...

মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশ রক্ষায় অবৈধ চাই ধ্বংস 

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় মেঘনা নদী থ...

মুন্সীগঞ্জে ভাসমান মরদেহ উদ্ধার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মধ্য কোটগাঁ...

রেড কার্পেটে নিজের তৈরি পোশাকে ন্যান্সি

বিনোদন ডেস্ক: ভারতীয় ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার ন্যান্সি ত্যাগী। ক...

বিদেশি মদসহ গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ডেমরায়...

৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৬ষ্ঠ উপজেলা পরি...

আসাম ভাষা দিবস পালন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঐতিহাসিক (১৯ মে...

ভোলায় উপকূলজুড়ে কোস্টগার্ড মোতায়েন  

ভোলা প্রতিনিধি: আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা