নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারিতে তৈরি পোশাক খাতে চাকরি হারিয়েছেন দুই লাখ শ্রমিক। একসময় এই শ্রমিকরা জীবন বদলের স্বপ্ন নিয়ে শহরমুখী হয়েছিলেন; কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তাদের জীবন বাঁচানোই এখন কঠিন। সংকটে দেশের ছয় শিল্প এলাকার সাড়ে ছয় শতাধিক ছোট ছোট কারখানা বন্ধ ও লে-অফ হয়েছে। এরমধ্যে ৮৭টি কারখানায় ২৬ হাজার পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। অনেকের ক্ষেত্রেই আইন না মেনে ছাঁটাই করা হয়েছে। আবার অনেক শ্রমিক বকেয়া বেতন-ভাতা ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। তা ছাড়া করোনায় গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা এলাকার প্রায় ৮ হাজার কারখানা বন্ধ হয়েছে।
শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান ও ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজে (বিলস) এই চিত্র উঠে এসেছে।
বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন বলেন, লকডাউন চলাকালে মজুরি না পাওয়া,কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের কারণে পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হোন। এ ছাড়া করোনাকালে আবাসস্থল সংকট, বিনা নোটিশে শ্রমিক ছাঁটাইসহ নানা কারণে শ্রমিকদের টিকে থাকতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে সেসব কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের। তাঁরা বলেন, শ্রমিক ছাঁটাই হলেও সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তবে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া থেকে শুরু করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সবই বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে কাজ করানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কারখানায় তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকনেতারা।
সাড়ে ছয় শতাধিক কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বেপজার আওতাভুক্ত বস্ত্র ও পোশাক কারখানাও রয়েছে। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে গত বছর থেকে কারখানাগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। এখনও বন্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে অর্ডার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে দেরি হয়েছে। ব্যাংকগুলো এলসি বন্ধ করে দিয়েছে সব মিলিয়ে কারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে।
ফারুক হাসান বলেন, কারখানাগুলোকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই কারখানাগুলো যেন চালু থাকে। কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে, করোনা আরও বেশি ছড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা পড়বে। সব দিক বিবেচনায় কারখানা সচল রাখা ভালো একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিকেএমইএর প্রথম সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,বড় কারখানার চেয়ে ছোট কারখানা বেশি বন্ধ হয়েছে। আমরা কারখানাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিচ্ছি।
শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, ছয় শিল্প এলাকায় বর্তমানে মোট ৭ হাজার ৯৮২টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক খাত ভিত্তিক কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৭০১টি। এগুলো বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বেপজার আওতাভুক্ত বস্ত্র ও পোশাক কারখানা।
এর বাইরে আরও ৪ হাজার ৮১৬টি কারখানা রয়েছে, এগুলো চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতের কারখানা। সব মিলিয়ে ছয় শিল্প অঞ্চলে ৭ হাজার ৯৮২টির কারখানার মধ্যে গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া করোনায় এখন পর্যন্ত ৬৩৫টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
শিল্প পুলিশের ডিআইজি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কারখানাগুলোর বেশির ভাগই ছোট। বর্তমানে চালু থাকা কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছে।
উল্লেখ্য,গত বছরের ২৬ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি নামে অঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধির শর্ত মেনে পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু করোনার বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবে পড়ে রফতানিমুখী কারখানাগুলো। যে দেশগুলোর কার্যাদেশে কারখানাগুলোর উৎপাদন সচল ছিল, সেসব দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদায় পতন ঘটে। ফলে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকার কিছু কারখানা আর সচল হয়নি।
সাননিউজ/এমআর/আরআই