নিজস্ব প্রতিবেদক: অক্সিজেনের পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে সেক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা কখনও কখনও ৯০ বা তার নিচে নেমে যায়। অক্সিজেন দিলে তার মাত্রা ৯৯ পর্যন্ত থাকে। দিনে তাঁকে দুই থেকে চার লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। কয়েক দিন যদি এটি অব্যাহত থাকে, সে ক্ষেত্রে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট থাকবে না বলেই চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসকগণ আশা করছেন।
রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। সোমবার ভোরে শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসকগণ।
বুধবার বিকালে চিকিসক জানিয়েছেন, করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, সেরে ওঠার পর তারা কমবেশি সবাই কিছু না কিছু জটিলতায় বা ভোগেন যাকে ‘পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন’ বলা হয়ে থাকে। খালেদা জিয়ারও সেটিই হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছে। আগে থেকেই বেশ কিছু অসুস্থতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শারীরিক যে অবস্থা, তাতে আমরা আশা করছি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, করোনা–পরবর্তী কিছু স্বাভাবিক জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। তাঁর ফুসফুস থেকে তরলজাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। ফুসফুস থেকে বের করা ফ্লুইড পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অন্য কোনো রোগের জীবাণু পাওয়া যায়নি। তবে, তাঁর ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে।
সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠা কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এই জটিলতাগুলো স্বাভাবিক। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৬। তাই জটিলতাগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। কিছু নতুন ওষুধও দেয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়া গত ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন। গত ২৭ এপ্রিল তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত সোমাবার শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এখনো সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশ যেতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করছে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও সরকারের সদিচ্ছার ওপর বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (৫ মে) জিয়ারউর রহমান ফাউন্ডেশনের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (৪ মে) মির্জা ফখরুল ইসলাম গণমাধ্যকে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনও আবেদন করা হয়নি।
গত সোমবার (৩ মে) গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। ওইদিন থেকেই খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এই বিষয়ে আইনমন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতির বিষয়ে সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী মুক্তি দিয়েছে। এখন তাকে বিদেশে নিতে গেলে আদালতে যেতে হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন এবং তা দেশে সম্ভব কিনা তা সরকার বিবেচনা করে দেখবে।
গত ১০ই এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট হলেও ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ২৭শে এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
সাননিউজ/টিএস/