স্বাস্থ্য

নিম্নমানের মাস্ক নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের বিশেষ সুরক্ষাসামগ্রী দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে মাস্ক ও পিপিই উল্লেখযোগ্য।

এরমধ্যে ‘এন-৯৫’ নামের যে মাস্ক সর্বরাহ করা হয়েছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে এক জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে নকল ও নিম্নমানের এই মাস্কসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আর এ জন্য চিকিৎসক-নার্সদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য এটি অন্যতম কারণ বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

তারা বলছেন, যেটা সরবরাহ করা হয়েছে সেটা আসল ‘এন-৯৫’ মাস্ক নয়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের জন্য নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে করোনার রোগীর চিকিত্সায় আইসোলেশন ওয়ার্ড, আইসিইউ ও ল্যাবরেটরিতে যাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। মাস্কের ওপর শুধু ‘এন-৯৫’ সিল মারা হলেও এটা পুরোটাই নকল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেএমআই গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠানটি ‘এন-৯৫’-এর প্যাকেটে সাধারণ মাস্ক দিয়েছে ভুলবশত। এজন্য কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে জেএমআইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ঐ মাস্কের মান নিয়ে অভিযোগ আসে। মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে সিএমএসডিকে (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) বিষয়টি জানিয়েছিল। খুলনার একটি হাসপাতালও একই অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু কারোর কথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্ণপাত করেনি।

অবশেষে গোয়েন্দা রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রথম দিকে ২০০ থেকে ২৫০ পিস প্রকৃত ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরে দেশে তৈরি নিম্নমানের মাস্ক ‘এন-৯৫’ প্যাকেটে সরবরাহ করা হয়।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) একশ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় বানিয়ে ভুয়া আমদানি দেখিয়ে সরবরাহ করেছে জেএমআই।

এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের করোনা মোকাবিলা সামগ্রী কেনাকাটার প্রায় ৭০ শতাংশই সরবরাহ করে জেএমআই। তাদের সরবরাহ করা ‘এন-৯৫’ মাস্কের মান নিয়ে শুরু থেকেই চিকিত্সকদের প্রশ্ন ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি কর্ণপাত করেননি।

সম্প্রতি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ভয়াবহ তথ্য পান। জেএমআই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে জামায়াতের অন্যতম ডোনার। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের মাস্ক চিকিত্সক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের মধ্যে সরবরাহ করেছে। আর তাকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও তার সন্তানও এই চক্রে জড়িত বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে।

করোনা মোকাবিলায় শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজে না লাগানোও তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। জানা গেছে, সম্প্রতি গোয়েন্দা রিপোর্টটি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা করোনা ইস্যুকে পুঁজি করে নগ্ন বাণিজ্যে মেতে উঠেছে, সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এদের কারোরই ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগের নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জন কর্মকর্তা যিনি ছাত্র জীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি। সারাজীবন বিএনপি-জামায়াতের স্বার্থে কাজ করা ঐ কর্মকর্তার সহায়তায় জেএমআই প্রতিষ্ঠানটি মন্ত্রণালয়ের সিংহভাগ কাজ পেয়েছে। বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলতেই নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করেছে।

এর মাধ্যমে দেশের সকল চিকিত্সককে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঝুঁকির মুখে আজ দেশের স্বাস্থ্যসেবা, বিপন্ন হয়ে পড়েছে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী চিকিত্সক ও নার্সদের জীবন। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অতিদ্রুত উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সামনে আরো বড়ো ধরনের বিপদে পড়তে হবে আমাদের, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপস করার কোনো সুযোগ নেই; স্বাস্থ্য খাতকে বাঁচাতে হলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুগদা হাসপাতালে ৩০০ মাস্ক দেওয়া হয়। যেগুলোর মোড়কে ‘এন-৯৫ ফেস মাস্ক’ লেখা ছিল। এগুলো দেখে চিকিত্সকদের সংশয় তৈরি হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মুগদার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কেন্দ্রীয় ঔষধাগার অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ৩০০টি ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করেছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার জেএমআই এই মাস্কের প্রস্তুতকারী। এই মাস্কগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘এন-৯৫’ কি না, সে বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী টেলিফোনে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছেন। চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের কার...

সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান নাহিদের

জুলাই যোদ্ধাদের নামে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী সংসদ এলাকায় বিশৃঙ্খলা করেছে- বিএ...

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রস্তাবে ইডেন কলেজের আপত্তি

সরকারি সাত কলেজ নিয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক ক...

এনসিপির দাবি জুলাই সনদে ৩ দফা অন্তর্ভুক্ত করা

ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা...

পানির অভাবে তিস্তা এখন মরুময় বালুচর

একসময় উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকায় তিস্তা নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন...

চট্টগ্রামে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিলেন সাইফুল ইসলাম

চট্টগ্রামে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ...

আল-আমিন মডেল একাডেমিতে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

কেশবপুর আল-আমিন মডেল একাডেমির আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনু...

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার

রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তিন নেতাকে গ্রে...

নোয়াখালীতে মসজিদে জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত ৪০

নোয়াখালীর সদর উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় প...

আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত কেউ দায়িত্বে থাকবে না

বিতর্কিত কেউ আগামী নির্বাচনী দায়িত্বে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা