ছবি: সংগৃহীত
ফিচার

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে এখন স্বাবলম্বী চাষিরা 

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বাগেরহাটের ফকিরহাটে ঘেরের ভেড়ীবাঁধে পতিত জমিতে চার স্তরের নিরাপদ সবজি চাষ করে বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার চাষি এখন অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

আরও পড়ুন: আখাউড়া-আগরতলা চলল ট্রেন

তাদের উৎপাদিত ১০০ ট্রাক সবজি এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে বিত্রি হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে বইছে শান্তির সুবাতাস।

উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও নানা ধরনের সহযোগীতা প্রদান করায় এটি সম্ভব হয়েছে। চাষিরাও তাদের এ অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে চান।

বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯ টি উপজেলা- ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, শরনখোলা, বাগহাট ও কচুয়ায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ আবাদ হয়েছে।

আরও পড়ুন: শ্রীনগরে বোনজামাইকে কুপিয়ে হত্যা

৯ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিজ জমিতে আখ চাষ করে চাষিরা আশানুরূপ ফলন পেয়েছে। এতে অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাল জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা সবজি কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সারি সারি ভ্যান দাড়িয়ে আছে এ সবজি নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখান থেকে সবজি স্থানীয় বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শত শত চাষিদেরকে তাদের পতিত জমি ফেলে না রাখার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।

আরও পড়ুন: উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে কয়েক হাজার ট্রলার

শুধু তাই নয়, তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেজন্য তাদেরকে হাতে-কলমে সবজি চাষের উপর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদান করে আসছেন।

এরই অংশ হিসাবে তারা এ অঞ্চলের শত শত চাষিকে স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে ঘেরের ভেড়ীবাঁধে পতিত জমিতে চাষাবাদ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন।

সে পরামর্শ নিয়ে তারা সবজি চাষের উপর মনোযোগী হন। ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়ীবাঁধে মোট ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ব্যবসায়ী নিহত

এর মধ্যে বেতাগা ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর, লখপুর ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর, পিলজংগ ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর, বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর, নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর, মুলঘর ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর ও শুভদিয়া ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে।

বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা গ্রামের আনন্দ পাল, শ্যামল পাল, জীবন পাল, রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিনসহ একাধিক চাষিরা জানান, তারা তাদের ঘেরের ভেড়ীবাঁধে চার স্থরের সবজি চাষ করেছেন।

একই ঘেরের ভেড়ীবাঁধের উপর যে চার প্রকার সবজি চাষ করা যায়, তা তারা কোনদিন কল্পনাও করতে পারেননি। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে তারা এ পদ্ধতিতে চাষ করা শিখেছেন।

আরও পড়ুন: লৌহজংয়ে ২২ কেজি গাঁজাসহ আটক ১

তারা বলেন, ঘেরের ভেতরে মাছ আর ডাঙ্গায় অর্থাৎ ঘেরের ভেড়ীতে বরবটি সিম, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, চাল কুমড়া ও লাউ এবং দুই গাছের মাঝখানে বেগুন মরিচ টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন।

শুধু তারা নয়, এ অঞ্চলের শত শত ঘের মালিক ও বিভিন্ন ব্যক্তি জমি হারি বা বরগা নিয়ে সবজির চাষ করেছেন। বাম্ফার ফলনও হয়েছে। ধনপোতা গ্রামের বিলে হাজার হাজার একর জমিতে মনোমুগ্ধকর সবজির চাষ করা হয়েছে, যা দেখলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এ যেন ভিন্ন এক অঞ্চল।

সকল সবজি একটি স্থানে এনে জড়ো করার জন্য বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ব্যয়ে বৃহৎ আকারের একটি (কালেকশন সেন্টার) পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আগামী রোজার তারিখ প্রকাশ

যে ভবনটি নির্মাণ করা হলে সবজি বিক্রয় করতে চাষিদের কোন বেগ পেতে হবে না বলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউনুস আলী শেখ জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর হতে দুপুর পর্যন্ত শত শত কৃষক তাদের ঘেরের পাড়ে গিয়ে বিভিন্ন সবজি তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই সবজি বস্তায় ভরে ভ্যান যোগে কুরোলতলার মোড় বা বাজারে নিয়ে আসছেন।

সেখানে কয়েকজন ক্রেতা তা ক্রয় করে বড় বড় তুম্বু করে তা বস্তায় ভরে ট্রাক বা পিকাপে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাহশাহী ও খুলনার বিভিন্ন বড়ব ড় বাজরে নিয়ে যাচ্ছেন। চোখ জুড়ানো এ সমস্ত কার্যক্রম দেখে মন আরো মুগ্ধ হয়ে উঠে। এ যেন এক সবজির স্বর্গরাজ্য।

আরও পড়ুন: ভবন থেকে পড়ে ২ শ্রমিক নিহত

সবজি ব্যবসায়ী সিহাব উদ্দিন শেখ, আল আমীন শেখ, নাদিম হোসেন, সুভাস দেবনাথ ও রবিউল ইসলামসহ একাধিক ব্যবসায়রা জানান, তাদের এই মোড় হতে প্রতিদিন ২৮/৩০ টি ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রকার সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

সবজির মূল্য এখানে একটু কম হলেও চাষিরা খুশি। কারণ তারা ঘেরের পাড়ে বসেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে পারছেন।

আনন্দ পাল, শ্যামল পাল, জীবন পাল, রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিনসহ একাধিক চাষিরা বলেন, মাত্র দেড়/দুই মাসে তারা ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকার সবজি বিক্রয় করেছেন। শুধু সবজিই নয়, নিচেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

আরও পড়ুন: বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা

অন্য মৌসুমে ঘেরের ভেতরে ধানের চাষও করেন তারা। শুধু বেতাগা ইউনিয়নই নয়, মানসা-বাহিরদিয়া, শুভদিয়া, নলধা-মৌভোগ, পিলজংগ ও লখপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াডের ঘেরের পাড়ে সবজির চাষ হয়েছে বিপুল পরিমাণে।

এ উপজেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ হয়েছে। প্রতিদিন এই উপজেলা হতে প্রায় ২৫ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে।

সবজি চাষে বাম্ফার ফলন হওয়ায় শত শত কৃষকের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি তারা অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে সম্মৃদ্ধ হতে সক্ষম হয়েছে।

আরও পড়ুন: ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা

ফকিরহাট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মন্ডল, মোঃ সোলায়মান মন্ডল ও বিপুল কুমার পাল জানান, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে বেতাগা ও পিলজংগ ইউনিয়নে। এই দুইটি ইউনিয়নে ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে।

আলাপকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন তিনি বলেন, এ উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে।

আমরা চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সহযোগীতা করে আসছি।

এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে আরো স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সকল পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় চাষিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সংকটে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্তির পথে বাঘ

এ ব্যাপারে ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন দাশ বলেন, আমরা কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই তারা যাতে কৃষি পণ্য সহজেই বাজারজাত করতে পারে, সে জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙকর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট জেলায় সবজি আবাদের উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার সময় মতো বীজ, সার ও ঋণ প্রবাহ সচল রেখেছেন।

ফলে এ বছর বিভিন্ন সবজি বিশেষ করে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর বাগেরহাটের কয়েকটি উপজেলায় ৯৫ হাজার টন সবজির ফলন হবে। আমরাও কৃষকদের সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা ও বাজারজাতকরণের পরামর্শ দিয়েছি। যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারে, সেজন্য আমাদের সব ধরনের চেষ্টা রয়েছে।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

কেশবপুরে নির্বাচনী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুরঃ আগামী ০৮ ই মে ২০২৪, রোজ বুধবা...

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

আফ্রিকায় ভারী বৃষ্টি, নিহত ১৫৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি হ...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের বাকেরগ...

সেরা সুন্দরী হলেন ৬০ বছরের আলেজান্দ্রা 

বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি ৬০ বছর বয়স...

সোনার দাম ফের কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে সো...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা