ফিচার

অপরিণত শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন কোনি  

ফিচার ডেস্ক: ১৯৩০ এর দশকে নিউইয়র্কের কোনি দ্বীপে যেতে খুব একটা খরচ লাগত না পর্যটকদের। কিছু অর্থ খরচ করেই সেখানকার বিনোদন পার্কে কিংবা মেলায় আকর্ষণীয় সব রাইডে চড়তে পারতেন।

তবে বোর্ডওয়াক ধরে দ্বীপের ভেতরে আরেকটু হেঁটে কিছু বাড়তি টাকা খরচ করলেই মার্টিন কোনির সাড়া জাগানো ইনকিউবেটরে রাখা বাচ্চাদের প্রদর্শনীর দেখা মিলতো।

মার্টিন কোনি সারাবিশ্বে ইনকিউবেটর ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। যদিও সেসময় তিনি বেশ সমালোচিত ছিলেন। নিন্দা কুড়িয়েছেন দেশের মানুষের। অপরিণত হাজারো নবজাতক বাচ্চার জীবন রক্ষা করেছে কোনি। কিন্তু কোনি কিন্তু কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। তিনি বিভিন্ন মেলায় বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

এই দ্বীপে যেসব পর্যটকরা বেড়াতে যেতেন, তারা কোনির বিশেষ প্রদর্শনীতে ফি দিয়ে ঢুকে দেখতে পেতেন সারি সারি অপরিণত নবজাতক ইনকিউবেটরের গ্লাসের ভিতরে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যাদের একেকজনের দেহের ওজন আধা কেজিরও কম! সেই সময় মার্টিন কোনির এই উদ্যোগ জনমনে বেশ আগ্রহ ও কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। পাশাপাশি অপরিণত নবজাতকদের যত্নে সবার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতেও সাহায্য করেছে।

এর পরের গল্প জানতে আমাদের একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। পোল্যান্ডের ক্রোটোজিনে ১৮৬৯ সালে জন্মেছিলেন মার্টিন কোনি। ১৮৮৭ সালে আমেরিকাতে পাড়ি দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার জীবনের কাহিনী নিয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। প্রথমদিকে স্থানীয় মেলা কিংবা বিনোদন পার্কে তিনি নানারকম প্রদর্শনী ও খেলা দেখিয়ে দর্শক জমিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেইসংগে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করতেন বিভিন্ন সময়।

কোনি দাবি করেন, লিপজিগ ও বার্লিনের মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার পর তিনি ইউরোপিয়ান মেডিকেল লাইসেন্সের অধিকারী হন। তবে ইতিহাসবিদেরা বলেন অন্য কথা, কোনি না-কি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়ে চিকিৎসক হননি।

তাদের দাবির পক্ষে অবশ্য যুক্তি আছে। কারণ কোনি যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকাতে পাড়ি জমানোর পূর্বে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার মতো বয়সই হয়নি তার!

কোনি বলেন, বিখ্যাত ডা. পিয়েরে কনস্ট্যান্ট বুদিনের তত্ত্বাবধানেও তিনি পড়াশোনা করেছেন। ডা. বুদিনকে মডার্ন নিওন্যাটাল (নবজাতক বাচ্চার জন্ম হওয়া থেকে এক মাস পর্যন্ত যত্ন) মেডিসিনের জনক বলে গণ্য করা হয়। ১৮৯৬ সালে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত এক বৃহৎ শিল্প প্রদর্শনীতে ডা. বুদিন তার ‘চাইল্ড হ্যাচারি’ প্রজেক্ট লাখো দর্শনার্থীর সামনে প্রদর্শন করেন, এতে মেডিকেল সহকারী হিসেবে ছিলেন মার্টিন কোনি। ডা. বুদিনের এই হ্যাচারি প্রজেক্ট বেশ সফলতার মুখ দেখেছিল সেসময়।

পরবর্তীতে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল মুরগির ফার্মে; মুরগির বাচ্চার যত্নে। মানুষের বাচ্চার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার সাহস করেননি বুদিনও। অথচ ১৯০৭ সালের দিকে কোনিই সর্বপ্রথম ইনকিউবেটরের সাহায্যে নারীদের গর্ভে জন্ম নেয়া অপরিণত নবজাতকদের বাঁচানোর সাহসী প্রচেষ্টার সূচনা করেন।

১৯০৩ সালে মার্টিন কোনি এনাবেল নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। চার বছর পরে এনাবেল বাচ্চা জন্ম দেয়ার নির্ধারিত সময়ের ছয় সপ্তাহ পূর্বে হিলডেগার্ড নামে এক অপরিণত কন্যাশিশুর জন্ম দেন। যার ওজন হয়েছিল মাত্র দেড় কেজি! বাবা মার্টিন কোনি যদি ইনকিউবেটরের সঙ্গে জড়িত না থাকতেন; তাহলে হয়তো হিল্ডেগার্ডও পৃথিবীর আলো দেখতে পেতেন না। তখনকার সময়ে নবজাতকদের যত্নে তেমন সেবা পাওয়া যেত না। সেজন্য গড়ে চারজন অপরিণত নবজাতকদের মধ্যে তিনজনই মারা যেত।

কোনির এই জীবনরক্ষাকারী উদ্যোগ সম্পর্কে মানুষ যেন আরও জানতে পারে সেজন্য কোনি দ্বীপের প্রধান বিনোদন পার্কগুলোতে তিনি দুটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রেখেছিলেন। একটি লুনা পার্কে অপরটি ড্রিমল্যান্ড পার্কে। ড্রিমল্যান্ড পার্কে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে ১৯১১ সালে প্রদর্শনী স্থগিত হয়ে যায়।

অবশ্য ইনকিউবেটরে রাখা অপরিণত বাচ্চাগুলোকে নিউইয়র্ক পুলিশের প্রচেষ্টায় বাঁচানো হয়েছিল। পরে এই বাচ্চাদের লুনা পার্কের প্রদর্শনীতে স্থানান্তর করা হয় এবং প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই প্রদর্শনী চলেছিল।

প্রদর্শনী থেকে পাওয়া অর্থ সেসব অপরিণত বাচ্চাদের যত্নের পাশাপাশি কোনির ‘চাইল্ড হ্যাচারি’র ব্যবস্থাপনায়ও খরচ করা হতো। ইউনা পার্কের প্রদর্শনী যখন কোনি বন্ধ করে দিলেন তখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার শিশু তার ইনকিউবেটরে সেবা পেয়েছিল।

তার মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার শিশুকে তিনি বাঁচাতে পেরেছিলেন। বেঁচে যাওয়া শিশুর মধ্যে তার কন্যা হিল্ডেগার্ডও ছিল। ইনকিউবেটরে নবজাতকদের বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কোনির সফলতার হার ছিল ৮৫ শতাংশেরও বেশি!

১৯৪০ এর দশকে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বোদ্ধারা অবশেষে চাইল্ড হ্যাচারির ধারণাকে আমলে নেন। নবজাতক শিশুদের যত্নে এই পদ্ধতি হাসপাতালে ব্যবহার করা শুরু করেন। এতে করে ১৯৪৩ সালে মার্টিন কোনি তার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেন।

সেই চাইল্ড হ্যাচারিকে (বর্তমানে যা ইনকিউবেটর) মেডিকেল কমিউনিটি ও হাসপাতালগুলোতে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পর, পরবর্তীতে নানাবিধ পরিবর্তন এনে সেটাকে আরও কার্যকরী করা হয়।

কোনির ব্যবহৃত অনেক কৌশলই বর্তমানে নবজাতকদের চিকিৎসাসেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে সদ্যজাত বাচ্চাকে জীবাণুমুক্ত করার বিশেষ পদ্ধতি এবং 'ক্যাঙ্গারু কেয়ার' উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে অপরিণত বাচ্চা জন্ম নে য়ার পর, তাদের বেঁচে থাকার হার পূর্বের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যার জন্য আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে মার্টিন কোনির কাছে।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কুরআন পোড়ানোর অভিযোগে পিতাপুত্র আটক

পবিত্র কুরআন শরিফ পোড়ানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ শহরের গণকপাড়া রাড়ীব...

মনোনয়ন বঞ্চিত সমর্থকদের ষষ্ঠ বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সেতু ব্লকেড

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে ঢাকা–মুন্সীগঞ্জ সড়কে ষষ্ঠ ব...

মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত-৭

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বিএনপির দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আয়োজি...

জুলাই শহীদ স্মৃতি আন্তঃইউনিয়ন ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

জুলাই শহীদ-২০২৪ এর স্মৃতি স্মরণে কুষ্টিয়ার মিরপুরে আন্তঃইউনিয়ন ফুটবল ফাইনাল ম...

কুষ্টিয়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে কৃষক নিহত, গুলিবিদ্ধ ২

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দোকানের সামনে বসে থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলি...

কবরে বস্তাবন্দি ব্যাগে মিলল একনলা বন্দুক–পাইপগান

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একটি কবরস্থান থেকে ৬টি একনলা বন্দুক ও একটি পাইপগান উদ্ধা...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর–গজারিয়া) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত...

কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষা...

লন্ডন–দিল্লিতে বসে কোনো রাজনীতি চলবে না

এই দেশে এসে রাজনীতি করতে হবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ড...

মনোনয়ন বঞ্চিত সমর্থকদের ষষ্ঠ বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সেতু ব্লকেড

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে ঢাকা–মুন্সীগঞ্জ সড়কে ষষ্ঠ ব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা