সান নিউজ ডেস্ক : পৌষ মাসের ২১ তারিখ, দেশজুড়ে বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে দেশ। ঘন কুয়াশায় সূর্য ঢাকা পড়ে আছে। নিম্নগামী তাপমাত্রার সাথে হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ বিপর্যস্ত। ফলে, জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়েছে এর প্রভাব।
আরও পড়ুন : দেশের ৩ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ
বিশেষ করে হিম ঠান্ডা বাতাস, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে ভয়বহ পরিস্থিতির মুখোমুখি উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এদিকে দিনাজপুরে খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা এখানে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) কুয়াশার পরিমাণ খানিকটা কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিফতর। এদিন দুপুরের পর দেশের কোথাও কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যেতে পারে। তবে দু-এক দিন পর আরও অধিক মাত্রায় দেখা দিতে পারে কুয়াশা।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া সাধারণত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে।
আরও পড়ুন : ঘন কুয়াশা, বোয়ালমারীতে জনজীবন স্থবির
রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার পাশাপাশি দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হতে পারে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টেকনাফে ছিল সর্বোচ্চ ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে শ্রীমঙ্গল ছাড়া দেশের অন্যান্য নিম্ন তাপমাত্রার অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল।
আরও পড়ুন : ঘন কুয়াশা, বোয়ালমারীতে জনজীবন স্থবির
যেমন তেঁতুলিয়ায় নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজারহাটে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদীতে ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ছিল ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বদলগাছীতে ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চুয়াডাঙ্গায় ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অপরদিকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নেমেছে, বইছে ঠান্ডা হাওয়া , ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত দিনাজপুরের মানুষ। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। এখানে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় দিনাজপুর জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আদ্রতা ৯৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন : ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে বেড়েছে শীত
সকালে দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসাদুজ্জামান জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৩ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গতকাল একই সময় তাপমাত্রা ছিল ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ ছিল।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, হিমেল হাওয়া ও নিম্নগামী তাপমাত্রার প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে প্রচন্ড শীত। এর প্রভাব পড়েছে জনস্বাস্থ্যের ওপর। ফলে, হাসপাতালে বেড়েছে রোগীদের ভিড় এবং ভর্তি।
আরও পড়ুন : কুয়াশার চাদরে রাজধানী ঢাকা
বিগত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন শতাধিক ভর্তি হয়েছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া নিয়েও স্বজনদের মাঝে বেড়েছে উদ্বিগ্নতা।
এছাড়া, এ অঞ্চলে শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহানোর প্রবণতাও কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের মতো নানা দুর্ঘটনা।
চলতি শীত মৌসুমে বুধবার (৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শরীরে সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ ভাগ দগ্ধ নিয়ে প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন : শীতে কাঁপছে উত্তরের জনপদ
অপরদিকে ৫ জন দগ্ধ রোগীকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
অগ্নিদগ্ধ রোগীদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান।
রমেক পরিচালক আরও বলেন, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশু ওয়ার্ডসহ বার্ন ইউনিটেও অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। খড়কুটো না জ্বালিয়ে গরম কাপড় পরে সবাইকে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে আগুন পোহাতে গিয়ে প্রাণহানীর সংখ্যা কমবে।
আরও পড়ুন : তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
সরেজমিনে রমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, প্রতিটি বেডে একাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। বেড না পেয়ে মেঝেতে শয্যা পেতে অনেক শিশুকে রাখা হয়েছে। প্রতিটি বেডে মায়েরা সন্তান নিয়ে বসে আছেন।
কোনো কোনো বেডে ২ জন, কোথাও ৩ জন। অনেকেই সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। শিশুর সঙ্গে অভিভাবকদের এমন ভিড়ে নার্স ও চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
রমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স আরজু আক্তার আখি বলেন, এবার ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মাসে প্রতিদিন কম বেশি ৫০-৬০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এই ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে।
আরও পড়ুন : পাবনায় গুলিতে রিকশাচালক নিহত
শিশু বিভাগ সূত্রে, দুটি শিশু ওয়ার্ডে গত দুই সপ্তাহ ধরে শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যাদের বয়স একদিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। শীতের আগে এই ওয়ার্ডে এভাবে এত রোগী থাকতে দেখা যায়নি বলে চিকিৎসক ও নার্সরা জানান। শীত যতই বাড়ছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে।
এমন চিত্র শুধু রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও এমন গাদাগাদি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থ শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার তাহমিনা আক্তার জানান, প্রতিদিন অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর প্রায় সবগুলোই শীতজনিত কারণে আগুন পোহানোসহ অন্যান্য কারণে দগ্ধ। এখন ওয়ার্ডটিতে ৩৫ জন রোগী ভর্তি আছে।
আরও পড়ুন : শিতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থেকে অগ্নিদগ্ধ ভাগ্নিকে চিকিৎসা নিতে আসা নাজিনুর রহমান জানান, পাঁচ দিন আগে সকালে বাড়ির বাইরে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয় তার ১১ বছর বয়সী ভাগ্নি।
এদিকে, সূর্যের দেখা না মেলায় নগরীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে শীতের এই চিত্র গত এক সপ্তাহ ধরে বিরাজমান।
চলতি মৌসুমের চলমান শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে তীব্র শীতে বৃদ্ধ ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঠাণ্ডা জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন। শহরের তুলনায় গ্রামে শীতের প্রকোপ আরও বেশি। ফলে গরম কাপড়ের পাশাপাশি গ্রামের শিশু-বৃদ্ধরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন : পঞ্চগড়ে হাড়কাঁপানো শীত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ডিসেম্বরের শেষে উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এর সাথে শীতের তীব্রতাও খুব বেড়েছে। এই অঞ্চলে গত তিন চার দিন থেকে তাপমাত্রা ১০-১১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠা-নামা করছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, দিন ও রাতের তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলে ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়াসহ শৈত্য প্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে। তবে এই তাপমাত্রা আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে পৌষের আগমনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে শীতকাল। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে দেখা দেয় চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে বৃদ্ধি পায় শীত। এসময় দু’দিনের ব্যবধানে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমে যায়।
আরও পড়ুন : সেই দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ক্লোজড
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) তা কমে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কুমিল্লায় সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যেখানে একদিন আগেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন : শীতে ভোটারের উপস্থিতি কম
অপরদিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় রোববার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। সোমবারও সেখানে একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
সান নিউজ/এইচএন