বেনাপোল প্রতিনিধি: গরুর ক্ষুরা ও পক্স রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কে আছেন যশোরের খামারিসহ সাধারণ চাষীরা। শার্শা উপজেলায় হঠাৎ করে ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে গরুর এ রোগ।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ
উপজেলার সীমান্তবর্তী বেনাপোল, নাভারন, বাগআঁচড়া ও শার্শা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের খামারে ও বিভিন্ন কৃষকের প্রায় এক হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোনো কোনো গ্রামে বেশ কিছু গরুর মৃত্যুও হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকরা।
খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ষাঁড় ও গাভী মিলিয়ে আমার খামারে ১২ টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আমার ৬ টি গরু, পরে আরও ২ টি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুন: এলপিজি গ্যাসের নতুন মূল্য ঘোষণা আজ
শার্শা উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, তাদের পোষা গরুর গায়ে গোলাকৃতি পক্স দেখা দিয়ে গরুর সারা গায়ে ক্ষত হয়ে ঘা হচ্ছে। এ সময় তারা গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা করলেও নিরাময় হচ্ছে না।
আক্রান্ত গরু অসুস্থ হয়ে কিছুই খাচ্ছে না। কিছু দিন পর মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর ঝুঁকিতে বেশি পড়ছে বাচ্চা গরু ও গাভী। এছাড়া দেখা দিয়েছে খুরা রোগ। খুরা রোগে মারা যাচ্ছে গরু।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে টেক্সটাইল গোডাউনে আগুন
উলাশী গ্রামের খামারি আল আমিন বলেন, দুই দিনে তার দুটি গাভী মারা গেছে। যার বাজার মুল্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। হঠাৎ এ রোগ দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা।
যে সকল খামারী বা কৃষকের গাভী ও ষাঁড় আক্রান্ত হয়েছে, তারা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ কারণে অনেক খামারী ও সাধারণ মানুষ খুরা রোগে আক্রান্ত বড় বড় গরু স্বল্প মূল্যে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আক্রান্ত গরু অল্প মূল্যে ক্রয় করে মাংস ব্যবসায়ীরা কোন ডাক্তারী পরীক্ষা ছাড়াই রাতের আধারে জবাই করে মাংস বিক্রি করছে।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ু মানের অবনতি
এমন ঘটনা সারা শার্শায় ঘটলেও দেখার কেউ নেই। নেই কোনো প্রতিকার। ফলে অসুস্থ গরুর মাংস খেয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলার প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে প্রায় ৯৯৮৫ টি, ছাগল ১০৮৩০ টি, ভেড়া ৫৫ টি। উপজেলার অনেক গ্রামে গরুর পক্স ও ক্ষুরা রোগসহ বিভিন্ন রোগ হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। অনেকে সরকারি অফিসের পশু ডাক্তারের কাছে আসে না। যার মূল কারণ- সাধারণ মানুষ বা খামারিদের অসচেতনতা। অনেক খামারিরা স্থানীয় হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে তাদের পশু চিকিৎসা করান, যার অধিকাংশ চিকিৎসা ভুল। এজন্য ভুল চিকিৎসায় অনেক গরু মারা যায়।
আরও পড়ুন: ৮ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা
উপজেলার পশু চিকিৎসার জন্য ঘরে ঘরে হাতুড়ি ডাক্তার নামধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ভুল চিকিৎসায় আরও গরু মারা যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে খামারিসহ সাধারণ কৃষকেরা।
শার্শা উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, শার্শা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গত ৩ মাসে প্রায় ১০/১২ হাজার গরু ও ছাগলের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৫৬
খামারিসহ সাধারণ মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করাসহ মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। শার্শায় পশু চিকিৎসায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১৬ টি উঠান বৈঠক করা হয়েছে।
তারপরও সাধারণ কৃষক ও খামারিরা পশু হাসপাতালে তাদের পশুকে না এনে স্থানীয় গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পশু চিকিৎসা করান।
এরপর যখন দেখেন পশু মরার পথে তখন হাসপাতালের শরনাপন্ন হন। মানুষের মত পশু যখন অসুস্থ হবে তখনি অসুস্থ পশুকে ডাক্তারের কাছে হাসপাতালে আনতে হবে।
সান নিউজ/এনজে