সারাদেশ

ডাকাতের গ্রাম এখন প্রবাসী গ্রাম

আকতারুজ্জামান, মেহেরপুর: মেহেরপুর সদর উপজেলার টেঙ্গার মাঠ। একসময় এ গ্রামের নাম শুনলেই আঁতকে উঠত মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলাবাসী। গ্রামের সকলেই চুরি ডাকাতি ছিনতাই ও রাহাজানিতে জড়িত ধারণায় ভয়ে থাকতো আশপাশের জেলার মানুষ।

এখন আর কেউ চুরি ডাকাতি করে না। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে গ্রামের সকলেই এখন স্বাবলম্বী। গ্রামটিতে বইছে শান্তির সুবাতাস। প্রতিটি পরিবারের সদস্যই এখন প্রবাসী। এক সময়ের চোরের গ্রাম এখন প্রবাস গ্রাম হিসেবে চেনে আশপাশের জেলাবাসী।

মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে টেঙ্গার মাঠ। অর্ধশত বছর আগে এখানে ছিল ধুধু মাঠ। ১৯৭৬ সালের দিকে জেলার কাজিপুর থেকে আকবর আলীসহ ৬ জন সেখানে বসতি স্থাপন করেন। অভাব অনটনের কারণে শুরু করে চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই। শুধু দেশ নয়, ভারত থেকেও চুরি ডাকাতি করতো তারা। এলাকার কোন ডাকাতি ও গরু চুরির ঘটনা ঘটলে লোকজন খুঁজতে যেতো টেঙ্গার মাঠে। ক্রমশ লোকজন বাড়তে থাকে গ্রামটিতে। সকলেই জড়িয়ে পড়েন চুরির পেশায়। এলাকার লোকজন চোরের গ্রাম আখ্যা দিয়ে কেউ আত্মীয়তা করতে চাইতো না। এমনকি ওই গ্রামের মানুষকে অন্য গ্রামের মানুষ কাজেও নিতে চাইতো না।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৮ সালের দিকে তৎকালীন পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দীন উদ্যোগ নেন গ্রামের লেকজনকে সুপথে ফিরিয়ে আনার। সেই সাথে স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখান। গ্রামের লোকজনকে খাবার ও পোশাক দেন। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সকলেই একতাবদ্ধ হন এবং যার কাছে যা আছে তা বিক্রি করে সমবায় সমিতি গঠন করে আকবর আলীকে বিদেশে পাঠায়। এভাবে গ্রামের লোকজন পর্যায়ক্রমে বিদেশ যেতে থাকে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের লোকজন বিদেশ খেটে সাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে গ্রামের দেড় শতাধিক ছেলে বিদেশে রয়েছেন। পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরাও হাঁস মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন মসজিদ, ঈদগাহ ও বিদ্যালয়।

এক সময় যার নাম শুনলে কোলের শিশুরা ঘুমিয়ে পড়তো সেই সাবু ডাকাত জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অভাব অনটন ছিল। জমি জিরাত না থাকায় দিন মজুরী করা হতো। আবার অনেক সময় কোন কাজ পাওয়া যতে না। ফলে চুরি ডাকাতি করতে হতো। এ কারণে অনেকেই কামলা নিতো না। এমনকি কেই আত্মীয়তা করতে চাইতো না।

গ্রামের আকবর আলী জানান, পুলিশের পরামর্শ আর নিজেদের অপরাধবোধ বুঝতে পেরে গ্রামের সবাই একটি সমিতি করে বিদেশ যাওয়া হয়। পরে একে একে অনেকেই বিদেশ যায়। এভাবে গ্রামের অন্তত দেড়শ জন বিভিন্ন দেশে রয়েছে।

আব্দুল হামিদ জানান, টেঙ্গার মাঠের বাসিন্দা পরিচয় দিলে কেই কামলা নিতো তাই অন্য গ্রামের নাম করে কাজ করতে হতো। শেষ মেশ নিজেই গ্রামের উঠতি বয়সীদেরকে রাজমিস্ত্রীর কাজ শিখিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়। বিদেশ থেকে ফিরে সকলেই এখন ব্যবসা করছেন।

সাবু ডাকাতের স্ত্রী জানান, স্বামী সন্তান চুরি ডাকাতি করার কারণে দিনে রাতে পুলিশ তাড়া করতো। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। ক্ষণিকের জন্য স্বামী সন্তানকে দেখতে পাওয়া যেতো। এখন আর সে ভয় নেই। বেশ শান্তিতে রয়েছেন সবাই। একই কথা জানালেন উদু চোরের স্ত্রী। তিনি আরো জানান, চুরি ডকিাতি ভাল কাজ না। কেউ ভালবাসে না। এসব কথা স্বামী সন্তানকে বোঝানোর পরও অভাবের তাড়নায় চুরি করতো তারা। পরে ছেলেকে বিদেশ পাঠানো হয়। কেনা হয় আবাদি জমি। এখন চাষাবাদ করা হচ্ছে। ছেলে মেয়েদেরকে বিয়ে দেয়া হয়েছে।

কৃষক শরিফুল জানান, চোরের গ্রামের লোকজন বলে কেউ মেলামেশা করতো না। বিয়ে শাদীও হতো না অন্য গ্রামে। চোর নাম ঘোচাতে বিদেশ যাওয়া হয়। বিদেশ থেকে ফিরে এসে এখন কেউ কৃষি কাজ করছেন কেউ বা ব্যবসায়ী। এক সময়ের অভাবী গ্রাম এখন প্রবাসী গ্রাম। এ গ্রামের সকলেই এখন সাবলম্বী হয়ে মধ্যবিত্ত।

অপরাধ বিশ্লেষক ও মেহেরপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম জানান, মানুষ কেউ অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না। সময় পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে অপরাধী করে তোলে। সুপথে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতা। আর এ সহযোগিতা পেলে সকলেই আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। তার উজ্জল দৃষ্টান্ত মেহেরপুরের টেঙ্গার মাঠের বাসিন্দারা। এক সময় যে গ্রামের লোকজন চুরি ডাকাতি করতো। তারা আজ আত্ম শক্তিতে বলিয়ান হয়ে স্বাবলম্বী।

সান নিউজ/কেটি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদী

কিছুদিন আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বহু সৈন্য প্রাণ হার...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

"আমি এখন আমেরিকা চালাই, পৃথিবীও চালাই" : ট্রাম্পের দাবির তাৎপর্য

সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বিতর্কিত মন্তব্য নতুন...

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা