শিল্প ও সাহিত্য
জাপানের গল্প - ১৫

ইসলামের স্বার্থপরতা

পি আর প্ল্যাসিড

মিতুল জাপান আসার কিছুদিন পরেই পরিচয় হয় এক লোকের সাথে, নাম তার ইসলাম। লোকটি মানুষের সাথে যখন কথা বলেন তখন প্রায় সময় তার চোখ বন্ধ রাখে। এটার মানে হচ্ছে, লোকটি সবার উলব্ধিতে নিজেকে খুব নম্র এবং ভদ্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। প্রথম প্রথম বিষয়টি দেখে মিতুলের কাছেই লজ্জা লাগতো। ইসলামের এই চোখ বন্ধ করে কথা বলার বিষয়টি কয়েকবার বলার চেষ্টা করেছে তাকে কিন্তু নতুন পরিচয় বলে সরাসরি কোনো কিছু বলতে পারেনা মিতুল। সে ভাবে, বললে মিতুলকে উল্টো বলে না বসে, আমাকে শিখাতে এসেছ? দুই দিন হয়না জাপান এসেছ, এসেই আমাকে তুমি শিখাচ্ছ? এই ভেবে মিতুল কিছু বলে না তাকে, অনেকটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যায়।

ইসলামের সাথে মিতুলের পরিচয় হবার পর থেকে তাদের মধ্যে অন্যরকম এক সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা একজনকে ছাড়া অন্যজন যেন চলতে পারে না, এতোটাই ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে দু'জনের মধ্যে ক্রমেই। একারণে ছুটির দিন গুলোতে কেউ কোথাও ঘুরতে গেলে এক জনকে রেখে অন্য জন কোথাও যায় না সাধারণত। এতোটাই গভীর সম্পর্ক।

মিতুল জাপান আসার বেশ কয়েক বছর আগে ইসলাম জাপান এসেছেন, এ কারণেই তার কথা বলার স্টাইল আলাদা। তাছাড়া টোকিওতে বাঙালিদের প্রাণ কেন্দ্র বলে পরিচিত বাঙালিদের দ্বারা পরিচালিত এক খাবারের দোকানে কাজ করার কারণে তাকে জাপানে বসবাসকারী অনেক বাঙালিই চিনে। খাবারের এই দোকানটি শিব্যুইয়া শহরে অবস্থিত।

তার সাথে থাকার কারণে মিতুলও এর মধ্যে অনেক বাঙালির কাছে পরিচিত হয়ে উঠে। অনেকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কও গড়ে উঠে তার। কখনো মিতুল ইসলামের সাথে কোথাও গেলেও অন্যরা এসে মিতুলের সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলে। তখনই মিতুল ইসলাম সম্পর্কে মানুষের কাছে নানা ধরনের কথা শোনে। খারাপ কেউ না বললেও তার অতি আন্তরিকতার কথাই যেন সকলের মুখে ছড়িয়ে আছে।

ইসলামের বাড়ি হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর এলাকায়। জাপানে তার এলাকার লোকজনই বেশি। যে কারণে কোথাও গেলে বাঙালিদের যে কারো সাথে কথা বললে দেখা যায়, কথা বলতে বলতে কোনো না কোনো ভাবে তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বের হয়ে যায়। যে কারণে বিপদে আপদে তাদের সকলেই প্রায় পরবর্তীতে ইসলামের কাছে আসে সহযোগিতা চাইতে। বিশেষ ভাবে জাপানে সে যাদের কোনো বাসা বা কাজ নেই তাদের সে বাসা এবং কাজের ব্যবস্থা করে দেন।

জাপানে কিছু লোক রয়েছেন যারা অসহায়দের চাকরি বা বাসার ব্যবস্থা করে বাড়তি টাকা নেয় দালালি হিসেবে যা ইসলাম কারো কাছ থেকে কখনো নিয়েছেন এমনটা মিতুল শোনেনি। ইসলাম নিজেও নিজের সম্পর্কে বলেন, সে কখনো কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাপানে সহযোগিতা করেন না। এটাই মিতুলকে আকৃষ্ট করে বেশি। ইসলাম সম্পর্কে নানা বিষয় চিন্তা করলে মিতুলের চোখে ইসলাম একজন ভালো মানুষ।

একসাথে কাজ করার কারণে এবং এক সাথে চলাফেরা করায় মিতুল তার সব বিষয়ই ইসলামের সাথে আলোচনা করে। বিশ্বাস বলতে পুরোটা বিশ্বাসই করে মিতুল, ইসলামকে। একসময় মিতুল তার সুবিধা মতো ইসলাম যেখানে কাজ করেন সেখান থেকে কাজ ছেড়ে দূরে আলাদা ফ্যাক্টরিতে কাজ নেয়। সেখানে তার থাকা খাওয়া সব কিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে। মিতুল আলাদা হয়ে গেলে এদিকে ইসলাম হয়ে যান একা। তাই সে সময় পেলে ছুটির দিন গুলোতে চলে যান মিতুলের কাছে। সেখানেই তারা সারাদিন কোথাও এক সাথে বেড়িয়ে কোন রেস্টুরেন্টে বসে দেখা যায় রাতের খাবার খেয়ে তারপর রাত করে বাসায় ফিরেন ইসলাম।

তারা সময় পেলেই দু'জন দু'জনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে। ইসলামের কথার বেশির ভাগই থাকে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ভালো কোনো ব্যবস্থা করে দেবার জন্য। সে তার অন্য ভাইবোনদের নিয়ে অনেক ভাবেন। দেশে তার বাবা মার জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করার কথাও ভাবেন প্রতিনিয়ত।

এদিকে মিতুল জাপান আসার আগে একটি মেয়ের সাথে সে ভালোবাসার সম্পর্ক করেছিল। তবে দেশে থাকা কালে তাদের সম্পর্কটা ছিল কেবল বন্ধুত্বের। যখনই জাপান চলে আসে তখন থেকে মেয়েটির প্রতি একটু একটু করে টান বাড়তে শুরু করে। সেই টান একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়। তাই ইসলাম তার সকল কথার ভীড়ে মিতুলকে আনন্দ দিয়ে রাখার জন্য দেশে তার সেই ভালোবাসার মেয়েটিকে নিয়ে নানা কথা বলেন। মিতুলকে ইসলাম স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন, জাপানে মন দিয়ে কয়েক বছর চাকরি করে টাকা জমাতে। টাকা জমালে সে তার ভালোবাসার মেয়েটিকে জাপানে তার কাছে ছাত্রী করে এনে দেবার ব্যবস্থা করবেন। এবং সে জাপানে এসে বৈধ ভাবে থাকার ফলে মিতুল তার ভিসাতেই ডিপেন্ড ভিসা নিয়ে বৈধভাবে থাকার সুযোগ পাবে।

ইসলামের এমন কথা শুনে মিতুল খুব উল্লাসিত হয়। মেয়েটিকে নিয়ে মনে মনে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মনকে আঁটসাঁট বেঁধে অনেক কিছু ভাবে।

একসময় হঠাৎ করেই ইসলাম বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠেন। ফোন করে মিতুল তাকে ঠিক মতো বাসায় পায় না। ছুটির দিন আসলেও ইসলাম আর দেখা করেন না মিতুলের সাথে। মাঝে মধ্যে কোনো কারণে কথা বলার দরকার হলে অনেক রাত করে ইসলামের বাসার ফোন নম্বরে মিতুল ফোন করে। মিতুলের বাসায় কোনো ফোন নেই। তাই কাউকে ফোন করার দরকার হলে সে তার বাসা থেকে কম করে হলেও বিশ মিনিটের পথ হেঁটে গিয়ে বড় রাস্তার ধারে বা স্টেশনের সামনে থাকা পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করে। রাত করে বাইরে যাওয়া অনেক সময় মিতুলের জন্য নিরাপদ মনে করে না। যেহেতু তার জাপানে এখন আর বৈধ ভাবে থাকার কোনো কাগজপত্র নেই তাই ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়রার সম্ভবনা অনেক বেশি। তারপরেও ভয়ে ভয়ে তার দরকারে ভয়কে জয় করতে যেতে হয় বড় সড়কের কাছে বা স্টেশন পর্যন্ত টেলিফোন বুথ থেকে কোথাও ফোন করতে।

কয়েকদিন চেষ্টা করে কোনো ভাবে ইসলামের সাথে মিতুল কথা বলতে না পেরে অস্থির হয়ে একদিন গভীর রাতে ইসলামকে টেলিফোন করে বাসায় পায় মিতুল। ফোনে জানতে চায় হঠাৎ তার এমন ব্যস্ততার পিছনে কারণ কি? দেখা করা তো দূরের কথা যোগাযোগই করছেন না কেন সে?

এমন প্রশ্ন করলে ইসলাম তার কথায় আমতা আমতা করতে শুরু করেন। মিতুল বুঝতে পারে সে যে তার কাছে কোনো কিছু লুকাচ্ছে। তারপরেও মিতুল তার বিশ্বাসের জায়গা থেকে কোনো অবিশ্বাসের জন্ম না দিতে রসিকতা করে বলল, - আপনি নিশ্চয় কোনো জাপানি মেয়ের প্রেমে পড়েছেন? তা না হলে, যে ইসলাম প্রতিদিন আমার সাথে দিনে একবার হলেও কথা বলতেন সেই ইসলাম আজ এক মাসের বেশি সময় হয়ে যাচ্ছে অথচ কোন খোঁজ খবর দিচ্ছেন না বা নিচ্ছেন না এটা সত্যি আশ্চর্যে মতো মনে হচ্ছে আমার কাছে।

এই কথা বলার পর ইসলাম মিতুলকে বললেন, - আমার এই মাসটা পর্যন্ত একটু ব্যস্ততা বেশি আছে। আমি আপনাকে ফোন করে পরে কথা বলবো। আপনি এক কাজ করেন, এর মধ্যে পারলে আমার বাসায় আইসেন। আমরা না হয় বাসায় বসে কথা বলবোনে। বলে সাথে সাথেই আবার জানতে প্রশ্ন করলেন, - দেশে আপানার বান্ধবী ভালো আছে তো?

মিতুল উত্তর দেয় না। এবার পরিষ্কার বুঝতে পারে তার কাছে কিছু একটা যে ইসলাম লুকাচ্ছে। ইসলাম আবার প্রশ্ন করলেন, - চিঠি পত্র দেশ থেকে ঠিক মতো পাচ্ছেন তো, নাকি আবার অন্য কারো সাথে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে?

মিতুল ইসলামের সাথে তখন বাড়তি কোনো কথা আর বলার সুযোগ পায় না। সে দেখে, তার টেলিফোন কার্ডের পয়েন্ট খেট খেট করে কেটে শূণ্যের দিকে এগুচ্ছে। তখন পর্যন্ত যেটুকু পয়েন্ট অবশিষ্ট ছিল কার্ডে সেটুকু পয়েন্ট তার বাসায় কবে এবং কখন গেলে পাওয়া যাবে বা ভালো হয় তার সঠিক দিন তারিখ জানতে জানতে শেষ করে।

তাদের কথা শেষ হবার আগেই টেলিফোন কার্ড চার্জ শূণ্য হয়ে গেলে ফোন বুথের ভিতর থেকে শূণ্যের কোঠায় আসা টেলিফোন কার্ডটি বের হয়ে আসে। এসময় বুথে পুত পুত করে শব্দ হতে থাকে। কার্ডটি বুথ থেকে পরে টেনে বের করলে সেই পুত পুত শব্দ বন্ধ হয়। মিতুল এসময় তার হাত থেকে রিসিভার বুথের উপর রেখে আবার বাসার দিকে হেঁটে রওনা দেয়।

এর এক সপ্তাহ পর মিতুল ইসলামের বাসায় যায়। পরের দিন ছিল মিতুলের ছুটি। তাই ইসলামের বাসায় সে রাত থাকার কথা বললে ইসলাম প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। পরে রাত বেশি হয়ে যাবার কারণে ইসলাম মিতুলকে তাড়িয়ে দিতেও পারছিলেন না। কারণ, এসময় মিতুলকে দূরের পথে একা পাঠালে রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মনে করে তাকে বাধ্য হয়ে থেকে যাবার কথা বললেন তার বাসায়।

এসময় তার বাসায় অন্য আরো যে কয়জন শেয়ারে থাকেন তারাও কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসেন। তাদের সবাই মিতুলকে আগে থেকে চেনার কারণে মিতুলকে দেখে সবাই বেশ আন্তরিকতার সাথে তাকে রাতে থাকায় ধন্যবাদ জানায়। মিতুল রাতে বাসায় থাকার কারণে ইসলাম এসময় বাসায় সবার জন্য রান্না করতে ব্যস্ত হন। অন্য সবাই যে যার মতো করে গোসল করে ফ্রেস হয়ে রাতে তারা কার্ড খেলার আয়োজন করতে থাকেন। অন্যদিকে ইসলাম একাই রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়। রান্না শেষ হতে তখনো অনেক সময় বাকি।

ঘরে ইসলাম বাদে অন্য সবাই কার্ড খেলায় মত্ত। কেউ খেলায় আর কেউ দেখায়। যেহেতু সবাই খাবার জন্য অপেক্ষা করছিলো তাই রান্না শেষ হলে ইসলাম খাবার পরিবেশন করতে থাকেন। সবাই হাতে হাতে এক সাথে ঘরের মেঝেতে বিছানার নিচে ভাঁজ করে রাখা ইংরেজি পত্রিকা টেনে নিয়ে সেগুলো বিছিয়ে তার উপর খাবার নিয়ে বসেন। এসময় একজন মিতুলকে প্রশ্ন করলেন, - আপনার ইসলাম যে দেশে যাচ্ছে, সেটা আপনাকে বলেছে তো?

ইসলামের দেশে যাবার কথা শুনে মিতুল প্রথম বুঝতে পারে না। সে খুব ভালো করে জানে ইসলামের যে এখানে ভিসা নেই। তাই জাপানের বাইরে কোথাও তার ভ্রমণের অনুমোদন নেই। সে দেশে গেলে তাকে একবারের জন্য যেতে হবে। ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই তার। এর বাইরে মিতুল অন্য আর কোনো কিছু ভাবে না।

লোকটির কথা শুনে মিতুল একবার ইসলামের দিকে তাকায়। সে লক্ষ করে ইসলাম সেই লোককে চোখে ইশারা করছেন মিতুলকে না বলার জন্য। তার চোখে ইসলামের এমন সাংকেতিক ভাষায় কথা বলতে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে নিচে খাবারের দিকে তাকায়। খাবারের দিকে তাকিয়ে সে ইসলামের এই সাংকেতিক ভাষায় ইশারা করার বিষয়টির বোঝার চেষ্টা করে। ইসলাম যে তার সাথে কোনো কিছু লুকাচ্ছে সেটা পুরোই পরিষ্কার হয়ে যায় মিতুলের কাছে। কিন্তু ইসলামের পাকা অভিনয় করা দেখে সে অবাকই হয়।

ইসলামের ইশারায় লোকটি তার কথা বলা থামায় না। কেনো যে মিতুলকে কথা গুলো বলতে থাকেন সেটাও মিতুল বুঝতে পারেনা। তাই না বোঝার ভান করেই সে তার খাবারে মন দেয়। ইসলাম তাড়াতাড়ি করে ভাত খেয়ে উঠে যান। এরপর বেসিনে গিয়ে তার প্লেট ধুয়ে চুলার কাছে একটা বড়ো ঝুড়ির মতো পাত্রে প্লেট রাখেন। এমনভাবে রাখেন যে, সহজে যেন থালার পানি ঝরে যায়। রেখে ভিতরে তার বিছানার পাশে রাখা টেলিফোন নিয়ে কোথাও ফোন করার চেষ্টা করেন।

এরপর একে একে সবাই খেয়ে উঠলে আবার তারা আগের মতো করে কার্ড খেলায় বসে যায়। সবারই যেন খেলায় নেশা ধরে যায়।

পাশের ঘরে বসে ইসলাম কারো সাথে টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন। কথার টোন শুনে মিতুল বুঝতে পারে সে যে আন্তর্জাতিক কল করে দেশে কারো সাথে কথা বলছেন। কার্ড খেলার মধ্যে মিতুল তার কান ইসলামের কথা বলার দিকে সচল রাখে। সে তার নতুন করে পাসপোর্ট করার কথা বলে, কবে দেশে যাবেন এসব নিয়ে কখনো কন্ঠ নামিয়ে, কখনো সাংকেতিক ভাষায় কথা বলে ফোন রাখেন। কথা বলা শেষ করলেও সে আর সেখানে সবার সাথে কার্ড খেলায় অংশ নেন না। বিছানার উপর হেলান দিয়ে সেদিনের দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা পড়তে থাকেন।

পরের দিন ইসলাম খুব সকাল সকাল তার নিজের অন্য কোনো ব্যক্তিগত কাজে চলে গেলে মিতুল অনেক বেলা পর্যন্ত তার বাসায় ঘুমায়। দুপুর হলে ঘুম থেকে উঠে আগের দিনের যেটুকু কারি ছিল পাতিলে সেটা দিয়ে ভাত খেয়ে চলে যায় তার নিজের বাসায়। এর মধ্যে ইসলাম আর বাসায় ফিরেও আসেন না। ইসলামের এমন লোকোচুরি করার বিষয় মিতুল বুঝতে পেরে ইসলামের সাথে পরবর্তীতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর কিছুদিন পর কি মনে করে ইসলামের বাসায় মিতুল ফোন করলে তার বাসার অন্য একজন ফোন ধরে বললেন, - ইসলাম তো বাসায় নেই, সে দেশে গেছে।

ইসলাম দেশে যেতেই পারে কিন্তু সে একবারও মিতুলকে বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি, এর কারণ কি হতে পারে ভাবতে ভাবতে সেই লোক আবার মিতুলকে বললেন, - আপনি মিয়া আর মানুষ চিনলেন না। আপনাদের দু'জনের মধ্যে শুনেছি এতো খাতির। অথচ সে দেশে গেলো আপনাকে কিছুই বলে যায়নি, এটা কি করে হয়? তাকে এতো ভালো জানেন এটাই আপনার ভালো জানার প্রতিদান নাকি? আপনি ইসলামকে বিশ্বাস করেন, সেকি আপনাকে বিশ্বাস করে, নাকি সব মুখে মুখে? বোঝেন এখন ইসলাম কতোটা যে স্বার্থপর?

মিতুল একবার শুধু প্রশ্ন করে, - সে আবার কবে ফিরবে কিছু জানেন কি?

লোকটি বললেন, - জানলেও আপনাকে তো বলতে মানা করেছে।

একথা শোনার পর মিতুল অবাক হয়ে নিজে নিজেই বলল, - মানুষ এতোটা স্বার্থপর হতে পারে? কাকে আর বিশ্বাস করবো এই দুনিয়াতে। ইসলামের মতো মানুষ তার সাথে এতোটা অভিনয় করলে বাকি জীবনে সে টোকিওতে আর কোনো বাঙালিকে যে বিশ্বাস করতে পারবে না সেটার হিসেব সে কষে ফেলে তখনই।

এর কিছুদিন পরেই ইসলাম জাপান ফিরে আসেন। এসে ফোন করেন মিতুলকে তার ফ্যাক্টরির নাম্বারে। ফোন করে জানালেন, সে দেশে গিয়েছিলেন গোপনে এবং তড়িঘড়ি করে। যাবার আগে তাকে জানিয়ে যাবার সুযোগ ছিলো না। সে দেশে গিয়ে আবার নতুন করে অন্য নামে পাসপোর্ট তৈরি করে জাপান এসেছেন। এখন তার ভিসা আছে। জাপানে তার আর চলা ফেরা করতে কোনো সমস্যা হবে না। তাই সামনে যেকোনো দিন যেকোনো সময় চাইলে তার সাথে দেখা করতে পারে।

ইসলামের সব কথা শোনার পর মনে মনে মিতুল ভাবে, আমি প্রয়োজনে বন্ধু বিহীন জীবন কাটাবো, তবুও তোমার মতো স্বার্থপর মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবো না। দেখাও করবো না কখনো আর। ইসলাম সম্পর্কে মনে মনে এমনটা ভেবে সে তার মন থেকেই মুছে ফেলে ইসলামের সাথে যে তার পরিচয় ছিলো। মিতুল কোনো ভাবেই আর আগের সেই ইসলামকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না। জাপানে ইসলাম আর তার আগের নাম বা পরিচয় কোনোটাই বহন করেন না যে, তাই।

(চলবে)

লেখক, জাপান প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

৪৮৪ রানে ২য় দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিম আউটের পরপরই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকলো টাইগাররা। শেষ বিকেলে...

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫- এর উদ্বোধন

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫ এর উদ্বোধন ও আম চাষীদের সাথে মতবিনিম...

গিলক্রিস্টকে টপকে মুশফিকের বিশ্বরেকর্ড

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে টপকে বিশ্বরে...

এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা; দেশব্যাপী পালনের নির্দেশ

দেশব্যাপী পালনের জন্য এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার,...

এখনই ক্যাবরেরার ছাঁটাই নয়- বাফুফে

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে হারের পর ক্যাবরেরাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক...

সংসদ নির্বাচনে থাকছে না পোস্টার: ইসি সানাউল্লাহ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম ‌‘পোস্টার&rsquo...

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি: উপদেষ্টা ফারুকী

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা...

এখনই ক্যাবরেরার ছাঁটাই নয়- বাফুফে

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে হারের পর ক্যাবরেরাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক...

দেশসেরা ঢাবি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) জরিপে...

ট্রুথ কমিশন গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি: আইন মন্ত্রণালয়

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা