শিল্প ও সাহিত্য
জাপানের গল্প - ১২

প্রথম বান্ধবী রিকা      

পি আর প্ল্যাসিড

মিতুল এক সন্ধ্যায় তার ঘরে বসে টিভি দেখছিলো। এমন সময় রিকা মিতুলের বাসার কাছাকাছি স্টেশনে এসে মিতুলের বাসার ফোন নম্বরে কল করে বললো, আমি আর মিজুকি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। তুমি কি এখন ফ্রি আছো?
মিতুল রিকার ফোন পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। সে কি বলতে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। এক সপ্তাহ আগে ঘুরতে গিয়ে ট্রেনে তাদের পরিচয়। এরপর মিতুল তার বাসার ফোন নম্বর এবং ঠিকানা দিয়ে বলেছিলো কখনো সময় হলে যেন বেড়াতে আসে তার বাসায়। আসলে তাদের বাংলাদেশি খাবার রান্না করে খাওয়াবে। রিকা এবং মিজুকি দুজনের কেউ-ই তাদের প্রথম পরিচয়ে ফোন নম্বর দেয়নি মিতুলকে। এতে মিতুল ধারণা করেছিলো, তার এমন অনুরোধ বৃথা যাবে হয়তো। কিন্তু তারা দু'জনেই আবার মিতুলের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা মিতুলের সামনেই খুব যত্নের সাথে লিখে রেখেছিলো তাদের ডায়রিতে। তখন মিতুল কিছুটা ধারণা করেছিলো, কোনো একদিন তারা এই ফোন নম্বরে কল করে কথা বলতে চাইতে পারে।

চলার পথে মিতুল এমন অনেকের সাথেই কথা বলে। জাপানে বিভিন্ন বয়সের লোকদের সাথে পরিচিত হয়ে সুসম্পর্ক তৈরি করে কথা বলতে এবং সময় সুযোগ হলে এক সাথে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবার চেষ্টা তার বেশ আগে থেকে। এতে সে নানা জনের সাথে দেখা করে কথা বলে জাপানি ভাষা এবং জাপানের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারে। সবাইকে এক সাথে কখনো ঘুরতে যাবার কথা না বললেও কাউকে যদি কখনো ভালো লাগে তাকেই বলে, ছুটির দিনে সময় হলে এক সাথে কোথাও ঘুরতে যাবার কথা। তবে তার অগোছানো বাসায় কাউকে কখনো সাধারণত আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায় না। রিকা আর মিজুকিকেই প্রথম আমন্ত্রণ জানায় তার বাসায় আসার জন্য।

মিতুল অল্প কিছুদিন হয় মাত্র জাপান এসেছে। এখন পর্যন্ত সে খুব ভালো করে ভাষা রপ্ত করতে পারেনি। তার উদ্দেশ্য, জাপানিদের সাথে মেলা-মেশা করলে তার জাপানি ভাষার চর্চাটা ভালো ভাবে করা যাবে। যেহেতু সাধারণ জাপানিদের কেউ-ই তার ভিসা সম্পর্কে জানে না বা কেউ-ই বিষয়টি নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তাই সহজ-সরলভাবে বন্ধুত্ব করার কথা ভাবে সবার সাথে সে। তবে কারো সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ হলে মিতুল বলে, সে জাপানে ছাত্র ভিসা নিয়ে একটা ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউটে পড়ালেখা করছে। ভাষা শিক্ষার কোর্স শেষ হলে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে এও বলে যে, ভবিষ্যতে যদি তার ভালো কোনো মেয়ে বান্ধবী হয় তাহলে তাকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে জাপান।

মিতুলের এমন রসিকতার কথা শুনে সবাই বিশ্বাস করে তার কথা আর এ জন্যই রিকা আর মিজুকি দু'জন তার সাথে আড্ডা দেবার কথা ভেবে কোনো এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সাথে দেখা করতে চলে আসে। জাপানে বেশির ভাগ অফিস আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনি-রবিবার ছুটি থাকে। মিতুলেরও ছুটি। তাই তাদের ইচ্ছে শনিবার মিতুলকে নিয়ে তারা কোথাও ঘুরে রোববার চলে যাবে নিজ নিজ বাসায়।

যেহেতু মিতুল তার ঘর থেকে বের হলে তারা আর কোনোভাবে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না তাই মিতুল তাদের দুজনকে সহজে চিহ্নিত করতে তখনই কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিলো তারা স্টেশনের কোন গেইটে বা কোন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের পরনে কি ধরনের কাপড়, সাথে কি রয়েছে ইত্যাদি। বিস্তারিত জেনে তড়িঘড়ি করে কাপড় পরে রওনা দেয় স্টেশনের দিকে মিতুল।

রিকা আর মিজুকি স্টেশনে অনেকটা সময় মিতুলের জন্য অপেক্ষা করে অস্থির হয়ে যায়। তাই অনুমানের উপর মিতুলের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী পথ ধরে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। মিতুলও স্টেশনের কাছে চলে যায় হাঁটতে হাঁটতে। ওরা দুজন মিতুলকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে চলে গেলেও বুঝতে পারেনি মিতুল যে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেছে। মিতুল স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে দেখে, যে স্থানে ওদের দুজনের থাকার কথা সেই স্থানে নেই। তাই এদিক-সেদিক তাকায় মিতুল। তাকিয়ে দেখে দুজন পাশাপাশি ধীরলয়ে সামনে তার বাসার দিকেই হাঁটছে। মিতুল দূর থেকে তাদের দেখেই চিনতে পারে। চিনেই ওদের দিকে দৌড়ে যায় থামিয়ে দেখা করতে।

হাঁপাতে হাঁপাতে রিকা আর মিজুকির সামনে গিয়ে মিতুল বললো, - তোমরা আমাকে বললে যে স্টেশনের সামনে দাঁড়াবে অথচ না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেছো, কাজটা কি ঠিক করেছো?
- তোমরা এদিকে যে হাঁটছো, আমার বাসা কি এদিকে নাকি? বাসা তো আমার উল্টো দিকে। না জেনে কোথায় যাচ্ছো তোমরা এদিকে? মিতুল রসিকতা করে মিথ্যা বলল ওদের সাথে।
রিকা চোখ বড় গোল করে বললো, - এ্যা? তুমি যে ঠিকানা বলেছ সেই ঠিকানা ধরেই তো আমরা হাঁটছি।
রিফাত হেসে বললো, - না ঠিক আছে, এদিকেই। আমি রসিকতা করলাম। কিন্তু আমি তো এ পথেই স্টেশন গেলাম। তোমাদের তো আমি খেয়াল করিনি? কোন দিক দিয়ে গেলে?
- আমরাও তো ঠিক এই পথেই হাঁটছি। তুমি কোন দিক দিয়ে গেলে আমরা তাহলে কেনো তোমাকে দেখতে পেলাম না?
কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগুতে থাকে। সামনে যেতেই বড় রাস্তার উপর রাস্তা পারাপারের এক সিগন্যাল। সিগন্যাল ক্রস করে হাতের বামদিকে একটা কনভিনিয়েন্স স্টোর। সেই কনভিনিয়েন্স স্টোরের সামনে দাঁড়িয়ে মিজুকি বললো, - মিতুল, তুমি একটু এখানে দাঁড়াও আমরা ভিতর থেকে আসছি। বলে মিতুলকে দাঁড় করিয়ে রেখে ওরা দুই বান্ধবী স্টোরের ভিতর যায়।

মিতুল এ সময় স্টোরের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার উপর দু'দিক থেকে গাড়ি চলাচল করা দেখে। এক সময় কি মনে করে পাশেই এক টেলিফোন বুথের কাছে গিয়ে টেনে ফোনের বক্স খুলে রিসিভার হাতে নেয়। রিসিভার হাতে নিয়েই তার শার্টের বুক পকেট থেকে টেলিফোন কার্ড বের করে সেটা ফোনের ভিতর ঢুকায়। এরপর ছোট নোট খাতা খুলে কয়েকটি পেইজ উল্টিয়ে পরিচিত কারো ফোন নম্বর বের করে ফোন করে তার এক বন্ধুর বাসার নম্বরে। সে ভেবেছিলো বন্ধুকে পেলে তাকে বলবে, তার বাসায় আসতে। কিন্তু অনেকবার ফোন রিং হয়ে ফোন যখন এনসারিং মেসিনে চলে যায় তখন বাংলায় ম্যাছেজ রেকর্ড করে রাখে মিতুল। শেষ কথা ছিলো মিতুলের "অনেগাইশিমাছ"।

পিছন থেকে রিকা আর মিজুকি এসে মিতুলের সেই "অনেগাইশিমাছ" কথাটি শুনে তাকে জিজ্ঞেস করে, - কাকে ফোন করেছিলে? আর কিসের জন্য অনেগাইশিমাস বললে?
মিতুল তাদের দিকে তাকিয়ে বললো, - আমার এক বন্ধুকে আসতে বললাম বাসায়।
রিকা একটু বিরক্ত ভাব প্রকাশ করে প্রশ্ন করলো, - আমরা আজ রাতে তোমার বাসায় থাকার জন্য আসলাম আর তুমি তোমার বন্ধুকে আসতে বলছো? সমস্যা হবে না তোমার বন্ধু আসলে?
মিতুল রিকা আর মিজুকির আগমনে যতটা না খুশি হয় ততটাই ভয় পায় এই মনে করে যে, ওরা দু'জন মেয়ে আর সে একা ছেলে। সারা রাত কিভাবে কাটবে তাদের, এক ঘরে? এটা ভেবেই তার শরীরে ঘাম ঝরতে শুরু করে। কারণ, এমন পরিস্থিতি তার জন্য এটাই যে প্রথম। তাই সে ভাবে, বন্ধুকে আসতে বললে মন্দ হয় না। বন্ধু যদি রাতে আসে তাহলে সবাই মিলে কথা বলতে বলতেই রাত কাটাতে পারবে। এতে আনন্দ হবে বেশ। কিন্তু রিকাদের কাছে এভাবে এক জনের বাসায় রাত কাটানো যে খুব স্বাভাবিক সেটা সে বুঝতে পারেনি। যে কারণে অনেকটা ভালো মনে করেই ফোন করে মিতুলের বন্ধুকে আসতে বলা।

মিতুল তাকিয়ে দেখে তাদের দু'জনের হাতে বেশ কিছু বিয়ার আর পটেটো চিপস। মিতুল যদিও এসবে অভ্যস্ত নয়, তার পরেও রিকাদের বুঝতে দিতে না চেয়ে বললো, - তোমরা আজ আমার মেহমান। কোথায় আমি কিনে নেবো তা না করে আমার বাসায় তোমরা এতো কিছু কিনে নেবার কি প্রয়োজন ছিলো?
রিকা মুখ গম্ভীর করে বললো, - তুমি মনে হয় অনেক খেতে পারো। এ কয়টা শেষ হলে আমরা না হয় মধ্যরাতে বাইরে এসে আবার কিনে নেবো। বলেই প্রশ্ন করে, - তোমার ঘরে রান্না আছে তো, নাকি বাইরে এসে আবার রাতে খেতে হবে?
- এখনও রান্না করিনি। তবে রান্না করতে বেশি সময় লাগবে না। এনিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

কাছেই বাসা। সেখান থেকে চার পাঁচ মিনিটের পথ। বাসায় গিয়েই প্রথম তারা বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে বসে। এমনভাবে ফ্রি হয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসে, দেখে মনে হবে, যেন কত কাল আগে থেকে সম্পর্ক তাদের। বসেই রিকা হাতে টিভি রিমোট নিয়ে চ্যানেল বদলে হাসির প্রোগ্রাম দেখতে শুরু করে। এ সময় মিতুল ঘরে কিছু হালকা খাবার ছিলো সেগুলো ওদের সামনে ছোট একটা টেবিলে দিয়ে বলে, - তোমরা বসে হালকা কিছু খেতে থাকো। আমি রান্না বসিয়ে তারপর আসছি।

মিজুকি বললো, - এই, আমি দেখবো তুমি কি ভাবে কারি রান্না করো। তোমাদের দেশি রান্না আমি শিখতে চাই।
রিকা বললো, - তার আগে আমরা বিয়ার খুলে কাম্পাই করে নেই। তারপর যে যার মতো কাজ করো। আমি বসে না হয় টিভি দেখি। আমি পরে রান্না খেয়ে যদি স্বাদ হয় তবেই রেসিপি জেনে নেবো আর মিজুকি শিখলেই আমার জানা হবে। বলে, পলিথিনের ব্যাগ থেকে তিনটা বিয়ারের কৌটা বের করে সামনে রাখে। মিজুকি পটেটো চিপসের প্যাকেট দুই হাতে টেনে খুলে মিতুলের সামনে এগিয়ে ধরে বলে, - আজকে দেখবো তুমি কতোটা খেতে পারো।

মিতুল রসিকতা করে বললো, আমি আসলে বিয়ার খাওয়ায় অভ্যস্ত নই। আমি হুইস্কি খাই। বলে সামনে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলে একটা অর্ধেক করে রাখা হুইস্কির বোতল নিয়ে এসে দেখায় তাদের। সেটা আসলে সেও খায়নি। তার এক বন্ধু এসে অনেকদিন আগে অর্ধেক খেয়ে পুরোটা শেষ করতে না পেরে রেখে যায়। কালেভদ্রে সেটা এখনো ফ্রিজে আছে বলেই দেখাতে পারে ওদের মিতুল। মিতুলের এটা দেখে রিকা আর মিজুকি মনে করে তারা তাহলে কেনার আগে মিতুলকে জিজ্ঞেস করে তারপর বিয়ার কিনলে ভালো হতো। বিয়ার যেহেতু কিনে নিয়ে এসেছে তাই ক্ষমা চেয়ে রিকা বললো, - আজ না জেনে ভুল করে যেহেতু বিয়ার নিয়ে এসেছি কাল রাতে না হয় তোমাকে নিয়ে হুইস্কি খাবো। নো প্রোবলেম। নো প্রোবলেম। রিকা এমনভাবে "নো প্রোবলেম" কথাটি উচ্চারণ করে, মনে হয় ইংরেজিতে বেশ দক্ষ সে।

রিকাকে খুশি করতে মিতুলও বলে, - ইটস ওকে। নেক্সট টাইম উই শ্যাল এনজয়। বলেই বিয়ারের কৌটা হাতে দিয়ে বলে, লেটস ডু কামপাই।
তিনজন সমানে সমানে কাম্পাই বলে মুখে ডগ ডগ করে বিয়ার ঢেলে হাতে করে কিছু পটেটো চিপস আর বিয়ারের কৌটা নিয়ে মিতুল আবার চলে যায় কিচেনে রান্না করার উদ্দেশে। মিতুলের পিছু পিছু মিজুকিও যায় কিচেনে। সেখানে গিয়ে মিতুল ফ্রিজের উপর নিচ প্রতিটা ডোর খুলে শেষে ডিপ-ফ্রিজ খুলে মিজুকিকে বলে, চিকেন মাংস রান্না করবে। বলে একটা মাংসের প্যাকেট বের করে সে ফ্রিজ থেকে।

তাড়াতাড়ি করে রান্না করতে বেসিনে বড় এক প্লাস্টিকের বোলে মাংস রেখে সে গরম পানিতে ভিজিয়ে পাশেই পিয়াজ কাটতে শুরু করে। এ সময় মিজুকি সুইচ টিপে চুলায় আগুন জ্বালায়। একটুপর রিকা এসে রসিকতা করে বললো, - তোমরা দুজনে কি রান্না করছো আমি দেখতে এলাম।
মিতুল বললো, আজ তেমন কিছুর আয়োজন করবো না। যেহেতু বিয়ার খাওয়া শুরু করেছো তাই বিয়ার নিয়েই সময় কাটালে ভালো হবে। কালকে না হয় ভালো কিছুর আয়োজন করা যাবে।

পাশে দাঁড়িয়ে মিজুকি আর রিকা তাকিয়ে দেখে। মিতুল একটা পাতিল চুলায় বসিয়ে সেটাতে কাঁটা পিয়াজের পুরোটা ঢেলে তাতে সবজির তেল দিয়ে কিছু মসলা চামুচ দিয়ে তাদের পরিমাণ দেখিয়ে পাতিলে পিয়াজের উপর ছিটিয়ে দেয়। এরপর লবণ দিয়ে সব একসাথে মাখিয়ে মাংস পুরোটা পাতিলে ঢেলে দিয়ে লম্বা কাঠের চামুচ দিয়ে নাড়ে। কিছুক্ষণ নেড়ে একটা ঢাকনা দিয়ে পাতিল ঢেকে দিয়ে বললো, - চলো এটা হতে থাকুক আমরা ঘরে বসে বিয়ার খাই আর কথা বলি।

এরপর তিনজন বেশ রিলাক্স করে সেখানে বিয়ার নিয়ে বসে। একটু পরপর মিতুল উঠে গিয়ে তার চুলায় কারি দেখে তা নেড়ে দিয়ে আসে। একবার মিজুকি তার সাথে উঠে যায় কারি দেখতে। মিজুকির সামনে মিতুল চামুচ দিয়ে কারির ঝোল নিয়ে লবন ঠিক আছে কিনা তা টেস্ট করে। সব কিছু ঠিক আছে দেখে মিজুকিকে এক টুকরো মাংস খেতে দিয়ে বললো, - নাও, তুমি আগে কারি টেস্ট করে দেখো। তোমার কাছে স্বাদ হলে বিয়ার দিয়ে এখন মাংস খাওয়া যাবে। বলে একটা বাটি নিয়ে সেই বাটিতে আরো এক পিস মাংস দিয়ে বললো, - রিকাকেও এক পিস খেতে দাও। সেও খেয়ে দেখুক। বলেই চুলার আগুন নিভিয়ে চলে আসে আগের সেই শোবার ঘরে।

এর মধ্যে তিনজনই কয়েক কৌটা করে বিয়ার খায়। খেতে খেতে রাত গভীর হলে তাদের কারোই আর ভাত খাবার কথা মনে থাকে না। ক্ষুধাও যেন নেই কারো পেটে এখন আর। এক সময় ঘুম আর নেশায় টলতে থাকে রিকা আর মিজুকি। মিতুলও যে বসে থাকতে পারছিলো না আর।

মিতুল ওদের ভাত খাবার কথা বললে দুজনের একজনও ঠিক মতো কথা বলতে পারছিলো না। তাই সে বললো, বিছানায় উঠে শুয়ে থাকতে। মিজুকি বিছানায় উঠে শুলেও রিকা মেঝেতেই হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। তখন কোনো দিক না দেখে মিতুল পাশেই তার সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমানের চেষ্টা করে। এক সময় মিতুলও রিকার সাদা হাত পায়ের দিকে চোখ রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন তাদের ঘুম ভাঙলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা বাজছে। এরপর উঠে হাত মুখ ধুয়ে সোফায় বসলে মিতুল বাইরে থেকে নাস্তা কিনে এনে তাদের খেতে দেয়। নাস্তা সেরে গোসল করে বাইরে যাবার জন্য রেডি হয়। দুপুরের আগে আগে তিনজন বেরিয়ে যায় টোকিও থেকে দূরে কোথাও বেড়াতে যাবার জন্য। এ সময় স্টেশন যেতে যেতে আগের রাতের নেশার ভাবটা থাকা অবস্থায় ঘরে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিৎপাটাং হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার গল্প করে আর হাসে তিনজন মিলে।
সেদিনের পর মিতুলের জাপানে বান্ধবী করার বিষয়ে এক ধরনের নতুন ধারণা জন্মায়। সেটাই সে ভাবে সারাদিন আর তাদের সাথে আনন্দ করে ঘুরে বেড়ায়।

(চলবে)

লেখক, জাপান প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

লক্ষ্মীপুরে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা-ভাংচুর 

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে...

ইন্দোনেশিয়ায় শীতল লাভায় নিহত ৬৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার স...

আগুনে শতাধিক ঘর-দোকান ভস্মীভূত

জেলা প্রতিনধি : গাজীপুরের ভোগড়া এলাকায় আগুনে তিনটি কলোনির...

দেশ ছাড়ল বাংলাদেশ দল

স্পোর্টস ডেস্ক : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্ব...

আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১৬ মে, ঐতিহা...

জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্যজনক ভ...

ইসরায়েলকে নিষিদ্ধে ফিফায় ভোট

স্পোর্টস ডেস্ক : আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ কর...

সড়কে প্রাণ গেল যুবলীগ নেতার 

জেলা প্রতিনিধি: পিরোজপুর জেলার না...

আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণ, নিহত ৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জার্মানির ডুসেলডর্ফে একটি আবাসিকভবনে বিস্...

ভবন থেকে পরে ২ শ্রমিক নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বাসাবো...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা