মতামত

বিশ্বে বাজছে অদৃশ্য রণডঙ্কা

মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক

বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় এক সংক্রমণ সন্ত্রাস চলছে। জিম্মি হয়ে পড়েছে পৃথিবী। নিস্তব্ধ ঢাকা, নিস্তব্ধ দেশ, এমনকি নিস্তব্ধ আজ গোটা পৃথিবী। সন্ত্রাসী অতি ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস যার নাম কোভিড-১৯। টার্গেট এ গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ। চোখে দেখা যায় না, এমনকি সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও দেখা যায় না, এত ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের আক্রমণ থামিয়ে দিয়েছে পৃথিবী। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশটাও বর্তমানে অতিক্রান্তিকালের মধ্য দিয়েই চলছে। অদৃশ্য এক দানব সবাইকেই বাধ্য করেছে গৃহবন্দি করতে। এভাবে ঘরবন্দি থাকা মানুষের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবুও মানুষকে আপাতত: থাকতে হবে ঘরবন্দি।
বিশ্বে ফেব্রুয়ারি থেকেই কোভিড-১৯ মারাত্মক আকার ধারণ করে। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম ইতালি ফেরত দুই প্রবাসী এ রোগে আক্রান্তের খবর জানা যায়। ১৪ মার্চ জানা যায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ। ২৩ মার্চ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায় রোগটি এখন আর বিদেশফেরত প্রবাসীদের মধ্যে সীমিত নেই, কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে। ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রমণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শুরু হয় দেশব্যাপী লকডাউন। দেশের এই ক্রান্তিকালে খাদ্যাভাবে দিন মজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের নিদারুন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে পতিত হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ এতে শঙ্কা প্রকাশ করেন, যেহেতু কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে, তাহলে কি এ ঘরমুখো মানুষগুলো প্রাণঘাতী ভাইরাসটিও সঙ্গে নিয়ে গেল! এরপর দেশব্যাপী বিচ্ছিন্ন সংক্রমণের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, প্রতিদিন অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পাল্লা দিয়ে মৃত্যুও বাড়ছে।

বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশল না নিলে সংক্রমণ আরও প্রকাশ্যে আসবে। নীতি-নির্ধারক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে সময় এখন ভাইরাসবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। পিসিআর টেস্ট সেন্টার আরও বাড়ানো, তবে বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় তা অপ্রতুল। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ বয়ে আনতে পারে করুণ ট্র্যাজেডি। কেবল মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রচারণা বারবার ভেসে উঠছে টেলিভিশনে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদি দুর্ভাগ্যবশত: দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর ভেতরে ভাইরাসটির ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে, তাহলে শিগিগরই গোটা জাতির অপ্রত্যাশিত ভাগ্য বিপর্যয় নিশ্চিত! ওদিকে অধিকাংশ খেটে খাওয়া মানুষের সামান্য সঞ্চয় ফুরিয়ে যাচ্ছে। মানুষ অপেক্ষায়, মুক্তি আসবে কবে; ভাবছে, কতদিন? কতদিন মানুষকে এই তাড়া করবে মহামারি-মৃত্যু! এখনো মানুষের জানা নাই। বিশ্বের ঘরবন্দি মানুষের জন্য আরো তীব্র বিপদের রণডঙ্কা বাজছে।

কোভিড-১৯ ভাইরাসটির আকৃতি ও গঠন হচ্ছে মুকুট আকৃতির এ আরএনএ ভাইরাস একটি তৈলাক্ত (লিপিড) আবরণে মোড়ানো, যে কারণে সাবান দিয়ে হাত ধুলে ভাইরাসটিকে ধুয়ে ফেলা যায়। তৈলাক্ত পদার্থ, যেমন নারিকেল তেল, শীতকালে (ঠান্ডায়) জমে যায় যা তাপ দিয়ে গলানো যায়। এ ভাইরাসটির তৈলাক্ত আবরণ তেমনি গরম আবহাওয়া গলে না গেলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য সতর্ক করেছে, শীত বা গরম এ দুই আবহাওয়াতেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য শক্তিশালী। ছড়িয়ে পড়ার অর্থ প্রকৃতিতে বা মানবদেহে সক্রিয় থাকার ক্ষমতা। প্রকৃতিতে এটা কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকে। মানুষের শরীরে প্রবেশের পর রোগের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকলেও এ ভাইরাস ১২ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
কোভিড-১৯ আক্রমণ ক্ষমতা মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রের উপরের দিক অর্থাৎ শ্বাসনালি বা গলা দিয়ে ঢুকে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে। মানব দেহযন্ত্রের যুদ্ধ এখান থেকেই শুরু। তবে কোভিড-১৯ সাধারণত: শরীরে ঢোকে শ্বাসযন্ত্রের নিচের দিক অর্থাৎ ফুসফুস দিয়ে। আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে, ভাইরাসটি কি সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যায় না। নাক দিয়ে ঢুকে, শ্বাসনালি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুস পর্যন্ত বাতাস পৌঁছানোর পথটি সোজা নয়, বাঁকানো। অর্থাৎ নিঃশ্বাসের সঙ্গে নাক বা মুখ দিয়ে ভাইরাস ঢুকলেও তার অধিকাংশ ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই আটকা পড়ে শ্বাসনালিতে। নাক, মুখ কিংবা চোখ যেদিকে দিয়েই ভাইরাস ঢুকুক না কেন, গলা দিয়ে যেতে হবে। করোনাভাইরাস নিয়ে আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ কিছু লোক সমাজে অবাধে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু শনাক্ত হবে না। অথচ তাদের সংস্পর্শে যারা আসবে তাদের মধ্যে অর্ধেক লোক রোগে আক্রান্ত হবে আবার বাকি অর্ধেক আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ অবস্থায় গলায় করোনাভাইরাস নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। বোঝা যাবে না, কার সংস্পর্শে সংক্রমণ ঘটল। পরীক্ষা না করা পর্যন্ত বোঝা যাবে না কে করোনাভাইরাস মুক্ত, কে সুস্থ আর কে প্রকৃত রোগী।

কোভিড-১৯ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে মিউকাস মেমব্রেনের উপরের পিচ্ছিল আবরণ যেন আর্দ্র ও অটুট থাকে। সে জন্য পর্যাপ্ত পানি বা তরল পদার্থ পান করা আবশ্যক। তবে খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা পানীয় বর্জনীয়। সেই সঙ্গে দেহের ইমিউনিটিকে শক্তিশালী রাখতে খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আমিষ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারকে গুরুত্ব দিতে হবে। লেবু, আমলকী, কমলা, কাচাঁমরিচ, গাজর, পালংশাক, ডিম, চিনাবাদাম ইত্যাদি। আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমাতে হবে। স্ট্রেস দেহকে দুর্বল করে দেয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে তাঁর বিধান ও রাসুল (সা:)-এর আদর্শ অনুসরণ করলে তাঁর সকল বান্দাকে নিশ্চয় মহামারী থেকে মুক্তি দেবেন, ইনশাআল্লাহ।

লেখক: প্রাবন্ধিক

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পেলে সব কাজ বিফলে যাবে: সিইসি

প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি বাছাইয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশী...

২৯ এপ্রিল: বিপ্লবী রবি নিয়োগীর জন্মদিন

রবি নিয়োগী ১৯০৯ সালের ২৯ এপ্রিল শেরপুরে এক বিখ্যা...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বেশ কিছু খেলা প্রচারিত হবে টেলিভিশনের...

অবৈধ আদেশ পালন করে জনরোষের শিকার পুলিশ: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত ১৫ বছর পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরি...

ফেনী ছাত্রদলের তদন্ত কমিটি

ফেনীর জনপ্রিয় এক পত্রিকার চীফ রিপোর্টার আরিফ আজমকে হুমকি ও ফেনী সরকারি কলেজ গ...

সাবেক সংসদ সদস্য তুহিনের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহ...

আলুবীজের দরপতনে দুশ্চিন্তায় বগুড়া ও জয়পুরহাটের চাষিরা

আলুবীজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে ২৬ টাকা দরে বি...

বগুড়ায় পৌরসভার ঢালাই রাস্তার ওপর ইটের প্রাচীর নির্মাণ

বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকায় পৌরসভার আরসিসি ঢালাই রাস্তা কেটে এবং ভেঙে বাড়ির সী...

ভালুকায় হাইওয়ে পুলিশের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা হাইওয়ে থানা কর্তৃক আয়োজিত “ওপেন হাউজ...

কটিয়াদীতে বজ্রপাতে এক জন নিহত

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ব্জ্রপাতে মো: শাহজাহান (৪৫)ন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা