নিরাপদে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা
জাতীয়
বিষফোড়া হয়ে উঠছে!

নিরাপদে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা

সান নিউজ ডেস্ক : জন্মভূমি মিয়ানমার থেকে দেশটির সরকারের নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ইয়াবা, মাদক, মানব পাচার ও বাজার-ঘাট নিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন : গ্রেফতারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল

আশ্রয় শিবিরের অভ্যন্তরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। নিরবে বাড়ছে পরিসর, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলছে অস্ত্রের মহড়া, ঘটছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড।

বিগত ৫ বছরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি তথ্যমতে ১২০টিরও অধিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

চলতি বছরের গত দুই মাসেই দুই রোহিঙ্গা নেতাসহ ১০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা সামনের দিনগুলোতে আরও হত্যাকাণ্ড ও ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছেন। এসব সহিংস ঘটনায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

আরও পড়ুন : ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২২

বিশ্লেষকদের মতে, প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গাদের অপরাধী কার্যক্রম থেকে মুক্তির উপায় নেই। তবে পরিকল্পিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হলে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের অপতত্পরতা কমানো সম্ভব।

গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগামীতে আরও বড় ধরনের নাশকতার ঘটনাও ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক প্রায় সব হত্যাকাণ্ডে আলোচিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপের হাত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ সংস্থা।

প্রসঙ্গত, আজ ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর। জ্বলন্ত ঘরবাড়ি আর প্রিয়জনদের লাশ পেছনে ফেলে শরণার্থীদের সেই ঢলের পর ৫ বছর অতিবাহিত হলেও একজন রোহিঙ্গাও জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেননি। পাশাপাশি এই সময়ে বাংলাদেশেই জন্ম নিয়েছে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশু।

আরও পড়ুন : ঢাকা-নয়াদিল্লি নদী কমিশনের বৈঠক

এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান। প্রাণের ক্ষতি না হয়ে সুস্থ ও শান্তির মাধ্যমে তারা ফিরে যেতে চান জন্মভূমিতে।

বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে এসব কথা বলেন কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দারা।

সংবাদ মাধ্যমকে রোহিঙ্গারা জানান, আয় রোজগার না করে খাবার পেলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা শান্তিতে নেই। তাদের সবসময় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তা। কখন শান্তিতে নিজ দেশে ফিরে পুনরায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা যায় সেই চিন্তায় কাটে তাদের সময়।

আরও পড়ুন : সেনানিবাসের কাজ পরিদর্শনে রাষ্ট্রপতি

এনায়েত উল্লাহ (কুতুপালং ক্যাম্প-১, ব্লক এফ/৬ এর বাসিন্দা) বলেন, ‘এ দেশ আমাদের না, আমরা এখানে পাখির মতো পরাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফিরে আবারো স্বাধীনভাবে ঘুরে ফিরে জীবন অতিবাহিত করতে চাই’।

ক্যাম্পের রোহিঙ্গা চিকিৎসক মো. হাফিজ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি দিয়েছে। তারপরও আমরা শান্তিতে নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে সবসময় চিন্তা কাজ করে। কখন আমরা ফিরতে পারবো আমাদের দেশে। এখনে আমাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত করার কোনো উপায়ও নেই। সবমিলিয়ে এখানে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।’

আরও পড়ুন : পিটিয়ে মাদকাসক্ত যুবক হত্যা

রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পে থাকার মন নেই আমাদের। যত তাড়াতাড়ি নিজ দেশ মিয়ানমারে চলে যেতে পারি তত ভালো। বাংলাদেশ সরকার আমাদের সাহায্য করেছে সেজন্য ধন্যবাদ।

তিনি আরও বলেন, তবুও এই ত্রিপলের বাসায় মোটেও থাকতে রাজি না আমরা। আমাদের একটাই দাবি শান্তিপূর্ণভাবে ফিরতে চাই নিজের মাতৃভূমি মিয়ানমারে।’

এদিকে বুধবার (১৭ আগস্ট) রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, ‘আমি ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকেই নিশ্চিত নিরাপত্তার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরতে চায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তারা এদেশে আবারও ফিরে আসতে পারে। যদিও মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল।’

আরও পড়ুন : ইভিএমে অনিয়মের কোনো প্রমাণ নেই

অপরদিকে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর উপলক্ষ্যে ক্যাম্পে পৃথকভাবে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা।

২০১৭ সালের গণহত্যার বিচার দাবি ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনসহ নানা দাবিতে রোহিঙ্গারা এ সমাবেশ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উখিয়ার অন্তত ৬ থেকে ৯টি ক্যাম্পে পৃথকভাবে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ হবে।

এটি আনুষ্ঠানিক কোনো সমাবেশ নয়। শুধু নিজ নিজ ক্যাম্পে মানববন্ধন করার সুযোগ পাবেন রোহিঙ্গারা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন : ক্ষমতায় রাখতেই ১৫০ আসনে ইভিএম

আশ্রয়ন ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ এপিবিএন-এর অধিনায়ক এডিআইজি হাসান বারী নুর বলেন, রোহিঙ্গারা দিনটি স্মরণে মানববন্ধনের আয়োজন করছে। এটি বড় কোনো সমাবেশ বা মহাসমাবেশ নয়। সমাবেশের কোনো অনুমতিও নাই।

রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, মূলত রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের আস্থা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে কথিত রোহিঙ্গা সংগঠন আরকান সালভেশন আর্মি (আরসা)।

এ সুযোগে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং নগদ টাকা দিয়ে নিজ দলের পরিধি ও আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যাদের ক্ষমতা বেশি তারাই সিংহভাগ ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে। এটা করতে গিয়ে যারা সেই গ্রুপের কথার বাইরে যায়, তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন : এবার দুই ছাত্রীকে সেই নেত্রীর নির্যাতন

এদের মধ্যে যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সেদেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়।

চলমান সময়ে মিয়ানমার সরকারের যোগাযোগ বেশি সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সঙ্গেই। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনকে ধরতে মাস দুয়েক আগে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল বিজিবি।

গোয়েন্দা তথ্যমতে, আলোচিত মাস্টার মুন্না গ্রুপ, ডাকাত হাকিম গ্রুপ, জাবু গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপসহ অন্তত ২ ডজনের অধিক ছোটবড় সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে।

ইয়াবাসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি নবী হোসেন সব গ্রুপকে নিয়ে জোট বেঁধেছে। এখন সব গ্রুপ নবী হোসেনের নির্দেশনায় কাজ করছে। তাদের হাতে বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মজুতও রয়েছে।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১৭ জন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্ব...

সকালে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বা...

২১ বছর পর পৃথিবীতে সৌরঝড়ের আঘাত 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২১ বছর পর পৃথিবীতে শক্তিশালী সৌরঝড় আঘাত...

ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড মিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেব...

টাইগারদের শ্বাসরুদ্ধকার জয়

স্পোর্টস ডেস্ক : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৫ র...

বিশ্বকাপের দল ঘোষণা কাল

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে...

আবারও বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবারও দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। শনিব...

এসএসসির ফল কাল, জানা যাবে যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফল আগামীকাল রোবব...

বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যুৃ

জেলা প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে ২ নির্মাণশ্রমি...

রাজনীতিতে পরিত্যক্তদের আওয়াজই বড়

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজনীতিতে কিছু পরিত্যক্ত মানুষ আছে, যারা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা