শেরপুর প্রতিনিধি:
নিজে ভিক্ষা না করলে চলে না একদিনের আহার, আর সেই তিনিই কিনা দান করলেন ত্রাণ তহবিলে! হ্যাঁ, বলছি শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের কথা।
কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তার জন্য ইউএনও’র ত্রাণ তহবিলে ভিক্ষুক নজিমুদ্দিন দান করলেন তার জমানো ১০ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বাতিয়াগাঁও এলাকায় ইউএনও রুবেল মাহমুদের হাতে এ টাকা তুলে দেন নজিমুদ্দিন।
নিজের ভাঙা বসত-ঘর মেরামত করার জন্য গত দুই বছরে ভিক্ষা করে ওই টাকা জমিয়েছিলেন নজিমুদ্দিন। ৮০ বছর বয়স্ক ওই ভিক্ষুক কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে।
ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের কাছে দানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'ভিক্ষা করে খাইয়ে-খুইচরে (খরচ করে) গত দুই বছরে এ টেহা (টাকা) জড়ো করছি। আমার ঘরডা ভাঙে গেছে গ্যা। এহন আর ঘর-দরজা দিলাম না। দ্যাশ এহন কষ্ট করতাছে, আমি এ টেহ্যা ইউএনও সাহেবের হাতে দিলাম। দ্যাশেরে দিয়ে দিখ, খাইয়ে বাঁচুক।'
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দী হয়ে পড়া কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
গত রবিবার (১৯ এপ্রিল) ইউএনও রুবেল মামুদের নির্দেশে খাদ্য সহায়তার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'দি প্যাসিফিক ক্লাব'এর সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা কর্মহীন অসহায় দরিদ্র মানুষদের তালিকা প্রণয়নে গান্ধীগাঁও গ্রামে যান। এ সময় ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ইউএনর’র পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান তারা।
ভিক্ষুক নজিমুদ্দিন ওই তালিকায় তার নাম না ওঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। এবং বলেন, নিজের বসত ঘর মেরামত করার জন্য গত দুই বছরে ভিক্ষা করে জমিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। এ টাকা স্বেচ্ছায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায়দের খাদ্য সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে দান করতে চান তিনি।
পরে মঙ্গলবার ওই ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে ইউএনও’র হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন নজিমুদ্দিন।
এ সম্পর্কে ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের দান মহানুভবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবানদের এ দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সান নিউজ/সালি