জাতীয়

টুকরিতে কেটে গেলো দুই দশক

জাহিদ রাকিব

বাঁশের তৈরি একটি টুকরি। এই টুকরিতেই আয়-রোজগার। এটিতেই রাতের ঘুম। তাও খোলা আকাশের নীচে। কাজ করতে করতে ঘাড় যায় বেঁকে। ঘাড় ব্যথা এমনকি বড় ধরনের রোগ বাসা বাধে শরীরে। তবুও থেমে নেই কাজ। এতো কাজের পরও ফিরে না ভাগ্য। কপালের দোষ দিয়ে করে জীবন পার। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিনতি বা টুকরি শ্রমিকদের জীবনগাথার এমনই চিত্র। সময় পাল্টে কিন্তু বদলেনি এসব শ্রমিকদের ভাগ্য।

দীর্ঘ শ্বাস নিলেন মিনতির কাজ করা মো. মুরাদ ইসলাম (৪৮)। বললেন, ২৮ বছর বয়সে কারওয়ান বাজারে আসেন তিনি। সেই তখন থেকে একটা টুকরি নিয়ে ২০ বছরের পথ চলা তার। রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের কেনা পণ্য টুকরিতে বহন করে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসছেন তিনি।

শনিবার (৩১ জুলাই) কারওয়ান বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ে মিনতি শ্রমিকদের। তাদেরকে বলতে শোনা যায় মামা, আমারে দ্যান। আমি তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেবো। আপনার মালের (কাঁচা সবজি) ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেবো।

পরে কথা হয় টুকরি শ্রমিক বা মিনতির কাজ করা মো. মুরাদ ইসলামের সাথে। মুরাদের বাড়ি বরিশাল জেলায়। গত ২০ বছর আগে জীবিকার খোঁজে কারওয়ান বাজারে আসেন তিনি। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তার এ কাজ।

মুরাদ সান নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন এখানে কাজ করতে করতে একটা মায়ায় পড়ে গেছি। শরীরটা ভালো নেই। ঘাড়ে অনেক রোগ হয়ে গেছে। বউ পোলাপাইনের খাবারের জন্য পড়ে আছি এখানে। তিনি বলেন মাথায় এক টুকরি বহন করতে করতেই কেটে গেলো ২০ বছর কিন্তু বদলেনি আমার ভাগ্যের চাকা।

মুরাদের মতো আরও সাত শতাধিক ‘মিনতি’ শ্রমিক রয়েছে এই কারওয়ান বাজারে।

যাদের প্রত্যেকে এই বাজারে মিনতির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনায় লকডাউনের কারণে বাজারে মানুষ কম আসায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। এতে মিনতি শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে নানা টানাপোড়েন।

মিনতির কাজ চল্লিশোর্ধ্ব হারুন মিয়া। বাড়ি রাজশাহী জেলায়। বাড়িতে ২টা কিস্তি আছে। আগে মিনতির কাজ করে তার ৭০০-৮০০ টাকা রোজগার হতো। আর লকডাউনে পাইকার মাল কম কেনায় রোজগার কমে গেছে।

রমজান মিয়া দীর্ঘ ১৫ বছর এই বাজারে মিনতির কাজ করেন। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা এই বাজারে বেচা-কেনা হয়। আর ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন ভাগ হয়ে এখানে আমরা মিনতির কাজ করি।

রমজান জানান জানান, আমাদের কারো কারো টুকরি নেই। তাদের মধ্যে এক ধরনের মহাজন আছে যাদের টুকরি আছে। একেক মহাজনের ৫০ থেকে ৬০টি করে টুকরি আছে। এসব টুকরি প্রতি দিন ২০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আগে ৪-৫ টাকা ভাড়া নিলেও এখন মহাজনরা নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।

রমজাম মিয়া সান নিউজকে বলেন, প্রতি টুকরিতে চার বা পাঁচ পাল্লা (২০-২৫ কেজি) মাল ধরে। চার থেকে পাঁচটি টুকরি পাইকারের রিকশা ভ্যানে করে পৌঁছে দেয়া হয়। প্রতি ভ্যান দুই’শ টাকা। এসব মাল ফার্মগেট, শান্তিনগর থেকে শুরু করে রাজধানীর সব বাজারে পৌঁছে দেয়া হয়।

এতে যে টাকা আয় হয় তাতে মিনতি ভাড়া, খাওয়া ও চা-নাস্তার পয়সায় চলে যায়। সামান্য টাকা থাকে যা দিয়ে কোনভাবে সংসার চলে। আগে হোটেলে ভাত খেতে লাগতো ২০-২২ টাকা, এহন লাগে ৫০-৬০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে তাদের নাভিশ্বাস হলেও পাইকাররা টাকা বাড়ায় না। রাত জেগে কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেলে পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকতে হয়। তার মতো সকল শ্রমিকের একই দশা বলে তিনি জানান।

মিনতির কাজ করা মুরাদ সান নিউজকে জানায়, এখানে আমাদের কোন সমিতি নেই। নেই কোন চাঁদাবাজি।

মিনতির কাজ করা এই মানুষগুলো আক্ষেপ করে বলে, কাঁচা মালের মূল্য দিন দিন বাড়লেও আপনাদের পারিশ্রমিক বাড়ছে না। বেশি দাম চাইলে পাইকাররা কাজ দেয় না। কাজ না করলে খাবো কি। তই কেউ প্রতিবাদ করে না। পাইকাররা কম দামে মাল কিনে চড়া দামে বিক্রি করলেও তাদের কপাল ফেরে না বলেও তিনি জানান। ‘আমরা আর কিছু নয় ন্যায্য অধিকার চাই’ বলে তিনি জানান।

সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউনে সহযোগিতা পান কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই করোনায় এক টাকাও কোথাও থেকে সাহায্য পাই নাই। আমাদের জন্য কেউ মাথা ঘামায় না। দেশে কোন বিচার নাই, কোন সরকার নাই। সবাই গলাবাজ, বলে গালি দেন তিনি।

কাঁচামাল কিনতে আসা নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান সান নিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করি তাদের বেশি টাকা দেয়ার। আড়তদাররা কারণে-অকারণে মালের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় আমরা বেশি টাকা দিতে পারি না জানান তিনি।

সাঈদ নামের এক মিনতি জানান, তারা খোলা আকাশের নীচে ঘুমান। কারওয়ান বাজারে দু’রাস্তার মাঝখানে যে আইল্যান্ড এখানেই বেশিরভাগ টুকরি শ্রমিক ঘুমায়। ঝড়-বৃষ্টি হলে কোন ফাঁকা আড়তে অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, তাদের একটি তালিকা করে সরকার কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে। তা ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থাও দিতে পারেন। কেননা দীর্ঘদিন ঘাড়ে বোঝা টেনে অনেকেই শরীরে নানা ধরনের রোগ-বালাই বাধিয়ে ফেলে।

সান নিউজ/জেআই/এফএআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে ৯ম দিনের আপিল শুনানি চলছে

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর জন্য শুরু হওয়া আপি...

নদীর পাড়ে চলছে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

মাদারীপুরের প্রধান দুটি নদী—আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ...

খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তে মনোনয়ন পেলেন সিলেটের আরিফুল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেটের বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র আর...

জোহরান মামদানির জয়ে ট্রাম্পের হুশিয়ারি

নব-নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্ব...

লিবিয়ায় বাংলাদেশী যুবক অপহরণ, ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

লিবিয়ায় অপহরণ করে বাংলাদেশী প্রবাসীর কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আদায়ের অপরাধে মানব...

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে আগামী ২...

বিএনপি ভেসে আসা দল নয়, বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না

বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না, উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপা...

গুম প্রতিরোধ আইনে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ স...

সৌদি আরবে ১৭ হাজার নারী শিক্ষকে দেয়া হবে সংগীত প্রশিক্ষণ

সৌদি আরব সরকার বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগীত শিক্ষা চালুর বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের শ...

‘ঘি আমাদের লাগবেই, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাঁকা করব’ — নো হাংকি পাংকি

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভোটের দাবিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা