নিজস্ব প্রতিবেদক : বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এক বছর ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রকৃত সম্পদের মালিকানা জানতে বদিউজ্জামান এবং তার দুই স্ত্রী নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানাকে সম্প্রতি সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য দুদক নোটিস দিলেও তারা এর জবাব না দিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
বদিউজ্জামান ও তার দুই স্ত্রী নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানার নামে দেশে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকলেও তাদের কোনও আয়কর নথি নেই। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান ৩৮২ কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বিপুল সম্পদের মালিক হয়েও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বদিউজ্জামান কখনো আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। শুধু ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ২০১৪ সালে তিনি ই-টিআইএন নিয়েছেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে এডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিশাল অঙ্কের শেয়ার কেনা ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ছাড়াও বিপুল পরিমাণের অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ১৪৮ বিঘা জমির ওপর বদিউজ্জামানের এডভান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে জোয়ার সাহারা মৌজার জগন্নাথপুরে ১১ কাঠা জমিতে তৈরি করা ৯ তলা আবাসিক ভবন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বারিধারা এলাকায় তার স্ত্রীর নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের আবাসিক ভবন। গোপালগঞ্জ জেলা সদরে রয়েছে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমির ওপর এডভান্স নিরালা ও এডভান্স সুগন্ধা নামে আবাসিক প্রকল্প। এ ছাড়া রয়েছে গোপালগঞ্জ সদরে সার্কিট হাউজ রোডে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ি। এসব স্থাবর সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩২ কোটি টাকা।
এ ছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডে বদিউজ্জামানের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডে প্রায় ৩০ কোটি টাকার শেয়ার, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের দুটি শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব, এনআরবি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বদিউজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে অঙ্গন রেস্টুরেন্ট, তানিয়া ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড, তানিয়া ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড ও এশিয়া প্যাসিফিক রিয়ালিটি ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অস্তিত্ব পেয়েছে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক ও উপসহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বদিউজ্জামান ও তার দুই স্ত্রী যথাক্রমে নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিস দেয় দুদক। সংস্থার পরিচালক কাজী শফিকুল আলম কমিশনের অনুমোদনক্রমে এই নোটিসে স্বাক্ষর করেন।
সেই নোটিসের মাধ্যমে তাদের অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও দায়দেনা সংবলিত সম্পদ বিবরণী নোটিস প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তারা তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেও বদিউজ্জামান ও তার দুই স্ত্রী, ছেলের হিসাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সান নিউজ/এসএ