ছবি : সংগৃহিত
লাইফস্টাইল
বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

কীভাবে ছড়ায় যক্ষ্মা, লক্ষণসমূহ?

লাইফ স্টাইল ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে মারাত্মক একটি ব্যাধি যক্ষ্মা। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা না হলো রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সারা বিশ্বে প্রতিদিন চার হাজার মানুষ যক্ষ্মা রোগে মারা যায় ও ৩০ হাজার আক্রান্ত হয়। তবে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ২০০০ সাল থেকে ৫৮ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আরও পড়ুন : জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল থেকে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি

সমাজে প্রচলিত আছে ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই’। যদিও এই কথার এখন ভিত্তি নেই, কারণ এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন বেশ উন্নত। অতীতে যক্ষ্মার জন্য কার্যকর কোনো ওষুধ ছিল না।

তাই যার যক্ষ্মা হতো, তার মৃত্যুও অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। তবে এখন খুব দ্রুত যক্ষ্মা রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে। তাই এই ব্যাধি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং সতর্ক থাকতে হবে ও প্রতিরোধে কী করণীয় তা জানতে হবে।

যক্ষ্মা কী, এই রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানিয়েছেন ডা. হিমেল ঘোষ (এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস (স্বাস্থ্য), মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা)।

আরও পড়ুন : রোজায় ‍সুস্থ থাকতে যা করবেন

যক্ষ্মা কী ও কাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি?

মানবদেহে মাইকোব্যাকটেরিয়াল টিউবারকিউলোসিস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে যক্ষ্মা হয়। দীর্ঘস্থায়ী, সংক্রামক ও প্রাচীন রোগটি যে কোনো বয়সে, যে কারো হতে পারে।

তবে যক্ষ্মা রোগীর কাছাকাছি থাকেন এমন ব্যক্তি, যেমন- পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, নার্স বা সেবাদানকারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

এছাড়া পরিবেশ দূষণ, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, বার্ধক্য, অপুষ্টি ইত্যাদি যক্ষ্মার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম যেমন- এইডস রোগী, দীর্ঘ মেয়াদে স্টেরয়েড বা ইমিউনোথেরাপি ওষুধসেবীদের মধ্যে যক্ষ্মার ঝুঁকি বেশি।

আরও পড়ুন : ভিটামিন সি ঘাটতির লক্ষণ

কীভাবে যক্ষ্মা ছড়ায়?

আমাদের চারপাশের পরিবেশে ও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে যক্ষ্মার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ছড়ায় যক্ষ্মার জীবাণু। এ কারণে সহজে যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবার মধ্যেই আছে।

অনেক সময় জীবাণু শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, তখন এর উপসর্গ বোঝা যায় না। পরবর্তী সময়ে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে সুপ্ত যক্ষ্মা সক্রিয় যক্ষ্মায় রূপ নিতে পারে।

জেনে অবাক হবেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবেই যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বহন করে। তবে শরীরে জীবাণু থাকা মানেই কোনো ব্যক্তি যক্ষ্মা রোগী নন। তবে জীবাণুর ধারক নিজে রোগাক্রান্ত না হলেও তার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মা ছড়াতে পারে।

আরও পড়ুন : লিভার সিরোসিসের ৫টি লক্ষণ

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৯৬ লাখ মানুষ সক্রিয় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। যাদের মধ্যে ১৫ লাখই মারা যান। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন ও এর মধ্যে ৭০ হাজার রোগী মারা যান।

মানবদেহের কোথায় যক্ষ্মা হয় ?

শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসেই হয়ে থাকে। তবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গেও ছড়াতে পারে যক্ষ্মার জীবাণু। ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, বৃক্ক, মস্তিষ্ক ও এর আবরণী, অন্ত্র, হাড় এমনকি ত্বকেও হতে পারে যক্ষ্মা। তবে ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।

ফুসফুস ছাড়া শরীরের অন্য যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হয়, সেই অংশটি ফুলে ওঠে। যেমন- গলায় লসিকাগ্রন্থি আক্রান্ত হলে গলার ওই অংশ ফুলে উঠতে পারে।

আবার মেরুদণ্ড আক্রান্ত হলে মেরুদণ্ডের ওই অংশ ফুলে উঠতে পারে এরকম। এমন ফোলা অংশগুলো খুব শক্ত বা নরম হয় না- অনেকটা সেমি সলিড ধরনের হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন : ঘুম না হওয়ার কারণ

যক্ষ্মার লক্ষণ সমূহ?

১) রাতে ঘুমনোর সময় ঘাম

২) ক্ষুধামন্দা

৩) মাঝে মধ্যে বুকে ব্যথা হওয়া

৪) যক্ষ্মার অন্যতম লক্ষণ হলো কাশি

৫) কাশির সঙ্গে হালকা কিংবা গাঢ় রক্তপাত।

৬) এমনকি যক্ষ্মা রোগীর প্রস্রাবের সঙ্গেও রক্ত বের হতে পারে।

৭) ওজন কমে যাওয়া

৮) সন্ধ্যা বা রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর

৯) মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন

১০) পেটব্যথা

১১) বুকে বা পেটে পানি জমা

১২) খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে পড়া ইত্যাদিও যক্ষ্মার ভিন্ন কিছু উপসর্গ।

আরও পড়ুন : রোজা রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতা

যক্ষ্মার চিকিৎসা?

যক্ষ্মা রোগ চিকিৎসায় সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। দু’ধরনের ক্যাটাগরিতে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটি ক্যাটাগরিতে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। অপর ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ৮-৯ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।

তবে অনেক সময় দুই থেকে তিন মাস ওষুধ খাওয়ার পর আক্রান্ত রোগী একটু ভালো অনুভব করলে, ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। এটি একদমই ঠিক নয়। যক্ষ্মার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদে সেবন করতে হয়।

না হলে আবার যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এরকম ক্ষেত্রে আগের ওষুধ কোনো কাজেও আসে না। তৈরি হয় মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি ও এক্সট্রিম ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি, যার চিকিৎসা খুবই দুঃসাধ্য ও ব্যয়বহুলও বটে।

আরও পড়ুন : স্লিপ ডিসঅর্ডারের লক্ষণ

যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তাই রাস্তা-ঘাটে হাঁচি-কাশি এলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত ও যত্রতত্র কফ-থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ। যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

১৮৮২ সালের এ দিনে ড. রবার্ট কোচ যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার, রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের পথ উন্মোচন করেন। তাকে স্মরণ করেই এই দিনটিতে যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়ে থাকে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘হ্যাঁ আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের বাকেরগ...

সেরা সুন্দরী হলেন ৬০ বছরের আলেজান্দ্রা 

বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি ৬০ বছর বয়স...

সোনার দাম ফের কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে সো...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা