ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

আজন্ম এক সংগ্রামী ভাষা ‘বাংলা’

সান নিউজ ডেস্ক:

ভাষা ও বর্ণমালা একটি জাতির পরিচিতির জন্য সবচে শক্তিশালী মাধ্যম। বাঙালি জাতি সত্তার বিকাশে ভাষার শক্তিশালী অবস্থান ছিল যুগযুগ ধরে। প্রাচীন কাল থেকে বাংলা ভাষাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে পরাক্রমশালী ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে।

বিভিন্ন সময়ে নানা জাতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এ দেশকে। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে আঘাত এসেছে বাংলা ভাষার ওপর। ক্ষতাসীনদের সাথে দুর্দান্ত প্রতাপে লড়াই করে সগৌরবে আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা ভাষা।

ভাষাবিদদের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভব আনুমানিক পঞ্চম শতকের দিকে। উদ্ভবের সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাকে তিনটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করে দেখা হয়। প্রাচীন বাংলা (উদ্ভবের পর থেখে ১৩৫০ সাল), মধ্যবাংলা (১৩৫০-১৮০০) সাল এবং আধুনিক বাংলা (১৮০০-র পরবর্তী)।

আট থেকে এগারো শতকে বাংলায় সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল পাল-রাজবংশের শাসন। বৌদ্ধ পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিলো বাঙালি সংস্কৃতির। বৌদ্ধ ধর্মবাণী সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষায় ধর্মভিত্তিক সাহিত্য রচনার তাগিদ অনুভব করেছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা। তাদের হাতে ধরে পূর্ণতা পায় বাংলা ভাষা। রচিত হয় চর্যাপদ। পাল যুগেই এভাবে রচিত হয়েছিল বাংলা ভাষার চারণ ভূমি। অনেকে এ সময়টাকেই বাংলাভাষা জন্মের প্রকৃত সময় হিসেবে মত দিয়েছেন।

বাংলা ভাষার ওপর আঘাত আসে শিশু বয়সেই বারো শতকে এসে, যখন বাংলা ভাষার শিশুকালটি হাটিহাটি পা-পা করছিলো। পাল যুগের অবসানে এগারো শতকের শেষপর্বেই বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেন বংশের শাসন।

সেন রাজাদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর বাংলা ভাষার ভাগ্যে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। রাষ্ট্রীয় আদেশ বলে জনসাধারণের ভাষা বাংলা চর্চা নিষিদ্ধ করে দেন সেন রাজারা। আধ্যাত্মিক সূচিতা ও কৌলিণ্য রক্ষার অজুহাতে হিন্দু পণ্ডিতরা ফতোয়া জারি করেন- ‘অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতা নিচ ভাষায়াং মানব শ্রুত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ। অর্থাৎ- ‘অষ্টাদশ পুরাণ ও রামায়ন যে মানুষ বাংলা ভাষায় শুনবে, তাঁর ঠাঁয় হবে ভয়াবহ রৌরব নরকে। (১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, দৈনিক ইনকিলাব)

১২০৩ সালে ইফতিখারুদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বাংলা বিজয়ের পর শুরু হয় মুসলিম শাসন। প্রায় ছয়শো বছর মুসলিম শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। তবে মুসলিম শাসকদের রাষ্ট্র ভাষা ছিলো ফার্সি।

হীরা কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরীর আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভেতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরির অপেক্ষা করিয়া থাকে, বাংলা ভাষা তেমনি কোনো শুভদিন শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতে ছিল। মুসলিম বিজয় বাংলা ভাষার সেই শুভদিন শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল। (দ্রষ্টব্য: বাংলা ভাষার ওপর মুসলমানের প্রভাব : শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন)

রাষ্ট্র ভাষা ফার্সি হওয়ায় তখন বহু শব্দ প্রবেশ করে বাংলা ভাষায়, যা আজও আমরা বহন করছি বাংলা ভাষা হিসেবে। সে সময়েও শাসকরা অবহেলা করেছে বাংলাকে।

বৃটিশ আমলেও এসেছে বাংলার ওপর আঘাত। বাংলাকে ইংরেজি রোমান হরফে লেখার চিন্তা করেছিলেন অনেকে। তবে সে সময় অনেকে এর বিরোধিতা করেছিলো।

সে সময় সর্ব ভারতীয় সাংস্কৃতিক পরিমলে হিন্দুদের হিন্দিপ্রীতির বিপরীতে মুসলমানদের মধ্যে উর্দুর প্রতি একটা দুর্বলতা ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে মহাত্মা গান্ধী একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে এক পত্রে জানতে চেয়েছিলেন- ভারত স্বরাজ (স্বায়ত্তশাসন) লাভ করলে সাধারণ ভাষা কী হবে? এর জবাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, একমাত্র হিন্দিই ভারতের আন্তঃপ্রাদেশিক যোগাযোগের ভাষা হতে পারে। তবে বিখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু এ তিন ভাষারই ভারতের সাধারণ ভাষা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। (দ্রষ্টব্য : মোসলেম ভারত, কলিকাতা, বৈশাখ ১৩২৭ বাংলা সন)

সে সময় ভাষার দিক দিয়ে বাংলার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। শুধু তাই নয়, বাংলাকে তিনি সমগ্র এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষা হওয়ার বিষয়ে যুক্তি দিয়ে দাবি উস্থাপন করেন।

বাংলাভাষা টিকে থাকার সংগ্রাম সেখানেই শেষ নয়। পাকিস্তান আমলে শুরু হয় ভাষার জন্য রক্ত ঝরা এক নতুন অধ্যায়। যা ইতিহাসে অদ্বিতীয়।

জন্মের পর থেকে ইতিহাসের নানা বন্ধুর পথ পেরিয়ে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রক্তে ভেজা সেই সোনার বাংলাভাষা টিকে থাকবে জন্ম জন্মান্তর, যদিও সেই বাংলাভাষার রক্ষক হয়ে আমরাই তার প্রতি অনেক উদাসীন।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ পালন

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটের...

খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ পালন

খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তা...

দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত রূপান্তরের ছায়া?

ঢাকার হৃদয়ে অবস্থিত কড়াইল বস্তিতে আবারও আগুন। মঙ্গ...

নোয়াখালীতে ৫টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার–৪

নোয়াখালীর কবিরহাটে পৃথক অভিযানে বিএনপি নেতার দুই ভাইসহ আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চ...

ভোটের আগে দেশের ৬৪ জেলার এসপি বদলি; থানাগুলোর ওসিও নির্ধারিত হবে লটারিতে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ৬৪ট...

হংকংয়ে আবাসিক কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুন: মৃত বেড়ে ৫৫, গ্রেফতার ৩

হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলের ওয়াং ফুক কোর্ট নামের একটি বহুতল আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার...

প্রাণিসম্পদ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রাণিসম্পদ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেল...

ফ্যাসিস্ট প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ পেলেন ১৮ বছরের কারাদণ্ড

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর...

ইসি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক, সিসি ক্যামেরা ও মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত

নির্বাচনের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত...

চীনে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১ রেলকর্মী নিহত, নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন

চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল কুনমিংয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) এক ভয়াবহ রেল দুর্ঘট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা